এ বার নেটের বাঁধনে জীবন জুড়তে চান মুকেশ

সস্তায় ফোন ও নেট পরিষেবা এনে টেলিকম শিল্পে ঝড় বইয়ে দেওয়া রিলায়্যান্স জিও এ বার নিজের ছাতার তলায় আনতে চায় বাড়ি-গাড়ির দেখাশোনা বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতো বিষয়কেও।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৩৪
Share:

সস্তায় ফোন ও নেট পরিষেবা এনে টেলিকম শিল্পে ঝড় বইয়ে দেওয়া রিলায়্যান্স জিও এ বার নিজের ছাতার তলায় আনতে চায় বাড়ি-গাড়ির দেখাশোনা বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতো বিষয়কেও। যেখানে এই সব পরিষেবা জুড়ে থাকবে তাদের নেট সংযোগের মাধ্যমে। লক্ষ্য, শুধু ফোন বা নেটে তথ্য ঘাঁটা নয়, মানুষের আধুনিক জীবনযাত্রার আরও চওড়া বৃত্তে ঢুকে পড়া।

Advertisement

মাস খানেক আগে জিও-র ফোরজি পরিষেবা চালুর মঞ্চ থেকে কর্ণধার মুকেশ অম্বানী জানিয়েছিলেন সারা দেশে তাঁর সংস্থার ‘ডেটাগিরি’ কায়েম করার কথা। যে চ্যালেঞ্জের অভিঘাত এড়াতে পারেনি অন্য সংস্থাগুলি। তারা বাধ্য হয় মাসুল হার কমাতে। এ বার আরও এক কদম এগিয়ে জিও চাইছে দ্রুত গতির নেট পরিষেবাকে জীবনের অন্যান্য দিকের সঙ্গে জু়ড়ে দিতে। যাকে মুকেশ বলছেন ‘ডিজিটাল জীবনযাপন’। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের বার্ষিক সভায় জিও-র কথা ঘোষণার সময়েই যার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মুকেশ। বলেছিলেন, এই জীবনের অক্সিজেনই হল নেট (ডেটা) পরিষেবা।

সেই ডিজিটাল জীবনের কিছুটা আভাস দিচ্ছে ‘জিও এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার’। নবি মুম্বইয়ের রিলায়্যান্স কর্পোরেট পার্কে মুকেশের দফতরের অদূরেই এই কেন্দ্র। সেখানে তাদের বিভিন্ন পরিষেবা ও পরিকল্পনা তুলে ধরছে সংস্থা। আপাতত টেলি পরিষেবা চালু হলেও কাজ চলছে বাকিগুলি নিয়ে।

Advertisement

যেমন, গাড়ির অবস্থান, গতিবিধি, ব্যাটারি বা জ্বালানি পরিস্থিতি, আলো ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য জানতে ২০১৩ সালের পর তৈরি হওয়া গাড়িতে ‘অন বোর্ড ডায়াগনস্টিক পোর্ট’ (ওবিডি-পোর্ট) থাকে। বিভিন্ন সফটওয়্যার সংস্থা গ্রাহককে সেই তথ্য দেওয়ার কাজ করে। কিন্তু সেই সব তথ্য পেতে কোনও টেলি সংস্থার সিম ভরতে হয় ওবিডি-পোর্টে। অর্থাৎ ওই সফটওয়্যার ও টেলিকম সংস্থা, দু’জনের গ্রাহক হতে হয়। জিও এই পুরো পরিষেবাই দিতে চায়। সংস্থার মুখপাত্র জানান, ওই পোর্টে জিও-সিম ভরার পরে মোবাইলে ‘জিও কার কানেক্ট’ অ্যাপ ডাউনলোড করলে সংশ্লিষ্ট সব তথ্য পাবেন গ্রাহক। তা ছাড়া, জিওর সিম ভরা ওবিডি-পোর্টটি ওয়াই-ফাই যন্ত্র হিসেবেও কাজ করবে। যা ব্যবহার করতে পারবে আরও ১০টি মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ।

আবার বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট সরাসরি মোবাইলেই ভরে রাখা, চিকিৎসকদের সঙ্গে সেই তথ্য আদানপ্রদান-সহ অ্যাপ মারফত চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিষেবা দেওয়ারও পরিকল্পনা করছে জিও। এখন বহু সংস্থাই বিক্ষিপ্ত ভাবে এই পরিষেবা দেয়। তবে সার্বিক ভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো পরিষেবা দিতে বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে জোট বাঁধার কথা ভাবছেন মুকেশ।

অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌ল-ও (ওএফসি) আছে জিও-র হাতে। তা বসানোর কাজ প্রায় শেষ। ওই ওএফসি গ্রাহকের দরজায় পৌঁছে দিয়ে আবার ব্রডব্যান্ড পরিষেবায় চমক আনতে চায় তারা। সংস্থার দাবি, এর মাধ্যমে নেট পরিষেবার গতি হবে সেকেন্ডে এক গিগাবাইট। বাড়িতে যে ‘রাউটার’টি ওএফসি-র মাধ্যমে যুক্ত হবে, সেটি ঘরের চার দেওয়ালকে ‘স্মার্ট হোম’-এ বদলে দেবে। যাকে বলা হয় ‘ইন্টারনেট অব থিঙ্গস’ পরিষেবা। নেট-কে কাজে লাগিয়ে যেখানে ঘরের বাইরে থেকে শুধু ফোন ধরা বা টিভি দেখাই নয়, এসি বা ফ্রিজ নিয়ন্ত্রণেরও সুযোগ পাবেন গ্রাহক। ঘরের আলো-পাখা নেভানো বা জ্বালানো-সহ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে আরও অনেক কিছুই।

অতএব আগামী দিনে মুকেশ নতুন এই ঝড় তুললে আবার কতটা ঝাঁকুনি খাবে বাজার, সেটাই দেখার অপেক্ষায় শুরু হল দিন গোনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন