খুদের হাতে গোল্ড বন্ড। প্রকল্প সূচনায় মোদী। ছবি: পিটিআই।
ঘোষণা আগেই ছিল। সেই অনুযায়ী দীপাবলি ও ধনতেরাসের ঠিক মুখে সোনা জমা ও কেনার তিন প্রকল্প বৃহস্পতিবার চালু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেউ কেউ মনে করছেন, ভারতীয় অর্থনীতির মাইলফলক হতে পারে এই তিন প্রকল্প। মোদীর দাবি, ‘সোনায় সোহাগা’। কিন্তু অনেকে আবার সংশয়ী তাদের সাফল্য নিয়ে। এক নজরে সেই তিন:—
সোনা জমা প্রকল্প
নাম: গোল্ড মনিটাইজেশন স্কিম
সারকথা: বাড়িতে বা প্রতিষ্ঠানে (যেমন, মন্দির) ‘অলস ভাবে’ পড়ে থাকা সোনা রাখা যাবে ব্যাঙ্কে। তার বদলে পাওয়া যাবে সুদ। সোনার দর বাড়লে, মেয়াদ শেষে মিলবে তার সুবিধাও।
কী ভাবে জমা?: গয়না, বার যা-ই থাকুক, ব্যাঙ্ক জমা নেবে শুধু খাঁটি সোনাটুকু। তাই প্রথমে কেন্দ্রের লাইসেন্স প্রাপ্ত হলমার্ক কেন্দ্রে সোনা গলাতে হবে। বাদ যাবে খাদ।
সোনা খাঁটি করাতে হবে ভারতীয় মানক বুরোর মাপকাঠি মেনে। খাঁটি কি না, সেই শংসাপত্র দেবে হলমার্ক কেন্দ্রগুলি। ব্যাঙ্কের কাছে সোনা জমার সার্টিফিকেটও পাওয়া যাবে তার ভিত্তিতে। খাঁটি সোনার দামের ভিত্তিতেই ঠিক হবে, কত টাকার সোনা জমা করছেন গ্রাহক।
কতটা জমা?: অন্তত ৩০ গ্রাম ।
মেয়াদ কত?: তিন রকম। ১-৩ বছর, ৫-৭ বছর, ১২-১৫ বছর
সুদ ও সুবিধা: মেয়াদ শেষে ২.৫০% পর্যন্ত সুদ মিলবে। ভাঙানোর সময়ে সোনার দাম যেমন থাকবে, সেই অনুসারে সোনা বা টাকা পাবেন গ্রাহক।
তবে মেয়াদ পূর্তির পরে সোনা বা টাকার মধ্যে কোনটি হাতে চান, তা প্রকল্পের শুরুতে সোনা জমা দেওয়ার সময়েই জানাতে হবে গ্রাহককে।
করছাড়: মূলধনী লাভ কর, সম্পদ কর এবং আয়করে ছাড় মিলবে।
অর্থনীতির লাভ: জমা পড়া সোনা নিলাম করতে পারবে ব্যাঙ্ক। ধার দিতে পারবে সোনা ব্যবসায়ীদের। কেন্দ্রের দাবি, এর ফলে ব্যাঙ্কের হাতে নগদ বাড়ার পাশাপাশি সোনা আমদানি কমবে। রাশ টানা সহজ হবে রাজস্ব ও চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ঘাটতিতে।
বাড়ি আর বিভিন্ন মন্দিরে অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে অন্তত ২০ হাজার টন সোনা। এর একটা বড় অংশ অর্থনীতির মূল স্রোতে আসবে বলে কেন্দ্রের আশা।
সংশয় কোথায়?: পারিবারিক গয়না গলাতে রাজি হবেন ক’জন? ভাণ্ডারের দরজা কি খুলবে মন্দিরগুলি?
গয়না থেকে খাঁটি সোনা করতে গেলে বাদ যাবে ২০-২৫%। সেই ‘ক্ষতি’ মানতে তৈরি ক’জন?
৫০ হাজার টাকার বেশি সোনা জমা করতে প্যান কার্ড, কেওয়াইসি চাইবে ব্যাঙ্ক। অনেকের আশঙ্কা, পরে আয়কর দফতরের হয়রানির শিকার হতে হবে না তো? উৎস বলতে রাজি নন অনেকে।
এত দিন চালু থাকা সোনা জমা প্রকল্পের (যা বন্ধ করে দেওয়া হবে) সুদের (১%) তুলনায় এ বার তা বেশি। কিন্তু সেই হারও যথেষ্ট তো?
স্বর্ণ ঋণপত্র
নাম: গোল্ড বন্ড
সারকথা: সরাসরি না-কিনে, এ ক্ষেত্রে ঘরে আনা যাবে কাগুজে সোনা। বন্ড বা ঋণপত্র কিনে।
কেউ হয়তো ১০ গ্রাম সোনা কিনতে চান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা না-করে ১০ গ্রাম সোনার দাম গুনে বন্ড কিনতে পারবেন তিনি। তবে এই প্রকল্প শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিক এবং সংস্থার জন্য।
কী ভাবে কেনা?: বন্ড বিক্রি হবে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে।
কিনতে হবে অন্তত ২ গ্রাম সোনা। তবে সর্বোচ্চ সীমা ৫০০ গ্রাম।
মেয়াদ কত?: আট বছর। তবে ৫ বছর পর থেকেই তা ভাঙানো যাবে।
সুদ ও সুবিধা: সুদ বছরে ২.৭৫%।
এই ঋণপত্র এক্সচেঞ্জে লেনদেন হবে। রাখা যাবে ডিম্যাটে। ফলে ভাঙানোর সময়ে ঋণপত্রের দাম বাড়লে, সেই লাভ গ্রাহকের।
বন্ড কেনা ও বেচা— দু’ক্ষেত্রেই আগের সপ্তাহের সোম থেকে শুক্র, এই পাঁচ দিনের গড় সোনার দরের ভিত্তিতে বন্ডের দাম ঠিক হবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহ্য হবে ইন্ডিয়ান বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষিত দাম।
সোনা কিনে বাড়িতে রাখার ঝুঁকি বা লকারে রাখার খরচ এখানে নেই।
করছাড়?: গোল্ড বন্ডে পাওয়া সুদ করযোগ্য। বন্ড বেচার সময়ে সোনার দাম বাড়লে, দিতে হবে মূলধনী লাভ করও।
অর্থনীতির লাভ: কেন্দ্রের দাবি, এতে ধাতু-সোনার চাহিদা কমবে। ফলে রাশ টানা যাবে তার রফতানিতেও। শক্তিশালী হবে দেশের অর্থনীতি।
সংশয় কোথায়?: অনেকের প্রশ্ন, এই ২.৭৫% সুদ আকর্ষণীয় হবে কতটা? যেখানে ব্যাঙ্কের মেয়াদি জমায় সুদ ৮%।
সোনার মুদ্রা
নাম: গোল্ড কয়েন
সারকথা: ভারতের প্রথম সোনার কয়েন।
এক পিঠে অশোক চক্র। অন্য দিকে মহাত্মা গাঁধীর ছবি।
প্রথমে মিলবে ৫ ও ১০ গ্রামের মুদ্রা, এমএমটিসি-র মাধ্যমে।