স্বাগত: জুরিখ বিমানবন্দরে মোদী। দাভোসের দৌড় শুরু। ছবি: পিটিআই
কয়েক ফুট পুরু বরফে ঢেকে রয়েছে দাভোস। আর সুইৎজারল্যান্ডের এই শহরের বহু বিলবোর্ড কিংবা বাসের গায়ে আবার লেপ্টে রয়েছে ভারতের সগর্ব উপস্থিতি। সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বার্তা— ‘তিনি আসছেন।’ সেই নরেন্দ্র মোদী বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে (ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম বা ডব্লিউইএফ) যোগ দিতে আসার আগেই তাঁর কাছে আর্জি স্পষ্ট করে দিল এখানে উপস্থিত ভারতীয় শিল্পমহল। তাদের বক্তব্য, শুধু বড় ও সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে নয়, এ বার বরং বিশ্বের প্রথম সারির আর্থিক শক্তি হিসেবে ভারতকে তুলে ধরুন মোদী। ফুটে উঠুক নতুন ভারতের ছবি। নতুন করে অর্থনীতিতে আগল উঠতে শুরু করা বিশ্বেও যেখানে বিদেশি লগ্নি সর্বতো ভাবে স্বাগত।
দীর্ঘ দু’দশক পরে প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাভোসে এসেছেন মোদী। চব্বিশ ঘণ্টার ঠাসা সফরে তিনি কী কী করবেন, তা আগেই জানিয়েছে দিল্লি। আর এখন আশায় বুক বাঁধছেন দেশীয় শিল্পপতিরা। কোটক-মহীন্দ্রা ব্যাঙ্কের কর্ণধার উদয় কোটক যেমন বলছেন, ‘‘বিশ্ব দরবারে ভারত শুধু সেলসম্যান নয়। সময় এসেছে নিজেদের স্টেটসম্যান হিসেবে তুলে ধরার।’’
তাঁর মতে, উদার অর্থনীতির রাস্তা থেকে কিছুটা সরে গিয়ে এখন লগ্নি বা বাণিজ্যে আগল তোলার পথে হাঁটছে বহু দেশ। যার মধ্যে রয়েছে এমনকী ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকাও। এই অবস্থায় ডব্লিউইএফের মঞ্চে ভারত নিজেকে তুলে ধরুক এমন দেশ হিসেবে, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ স্বাগত। অর্থনীতি উদার। শিল্পে সারা বিশ্বের জন্য দরজা খোলা যেখানে। এই নতুন ভারতের কথা তুলে ধরার পক্ষে সওয়াল করেছেন আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের ছন্দা কোছর থেকে শুরু করে স্পাইসজেটের অজয় সিংহরা।
অনেকে অবশ্য বলছেন, শিল্পমহলের এই আর্জির গভীরতা অন্যখানে। ভারত যে বড় বাজার বা বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রশ্ন নেই সম্ভাব্য লগ্নিকারীদের সামনে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে ভারতকে তুলে ধরায় মোদীর মুন্সিয়ানা নিয়েও। কিন্তু তাঁদের মতে, শিল্পমহল সম্ভবত চায়, তার থেকেও এক কদম এগিয়ে এই মঞ্চে ভারতকে বরং বিশ্বের অন্যতম আর্থিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরুন মোদী। গল্প বলুন নতুন ভারতের।
আরও পড়ুন: ফের ভাবনায় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন
বিশ্লেষকদের মতে, এ বছর প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি এসেছে রেকর্ড অঙ্কের। কিন্তু তার মধ্যে সত্যিকারের নতুন লগ্নি (নতুন কারখানা গড়া, ব্যবসা শুরু ইত্যাদিতে) কিন্তু তেমন নয়। বেশিরভাগই এসেছে কোনও দেশীয় সংস্থায় অংশীদারি কেনা, রুগ্ণ সংস্থায় বিনিয়োগ ইত্যাদিতে। তাঁরা মনে করেন, সেই নতুন বিদেশি লগ্নি আসার প্রথম শর্ত এক উদার অর্থনীতির ছবি তুলে ধরা। যেখানে বৃদ্ধি সাময়িক ভাবে ধাক্কা খেয়েছে, কিন্তু তা ঘুরে দাঁড়ানো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। যেখানে লগ্নি সুরক্ষিত, লাল ফিতের ফাঁস শিথিল, প্রশ্ন নেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়েও। তবে সহিষ্ণুতার শর্তও এর মধ্যে পড়ছে কি? সে প্রসঙ্গে শিল্পমহল কিছু বলেনি।