তিনি চাওয়ালা, কিন্তু আঘাত তাঁর আমলেই

এখন শিল্পমহলের বড় অংশের অভিযোগ, ওই আশায় জল ঢেলে বড় আঘাত এসেছে সেই নরেন্দ্র মোদীর জমানাতেই। প্রথমে নোটবন্দি। তার পরে তড়িঘড়ি জিএসটি চালু। এই জোড়া ধাক্কায় এখনও ছোট-মাঝারি শিল্প বেসামাল।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪০
Share:

গর্ব করে পরিচয় দেন তিনি চাওয়ালা। ছোট ব্যবসা আর ছোট-মাঝারি শিল্পের তাই ভরসা ছিল, তাদের সুবিধা-অসুবিধা তিনি নিশ্চয় বুঝবেন। কিন্তু এখন শিল্পমহলের বড় অংশের অভিযোগ, ওই আশায় জল ঢেলে বড় আঘাত এসেছে সেই নরেন্দ্র মোদীর জমানাতেই। প্রথমে নোটবন্দি। তার পরে তড়িঘড়ি জিএসটি চালু। এই জোড়া ধাক্কায় এখনও ছোট-মাঝারি শিল্প বেসামাল। বাজেটে সেই ক্ষতে মলম চায় তারা। একই সঙ্গে তাদের প্রশ্ন, মোদী তো রোজ কর্মসংস্থানের কথা বলেন। যা বেশি হয় ছোট শিল্পেই। তা হলে সরকারি সুবিধা তারা বাজেটে আশা করবে না কেন?

Advertisement

বড় শিল্পের মতো চোখ ধাঁধানো লগ্নি না হলেও বেশির ভাগ কর্মসংস্থানের সূত্র ছোট-মাঝারি শিল্প। আর্থিক সমীক্ষাও মেনেছে, ছোট সংস্থায় বেশি চাকরির সুযোগের কথা। এই পরিস্থিতিতে ছোট ও মাঝারি শিল্পের দাবি, নোট বাতিলের পরে নগদের টান কেড়েছে অনেকের ব্যবসা। কাজ হারিয়েছেন বহু কর্মী। মাস ছয়েক যেতে না যেতেই আবার জিএসটির শর্ত পূরণের নাভিশ্বাস। এই অবস্থায় সুবিধা তাদের প্রাপ্য।

সরাসরি বাজারের পাশাপাশি বড় সংস্থায় পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহ করে বহু ছোট-মাঝারি সংস্থা। রাজ্যে এই শিল্পের অন্যতম সংগঠন ফসমির প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের দাবি, উৎপাদনমুখী শিল্প থমকে থাকায় ব্যবসা সঙ্কটে অনেক ছোট সংস্থারই।

Advertisement

আরও পড়ুন: জরুরি, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে কোপ তবু প্রতি বারই

আর এক সংগঠন ফিসমের সেক্রেটারি জেনারেল অনিল ভরদ্বাজের দাবি, বেসরকারি সংস্থা তো পরের কথা, সরকারি খালি পদেও পুনর্নিয়োগ হচ্ছে না। ফলে কর্মসংস্থান কেন্দ্রের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এই অবস্থায় বাজেটে আর্থিক উৎসাহ পেলে ছোট শিল্পই একমাত্র ভরসা জোগাতে পারে বলে তাঁদের দাবি। তাঁর যুক্তি, মূলধনী খাতে লগ্নির উপর বড় শিল্পকে সুবিধা দেয় কেন্দ্র। ফলে কর ছাড়ের বাড়তি সুবিধা পায় তারা। কিন্তু অধিকাংশ ছোট শিল্পে লগ্নির অঙ্ক খুব কম। তা ছাড়া, তারা সেই সুবিধাও পায় না। তাই প্রতিটি নতুন চাকরির জন্য ছোট শিল্পকেও কর ছাড় দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা।

বাজেটে চাওয়া

• কাজের সুযোগ তৈরির জন্য মূলধনী খাতে কর ছাড়ের সুবিধা

• সংস্থার আয় অনুযায়ী ঠিক হোক কোম্পানি করের বিভিন্ন হার

• প্রশস্ত হোক ব্যাঙ্কের কাছ
থেকে সহজে ও সস্তায় ঋণ পাওয়ার রাস্তা

• বরাতের টাকা মেটানোর জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হোক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে

• পাওনা টাকা পেতে দেরি হলে, ব্যাঙ্কে ধার মেটাতে বাড়তি সময়

• সহজ, সরল এবং শিথিল হোক জিএসটির নিয়ম

সেই সঙ্গে ফিসমের দাবি, ছোট সংস্থার পক্ষে কোম্পানি করের হার এখনও বেশ চড়া। বরং ব্যক্তিগত আয়করের মতো সংস্থার আয়ের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন হার চালু হোক।

পুঁজির জোগান ছোট শিল্পের কাছে এখনও বড় সমস্যা। এই শিল্পের আর এক সংগঠন ফ্যাকসির প্রেসিডেন্ট হিতাংশু গুহর দাবি, বারবার কেন্দ্র বা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আশ্বাস দিলেও, ব্যাঙ্কগুলি থেকে সহজে ঋণ মিলছে না। গত বছরের বাজেটে কেন্দ্র বন্ধক ছাড়া ঋণের তহবিলের পরিমাণ বাড়ালেও, সেই ধার কার্যত অমিল। তাঁদের প্রশ্ন, শুধু খাতায়-কলমে টাকার জোগান বাড়িয়ে কী হবে যদি না তা সহজলভ্য হয়? আর্থিক সমীক্ষাতেও বলা হয়েছে, মোট ঋণের মাত্র ১৭.৪% পেয়েছে এমন সংস্থা। ক্ষুদ্র-ছোট সংস্থার ঋণ ৪.৬% বাড়লেও মাঝারিদের ঋণ কমেছে ৮.৩%।

নোট বাতিল। জিএসটিতে ব্যবসার খরচ বৃদ্ধি। পুঁজির জন্য হাপিত্যেশ। এই ত্র্যহস্পর্শ সরিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে এখন বাজেটেই চোখ
ছোট শিল্পের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন