বাজারকে চাঙ্গা করার রসদ জেটলির বাজেটে

পাঁচ দিন হল বাজেট পেশ হয়েছে। বিশ্লেষণ প্রায় সমাপ্ত। আশাহত সাধারণ মানুষ। নোট বাতিলের ক্ষত উপশমে সরকারের কাছ থেকে এঁরা আশা করেছিলেন একতাল সুবিধা। এই আশার অনেকটাই মেটেনি। তিল না-হলেও তালের জায়গায় পেয়েছেন বড়জোর একটি সুপুরি।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৬
Share:

পাঁচ দিন হল বাজেট পেশ হয়েছে। বিশ্লেষণ প্রায় সমাপ্ত। আশাহত সাধারণ মানুষ। নোট বাতিলের ক্ষত উপশমে সরকারের কাছ থেকে এঁরা আশা করেছিলেন একতাল সুবিধা। এই আশার অনেকটাই মেটেনি। তিল না-হলেও তালের জায়গায় পেয়েছেন বড়জোর একটি সুপুরি।

Advertisement

তবে আশাহত হলেও এঁদের অনেকেই কিন্তু বাজেটকে খারাপ বলছেন না। শেয়ার বাজার তো এই বাজেটেই গদগদ। বাজেট ঘোষণার দিন সেনসেক্স এক লাফে বেড়েছে ৪৮৬ পয়েন্ট। বেড়েছে পরের দু’দিনও। লগ্নিকারীদের মনে হয়েছে, এর থেকে একটু বড় মেয়াদে অনেক কিছু পাওয়ার আছে। এঁদের আশা, নোট বাতিলের কারণে অর্থনীতিতে যে-ঝটকা লেগেছে, তার অনেকটাই কেটে যাবে বাজেটে বলা নানা প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক গঠনমূলক প্রস্তাবগুলি:

• কৃষি এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে ঢালাও বরাদ্দ। এতে গ্রামের মানুষের হাতে টাকা আসবে। বাড়বে চাহিদা।

Advertisement

• পরিকাঠামো শিল্পে বড় বরাদ্দ। কম দামের আবাসন প্রকল্পকে পরিকাঠামো শিল্পের মর্যাদা দেওয়া। এতে বাড়ির চাহিদা তৈরি হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান।

• দৈনিক ১৩৩ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির অঙ্গীকার। এতেও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান।

• কর্মসংস্থানে বরাদ্দ ৪৮,০০০ কোটি টাকা। আশা, নোট বাতিলে যাঁরা কাজ হারিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই নতুন অর্থবর্ষে তা ফিরে পাবেন।

• মূলধনী খাতে ২৫.৪% ব্যয় বৃদ্ধি।

• পরিবহণে বরাদ্দ ২.৪১ লক্ষ কোটি ও রেলে ৫৫,০০০ কোটি টাকা।

• পাঁচ বছরে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার অঙ্গীকার।

• রাজকোষ ঘাটতি ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে ৩.২ শতাংশে বেঁধে রাখা।

• করছাড় নামমাত্র হলেও তার সুবিধা পৌঁছবে বিরাট সংখ্যক নিচু আয়ের করদাতা এবং ছোট-মাঝারি মাপের কোম্পানির ঘরে।

সব মিলিয়ে দেখা যাবে, এই বাজেটে তেমন কোনও চমক না-থাকলেও অর্থনীতিকে আবার বৃদ্ধির পথে চালনা করার মতো আছে বেশ কিছু রসদ। লগ্নির বাজারের জন্য প্রত্যক্ষ সুবিধা না-থাকলেও বাজেটের নানা প্রস্তাবে পরোক্ষ ভাবে বাজার উৎসাহ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকটি আশঙ্কা বাস্তবায়িত না-হওয়ায় বাজার সেটিকেও সদর্থক হিসেবে দেখছে। এগুলি হল:

১) পরিষেবা কর বৃদ্ধি না-করা। আশঙ্কা ছিল, পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি চালু হলে এক দফায় পরিষেবা কর না-বাড়িয়ে কিছুটা বাজেট প্রস্তাবের মাধ্যমে আগাম বাড়িয়ে নেওয়া হবে। তা কিন্তু হয়নি।

২) মোদীর ইঙ্গিত অনুযায়ী আশঙ্কা ছিল, ডিভিডেন্ডের উপর সর্বস্তরে কর চাপতে পারে। তা হয়নি।

৩) আশঙ্কা ছিল, ইক্যুইটি শেয়ার লেনদেনের উপর মূলধনী লাভকর চাপতে পারে অথবা শেয়ার ধরে রাখার মেয়াদ (কর বাঁচানোর জন্য) এখনকার ১ বছর থেকে বাড়ানো হতে পারে। এই ব্যাপারটিও জেটলি রাখেননি বাজেটে।

এই সব আশঙ্কার কারণে বাজার আগেই খানিকটা গুটিয়ে গিয়েছিল। আশঙ্কাগুলি বাস্তবায়িত না-হওয়ায় খুশির আমেজের ছোঁয়া লাগে গোটা বাজারে। যে-সব প্রস্তাব বাজার সদর্থক হিসেবে দেখছে সেগুলি হল:

• ছোট এবং মাঝারি মাপের সংস্থার (আয় ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত) কর ৩০% থেকে কমিয়ে ২৫% করা। এর ফলে উপকৃত হবে মোট নথিবদ্ধ কোম্পানির ৯৬%। আশা, পরের বছরের বাজেটে বড় সংস্থাগুলিরও করের দায় কমবে।

• বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির জন্য বরাদ্দ খুব বেশি না-হলেও (১০,০০০ কোটি টাকা) তারা অনুৎপাদক সম্পদের উপর আগের ৭.৫ শতাংশের জায়গায় এ বার করছাড় পাবে ৮.৫ শতাংশ হারে। এর ফলে বাজেটের পরে তেতে ওঠে ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলি।

• বর্তমান অর্থবর্ষে ৪৫,৫০০ কোটি টাকার জায়গায় আগামী বছরে ৭২,৫০০ কোটি টাকায় বিলগ্নিকরণের মাত্রা ধার্য করা। বিলগ্নিকরণের পরে বাজারে নথিবদ্ধ করা হতে পারে আইআরসিটিসি, আইআরএফসি, ইরকন ইত্যাদির মতো ভারতীয় রেলের সহযোগী সংস্থাকে।

• বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলিকে কর বাবদ কিছু সুবিধা দেওয়া। বিদেশি লগ্নি উন্নয়ন পর্ষদ বা এফআইপিবি গুটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব। এতে বিদেশি লগ্নির পথ আরও সুগম হবে।

• সরকারি ঋণ একটি সীমার মধ্যে বেঁধে রাখা।

• রাজকোষ ঘাটতি ৩.২ শতাংশে বেঁধে রাখা।

• মূলধনী খাতে মোটা বরাদ্দ।

• পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়ায় প্রাণ ফেরার আশা সিমেন্ট ইস্পাত-সহ বেশ কিছু শিল্পে। নির্মাণ শিল্পও চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা।

সব মিলিয়ে বাজার প্রতিকূলের তুলনায় অনুকূল শর্তই বেশি দেখতে পেয়েছে অরুণ জেটলির বাজেটে। এই কারণে বাজেটের দিন প্রায় ৫০০ পয়েন্ট ওঠার পরেও সেনসেক্স পরের দু’দিন নামেনি। তবে বড় মেয়াদে শক্তি ধরে রাখতে ভাল বাজেটের পাশাপাশি চাই ভাল বর্ষা।

দেশের পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনেরও প্রভাব থাকবে সূচকের উপর। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে না।

দেশের ভিতরে পরিস্থিতি সদর্থক থাকলেও বাজারের বড় আশঙ্কা ব্রেক্সিট এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নানা সিদ্ধান্ত থেকে। বিশ্ব বাণিজ্যে এগুলির ভাল রকম প্রভাব পড়তে পারে। বড় ধাক্কা আসতে পারে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উপর।

এই সব ঘটনা অন্তর্বর্তী কালে শেয়ার সূচককে কিছুটা টেনে নামাতে পারে। তবে বড় মেয়াদে বাজার শক্তিশালী থাকবে এটাই সকলের আশা। এই প্রত্যাশায় ভর করেই বড় সাফল্য পেয়েছে মুম্বই শেয়ার বাজার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ইটিএফ ইস্যু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন