গত সপ্তাহে কিছুটা সংশোধনের মুখে পড়েছিল দুই শেয়ার সূচক। তবে টানা তিন দিন নামার পরেও সেনসেক্স থেকে গিয়েছে ৩১ হাজারের উপরেই (৩১,১৩৮ অঙ্কে)। নিফ্টি অবশ্য ৯,৬০০ অঙ্কের উচ্চতা ছেড়ে সপ্তাহ শেষে নেমেছে ৯,৫৭৫ অঙ্কে। উঁচু বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ ও জুলাই থেকে চালু হতে চলা পণ্য-পরিষেবা কর নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা— মূলত এই দুই কারণই সূচক দু’টিকে টেনে নামিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই মুহূর্তে কিছু ঘটনা এক দিকে যেমন বাজারকে আশ্বস্ত করছে। কিছু আবার তৈরি করছে আশঙ্কার বাতাবরণ। দুইয়ের মাঝে দোলাচলে থাকা বাজার আগামী দিনে কোন পথে এগোবে, তা নির্ভর করবে সার্বিক ঘটনা পরম্পরার উপরেই।
যে কারণগুলি বাজারকে আশ্বস্ত করছে, তা হল—
এক, বর্ষার আগমন। ভারতের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আশ্বস্ত বোধ করছেন লগ্নিকারীরা। বর্ষা আসার পরে প্রথম পর্বে, দু’দিন আগে পর্যন্ত দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় ৪% বেশি। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে। এ সপ্তাহে তার পৌঁছনোর কথা মধ্য ও উত্তর ভারতেও। এ বারের বর্ষা নিয়ে আশার আলো দেখছে কৃষি ও শিল্পমহল। সার্বিক অর্থনীতিতে এর ভাল প্রভাব পড়ার কথা। ফলে এই বৃষ্টিপাত হাসি ফোটাচ্ছে শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের মুখেও।
দুই, ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ কমার সম্ভাবনা। বাজারের আশা, দেউলিয়া আইনের হাত ধরে ব্যাঙ্কগুলি তাদের পাহাড়প্রমাণ অনাদায়ী ঋণের একাংশ আদায় করতে পারবে। এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। আশা, দেড়-দু’বছরে বিপুল অনুৎপাদক সম্পদের চাপ থেকে বের হয়ে আসতে পারবে ব্যাঙ্কগুলি। যে কারণে লগ্নি বাড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শেয়ারে। মে মাসের শেষে ব্যাঙ্ক শেয়ারে ইক্যুইটি ফান্ডগুলির লগ্নি পৌঁছেছে ১,৪৩,৭০০ কোটি টাকায়, এক বছর আগে ছিল ৯০,০১৪ কোটি।
এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কার মেঘ যেটুকু রয়েছে, তা তথ্যপ্রযুক্তি এবং ওষুধ সংস্থাগুলির শেয়ার ঘিরে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকমের পূর্বাভাস, এ বার এই ক্ষেত্রে রফতানি বৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৭ থেকে ৮ শতাংশে। যদিও ইনফোসিসের পূর্বাভাস, তাদের আয় বৃদ্ধির হার থাকবে ৬.৫ থেকে ৮.৫ শতাংশের মধ্যে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার আউটসোর্সিং নিয়ে ট্রাম্পের কড়া নীতি, ছাঁটাই নিয়ে আশঙ্কা ইত্যাদি ওই সব সংস্থাকে বিব্রত রেখেছে। পেটেন্ট সমস্যায় জর্জরিত বিভিন্ন ওষুধ সংস্থার শেয়ারের অবস্থাও খারাপ। এই শিল্পের কিছু নামী সংস্থার শেয়ার পড়েছে কম-বেশি ৫০%। অথচ সেগুলি কেনার কথা বলা যাচ্ছে না।
তবে এখন বাজারের সবচেয়ে বেশি নজর জিএসটি রূপায়ণ ও মোদীর মার্কিন সফরে। শেয়ার বাজার জিএসটি চালুর সম্ভাবনায় উৎসাহী হয়েছে গোড়া থেকেই। তবে অনেকের আশঙ্কা, তা চালুর পরে প্রথম তিন মাসে কিছু শিল্প সাময়িক ধাক্কা খেতে পারে। বিশেষত গাড়ি শিল্পের ভয়, জুনে বিক্রি কমতে পারে ৮%। কেন্দ্রের অবশ্য দাবি, জিএসটি-তে উপকৃত হবে অর্থনীতি। সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। জল কোন দিকে গড়ায়, তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ক’মাস।
এ দিকে, জুলাইয়ে দেশ যখন জিএসটি রূপায়ণে ব্যস্ত থাকবে, তখন পাশাপাশি চলতে থাকবে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশের পালা। বাজারের নজর থাকবে দুইয়ের উপরেই। বর্ষার গতিপ্রকৃতিও জানা হয়ে যাবে তখন। তত দিন পর্যন্ত বাজারে কিছু অস্থিরতা থাকতে পারে আশা-আশঙ্কার দোলাচলে। তবে দেশ স্বাভাবিক বর্ষণ পেলে, তার হাত ধরে ‘বুল’-রা পুরোদমে মাঠে নেমে পড়বে।
ইস্যুর গুণগত মান ভাল হলে এখন চাহিদার অভাব নেই। সদ্যসমাপ্ত সিডিএসএল আইপিও-তে আবেদন জমা পড়েছে ১৭০ গুণ। ভারতের আইপিও ইতিহাসে এতগুণ আবেদন আগে কোনও ইস্যুতে জমা পড়েনি। এর আগে রেলিগেয়ার পাবলিক ইস্যুতে এসেছিল প্রয়োজনের তুলনায় ১৬১ গুণ আবেদন। সিডিএসএল ইস্যুতে উচ্চবিত্তদের জন্য সংরক্ষিত শেয়ার কেনার আবেদন জমা পড়েছে ৫৬৩ গুণ এবং খুচরো লগ্নিকারীদের থেকে ২৩ গুণ। এই নিরিখে বলা যায়, বাজারে নথিবদ্ধ হলে সফল আবেদনকারীরা ভালই লাভের সন্ধান পাবেন এই ডিপোজিটরি কোম্পানির শেয়ার থেকে।
বাজার তেজি থাকলে আরও অনেক ভাল ইস্যু দেখতে পাব। ইক্যুইটির পাশাপাশি আসবে কিছু বন্ড ইস্যুও। ইক্যুইটিতে অ্যালার্জি থাকলে একটু বেশি সুদের জন্য তখন রেটিং দেখে বন্ডের দিকে ঝোঁকা যেতে পারে।