প্রবাসী ক্রেতা বাড়াতে নয়া কৌশল আবাসন শিল্পের

শুধুই স্থানীয় ক্রেতাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা নয়। চটজলদি ফ্ল্যাট বেচে লাভের টাকা ঘরে তুলতে এ বার প্রবাসী বাঙালিদের দিকে আরও বেশি করে হাত বাড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের আবাসন শিল্প। বিশেষত যেহেতু রাজ্যের বাজারে চাহিদা এখনও তলানিতে।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

শুধুই স্থানীয় ক্রেতাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা নয়। চটজলদি ফ্ল্যাট বেচে লাভের টাকা ঘরে তুলতে এ বার প্রবাসী বাঙালিদের দিকে আরও বেশি করে হাত বাড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের আবাসন শিল্প। বিশেষত যেহেতু রাজ্যের বাজারে চাহিদা এখনও তলানিতে। বাজার ছড়িয়ে ব্যবসার হাল ফেরানোর এই উদ্যোগে প্রথম দফার তালিকায় আছে রাঁচি, গুয়াহাটি, বেঙ্গালুরুর মতো শহর।

Advertisement

শিল্পমহল বলছে, রাজ্যের বাইরে বাস করলেও কলকাতায় বাড়ি কিনতে আগ্রহী বাঙালি ক্রেতার সংখ্যা নেহাত কম নয়। যে কারণে এই প্রথম রাজ্যের বাইরে ‘রোড-শো’ মারফত বিপণনে নেমেছে নির্মাণ শিল্পের সংগঠন ক্রেডাই-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখা। ক্রেডাই বেঙ্গলের দাবি, মূলত প্রবাসী বাঙালির সংখ্যা যেখানে বেশি, সেখানেই নিজেদের প্রকল্প তুলে ধরছে শিল্প। রাঁচি, গুয়াহাটি ও বেঙ্গালুরুর প্রদর্শনীতে যোগ দিচ্ছে ২৫টি স্থানীয় নির্মাণ সংস্থা।

ক্রেডাই বেঙ্গলের প্রধান সুশীল মোহতার দাবি, কলকাতার প্রকল্পগুলির ৩০% ক্রেতাই রাজ্যের বাইরে থাকেন। এই সংখ্যা বাড়াতেই ভিন্‌ রাজ্যে স্থানীয় প্রকল্প বিপণনে নামছে সংস্থাগুলি। টাটা হাউসিং-এর অন্যতম কর্তা রাজীব দাশেরও মত, প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে কলকাতায় বাড়ি কেনার চাহিদা রয়েছে।

Advertisement

তবে শুধু বাজার বাড়ানো নয়। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেও প্রবাসী ক্রেতা টানা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ হিসেব বলছে, আবাসন শিল্পে দেশে ৮ বড় শহরের মধ্যে বিক্রির নিরিখে কলকাতা শেষে। দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু তো বটেই, এ শহরকে দৌড়ে হারিয়েছে পুণে, হায়দরাবাদ ও আমদাবাদও। ২০১৫ সালের প্রথম ছ’মাসের তুলনায় ২০১৬-র প্রথম অর্ধেকে ১০% বিক্রি পড়েছে। যার মূলে নতুন ক্রেতার অভাব। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত, তথ্যপ্রযুক্তি ও ব্যাঙ্কিং শিল্পে নতুন কর্মসংস্থান না-হলে এই ঘাটতি মিটবে না। মার খাবে ফ্ল্যাট বিক্রি। বিশেষত উৎপাদন শিল্পে যেখানে বহু আগে থেকেই এ রাজ্যে খরা চলছে।

বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্ক-এর রিপোর্টে প্রকাশ, এ বছরের প্রথম ছ’মাসে কলকাতায় বিক্রি হয়েছে ১০ হাজারের কিছু বেশি ফ্ল্যাট। অথচ পুণের মতো দ্বিতীয় স্তরের শহরে প্রায় ১৬ হাজার। শিল্পমহলের দাবি, পুণেতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের রমরমাই এই ফারাক গড়ছে। উৎপাদন শিল্পেও এগিয়ে ওই শহর। তাই রোগের দাওয়াই হিসেবে নাইট ফ্র্যাঙ্কের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্যমন্তক দাসের দাবি, ‘‘কর্মসংস্থানের দিকে নজর রেখে তথ্যপ্রযুক্তি ও ব্যাঙ্কিংয়ে লগ্নি টানায় জোর দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। প্রয়োজনে তৈরি করতে হবে নতুন নীতি। নচেৎ বাজার তলানিতে ঠেকতে বাধ্য।’’

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে লগ্নি টানার ক্ষেত্রে বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (সেজ)-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামোও জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেজ নিয়ে রাজ্যের বিরোধিতার কথা সরাসরি না-বলেও স্যমন্তকবাবুর দাবি, ইনফোসিস ও উইপ্রোর মতো বড় সংস্থার পুঁজি টানতে রাজ্যকে সক্রিয় হতেই হবে। যার কারণ বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ। এর হাত ধরে তৈরি হবে নতুন ক্রেতা। তবে শুধুই সেজ নয়, জরুরি সার্বিক ভাবে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প গড়ে ওঠার উপযুক্ত পরিকাঠামোও। যার অভাবে বাম আমল থেকে এখনও লগ্নির সদ্ব্যবহার করে উঠতে পারেনি বানতলা ও নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি তালুক। বানতলায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ও চর্মশিল্প পাশাপাশি। দূষণের জেরে সেখানে এখনও লগ্নি বাস্তবায়িত করতে পারছে না অনেকে। আর নোনাডাঙা পড়ে রাস্তা, আলো, জল ও বিদ্যুতের মতো পরিষেবার অভাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন