বাজার খুঁজছে খুশির খবর

এই সব খবর বাজারের কাছে বেশ তেতো হলেও, তা তাকে দমাতে পারেনি। সূচক শক্তি ধরে রেখেছে পরিস্থিতি যাচাই করেই। দেশের কিছু অঞ্চলে বন্যার কারণে আনাজের জোগানে সাময়িক ঘাটতি এবং নোট বাতিলের পর টাকার জোগান বৃদ্ধিকেই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২০
Share:

বাজারের জন্য শুভ নয়, এমন কিছু খবর মিলেছে গত সপ্তাহে। তবে তাতে সূচক মোটেও চুপসে যায়নি। বরং মাঝেমধ্যে উঠতে দেখা গিয়েছে। নিফ্‌টি ফের ১০ হাজার পেরিয়েছে। সেনসেক্সও থেকেছে ৩২ হাজারের উপরে। আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাজারকে নামতে না-দেওয়ার সেই কৃতিত্বের বেশির ভাগটাই প্রাপ্য দেশের ভিতর থেকে হওয়া একনাগাড়ে লগ্নির।

Advertisement

প্রথমেই এক বার চোখ রাখব গত সপ্তাহে প্রকাশিত আর্থিক পরিসংখ্যানগুলির দিকে—

• অগস্টে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৩৬%, যা গত ৫ মাসে সর্বোচ্চ।

Advertisement

• বেড়েছে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হারও। অগস্টে তা দাঁড়িয়েছে ৩.২৪ শতাংশে। জুলাইয়ে ছিল ১.৮৮%।

• জুলাইয়ে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে মাত্র ১.২%। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৪.৫%।

• অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) চলতি খাতে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) ঘাটতি বেড়ে পৌঁছেছে জিডিপি-র ২.৪ শতাংশে।

এই সব খবর বাজারের কাছে বেশ তেতো হলেও, তা তাকে দমাতে পারেনি। সূচক শক্তি ধরে রেখেছে পরিস্থিতি যাচাই করেই। দেশের কিছু অঞ্চলে বন্যার কারণে আনাজের জোগানে সাময়িক ঘাটতি এবং নোট বাতিলের পর টাকার জোগান বৃদ্ধিকেই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জুলাইয়ে শিল্পোৎপাদন কমার মূল কারণ জিএসটি রূপায়ণ সংক্রান্ত সমস্যা। আশা, যত সময় যাবে কমবে সমস্যাগুলি। রফতানি বাড়া সত্ত্বেও মূলত বিপুল সোনা আমদানির কারণে বেড়েছে চলতি খাতে ঘাটতি। এরই মধ্যে আশার খবর হল, এই প্রথম বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার ছাড়িয়েছে ৪০,০০০ কোটি ডলার। কারণগুলি বিশ্লেষণ করার পর যদিও এই প্রতিকূল শর্তগুলিকে তেমন নম্বর দেয়নি শেয়ার বাজার। লগ্নিকারীরা মনে করছেন, বছরের দ্বিতীয় অর্ধেই শুধরে যাবে দেশের অর্থনীতি।

তবে এই প্রতিকূল পরিবেশে বাজারের বড় শক্তি ইপিএফও, এনপিএস এবং ফান্ড থেকে শেয়ার বাজারে ক্রমাগত লগ্নি। ফলে এক দিকে যেমন কিছু মানুষ শেয়ার বেচছেন, তেমনই অন্য দিকে বাড়ছে তার চাহিদাও। ফলে বাজার নামতে পারছে না। যদিও তার কাছে এখন বড় আশঙ্কা, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা এবং জাপান ও আমেরিকাকে ক্রমাগত হুমকি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্পর্কের অবনতি হলে, তা বড় আঘাত হানতে পারে বিশ্ব বাজারে। যে কারণে সোনার দাম এতটা বেড়েছে।

এ দিকে, হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণে নতুন করে সুদ কমার আশঙ্কা সাময়িক দূর হল। অন্য দিকে, সুদ এখনই কমছে না এই আশঙ্কায় গত সপ্তাহে বন্ডের দাম কিছুটা পড়েছে। ফলে ন্যাভ কমেছে ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডগুলির। যদিও শিল্পোৎপাদনের হার প্রত্যাশার তুলনায় কম হওয়ায় সরকারের তরফে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চাপ থাকবে সুদ আরও কমানোর। শীর্ষ ব্যাঙ্ক ঋণনীতির পর্যালোচনা করবে পুজোর পরপরই। এ মাসের শেষে জানা যাবে, অক্টোবর থেকে স্বল্প সঞ্চয়ের সুদও।

লগ্নিকারী এবং বাজারের কাছে গত সপ্তাহের সুখবর হল, এনপিএস প্রকল্পে যোগদানের সর্বাধিক বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করার প্রস্তাব। আজকাল অনেকেই ৬০ বছরে কাজ থেকে অবসর নেন না। যেমন ব্যবসায়ী, স্বনির্ভর এবং ডাক্তার, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, উকিল ইত্যাদির মতো পেশাদার। এই প্রস্তাব রূপায়িত হলে এনপিএসে লগ্নি করে অতিরিক্ত করছাড়ের সুবিধা নিতে পারবেন ষাটোর্ধ্বরাও। এনপিএসের মাধ্যমে লগ্নি বাড়বে শেয়ারে। খবর মিলেছে, শেয়ার বাজারে লগ্নি বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছে ইপিএফ-ও। শেয়ার বাজারের কাছে এই খবর সদর্থক।

এ দিকে, পুজোর মুখে বিমা শিল্প থেকে বাজারে এসেছে একজোড়া আইপিও। এক দিকে সাধারণ বিমা সংস্থা আইসিআইসিআই লম্বার্ড এবং অন্য দিকে বেসরকারি জীবন বিমা সংস্থা এসবিআই লাইফ। প্রথম ইস্যুটিতে দাম ৬৫১ টাকা থেকে ৬৬১ টাকা। এসবিআই-এর মূল্য বন্ধনী ৬৮৫-৭০০ টাকা। দুটি ইস্যুতেই দাম বেশ চড়া লাগলেও, বড় মেয়াদে দুই শেয়ারই ভাল বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। আইসিআইসিআই লম্বার্ডই হবে সাধারণ বিমা গোত্রের প্রথম পাবলিক ইস্যু। এ দিকে বেসরকারি বন্ধন ব্যাঙ্কও প্রস্তুত হচ্ছে প্রথম ইস্যু ছাড়ার জন্য। এই উদ্দেশ্যে তারা নিয়োগ করেছে পাঁচটি মার্চেন্ট ব্যাঙ্কার। মাত্র দু’বছর বয়সি এই ব্যাঙ্কের ৮৪৪টি শাখায় এখন কাজ করেন ২৫ হাজারেরও বেশি কর্মী। আমানতের পরিমাণও ২৫,০০০ কোটি ছুঁই ছুঁই। বাংলার লগ্নিকারীরা অপেক্ষা করছেন বন্ধন ইস্যু বাজারে আসার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন