প্রত্যাশা মতোই রাজকোষ ঘাটতির রাশ আলগা করে বাড়তি খরচের ছাড়পত্র পাচ্ছেন অরুণ জেটলি।
রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা পর্যালোচনার জন্য প্রাক্তন রাজস্ব সচিব এন কে সিংহের নেতৃত্বে গড়া কমিটি সুপারিশ করেছে, এখনই রাজকোষ ঘাটতি ৩ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার কোনও তাড়াহুড়ো নেই। তার বদলে আর্থিক বৃদ্ধির হারকে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন খাতে বাজেটের বহর বাড়ানো উচিত। এ জন্য ১২ বছরের পুরনো আর্থিক দায়বদ্ধতা ও বাজেট ব্যবস্থাপনা (ফিসকাল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট বা এফআরবিএম) আইন ঢেলে সাজার পক্ষেও সওয়ালকরেছে কমিটি।
আজ কমিটির সুপারিশ হাতে পাওয়ার পরে অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, বাজেটে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, আগামী অর্থ বছরে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে চলতি অর্থ বছরের মতোই ৩.৫ শতাংশে রাখবেন জেটলি। যাতে নোট বাতিলের জেরে ধাক্কা খাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গ্রামাঞ্চলে ও পরিকাঠামোয় খরচ করার মতো বাড়তি অর্থ হাতে থাকে। রাজ্যগুলিও কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছিল, তাদের ঘাটতির পাশ আলগা করার সুযোগ দেওয়া হোক। কারণ নোট বাতিলের ফলে রাজস্ব আয় কমেছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বাড়তি খরচ করা দরকার। আজ জেটলির হাতে কমিটির রিপোর্ট তুলে দেওয়ার পরে এন কে সিংহ বলেন, রাজ্যগুলির দিকটিও খতিয়ে দেখা হয়েছে রিপোর্টে।
অর্থনীতিবিদদের চিন্তা একটাই। তা হল, ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে বাজারে সুদের হার বাড়তে পারে। কারণ সরকার ঘাটতি পূরণ করে ধার করে। বাজার থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেলে, বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য ঋণের খরচ বেড়ে যায়। বাড়ে সুদের হার। স্বস্তির কথা হল, আর্থিক সংস্থাগুলিও এখন ঘাটতি বাড়ানোর পক্ষেই সওয়াল করছে। ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা মেরিল লিঞ্চ-এর মতে, জেটলি বাজেটে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ৩.৫ শতাংশে বাঁধবেন। গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর মতে তা ৩.৩ শতাংশ।
বস্তুত, বাজপেয়ী সরকারের আমলেই ২০০১-এর বাজেটে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিন্হা প্রথম রাজকোষ ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে আইনের কথা বলেন। তখন রাজকোষ ঘাটতি ৬ শতাংশে পৌঁছেছিল। কেন্দ্র ও রাজ্যের রাজকোষ ও রাজস্ব ঘাটতি ধাপে ধাপে কমাতে ২০০৩-এ তৈরি হয় আইন। স্থির হয় প্রতি বছরের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা। গত বছরের বাজেটে জেটলি অবশ্য যুক্তি দেন, ঘাটতির একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা থাকবে, না কি ঊর্ধ্বসীমা-নিম্নসীমা ঠিক হবে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সেই অনুযায়ীই সিংহের নেতৃত্বে কমিটি তৈরি হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল, প্রাক্তন রাজস্ব সচিব সুমিত বসু, মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি-র ডিরেক্টর রথীন রায়।