পণ্য-পরিষেবা করের (জিএসটি) তিন বিলের খসড়া শনিবারই প্রকাশ করল কেন্দ্র। লক্ষ্য, সংসদের চলতি অধিবেশনে তা পাশ করানো। যাতে ১ এপ্রিল থেকে চালু করা যায় জিএসটি। কিন্তু নোট বাতিলের এই ডামাডোলে তা আদৌ কতটা উচিত বা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে সন্দিহান পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী তথা জিএসটি পরিষদের চেয়ারম্যান অমিত মিত্র।
এ দিন দিল্লিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অমিতবাবু বলেন, নোট বাতিলের ফরমানে এমনিতেই অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে এখনই জিএসটি নিয়ে এগোনো কতটা উচিত হবে, তা বিবেচনার বিষয়। কারণ, সেখানেও সাময়িক অস্থিরতা তৈরি হবে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘একসঙ্গে দুই ধাক্কা সামলানো যাবে কি?’’ অর্থমন্ত্রীর দাবি, এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিরও।
১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করতে চায় মোদী সরকার। এ জন্য সংবিধান সংশোধনের কাজ সারা। ঘোষণা করা হয়েছে জিএসটি-র হারও। কিন্তু কেন্দ্রীয় জিএসটি, আন্তঃরাজ্য জিএসটি এবং রাজ্যগুলির জন্য ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত তিনটি বিল এখনও পাশ করানো বাকি। এ দিন এই তিন বিলেরই খসড়া প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। সেখানে রাজ্যগুলিকে পাঁচ বছর ধরে প্রতি ত্রৈমাসিকে রাজস্ব ক্ষতি মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে করের সর্বোচ্চ হার ২৮ শতাংশে বাঁধার কথা। রাজ্যের ক্ষতিপূরণের সংস্থান করতে বিলাসবহুল গাড়ি, সিগারেটের মতো তামাকজাত পণ্য ইত্যাদির উপর ২৮% কর ছাড়াও বসার কথা সেস। এই সেস থেকে যে ৫০ হাজার কোটির তহবিল তৈরি হবে, ক্ষতিপূরণ মেটানো হবে সেখান থেকেই।
খসড়ায় যা...
করের সর্বোচ্চ হার ২৮%
রাজস্ব কমলে রাজ্যগুলিকে পাঁচ বছর ধরে ক্ষতিপূরণ প্রতি ত্রৈমাসিকে
ক্ষতিপূরণ কম-বেশি হচ্ছে কি না, প্রতি বছর অডিট করবে সিএজি। পরের বার ক্ষতিপূরণ সেই অনুযায়ী
২০১৫-’১৬ সালের তুলনায় রাজ্যগুলিতে কর আদায় ফি বছর ১৪% হারে বাড়ত ধরে নিয়ে কষা হবে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক
দামি গাড়ির মতো বিলাসসামগ্রী ও সিগারেট-তামাক-পানমশলা-কোল্ড ড্রিঙ্কের মতো ক্ষতিকর পণ্যে ২৮ শতাংশের উপরেও বাড়তি সেস
ক্ষতিপূরণের জন্য লাগবে ৫০ হাজার কোটি। সেস সে জন্যই
পাঁচ বছর পরে ক্ষতিপূরণের তহবিলে টাকা বাঁচলে, তা ভাগ হবে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে
কর কমার সুবিধা যাতে সাধারণ মানুষ পান, তার বন্দোবস্ত
নতুন খসড়া নিয়ে ২-৩ ডিসেম্বর আলোচনা জিএসটি পরিষদে
কিন্তু এ দিন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অমিতবাবু। তাঁর বক্তব্য, ২০১৫-’১৬ সালের সাপেক্ষে রাজ্যগুলির রাজস্ব আদায় ১৪% হারে বাড়বে ধরে নিয়ে ক্ষতিপূরণ হিসেব হওয়ার কথা। অর্থাৎ, ওই অঙ্কের সঙ্গে আদায় হওয়া রাজস্বের তফাতটুকু ক্ষতিপূরণ হিসেবে মিটিয়ে দেওয়ার কথা কেন্দ্রের। কিন্তু জিএসটি চালু হলে এমনিতেই প্রথম দু’বছর রাজস্ব আদায় কমবে। তার উপর এখন নোট বাতিলের জেরে আগে থেকেই তা কমতে শুরু করেছে। অর্থাৎ, পরিকল্পিত ৫০ হাজার কোটির তহবিল ক্ষতিপূরণ মেটানোর পক্ষে যথেষ্ট হবে কি না, তা নিয়ে ঘুরিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তিনি।
২-৩ ডিসেম্বর জিএসটি পরিষদে বিলগুলির খসড়া নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। সেখানে ছাড়পত্র নিয়ে সংসদের চলতি অধিবেশনেই তা পাশ করাতে চান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কারণ তা না-হলে ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করা শক্ত। এমনকী সংসদ অচল করে রেখে বিরোধীরা যাতে পরিকল্পনা বানচাল করতে না-পারেন, সেই কারণে তিনটিকেই অর্থ বিল হিসেবে নিয়ে আসার কথা ভাবা হচ্ছে।
কিন্তু অমিতবাবুর কথা থেকে স্পষ্ট, সে গুড়ে বালি ঢালতে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন বিরোধীরা। সরাসরি বিলের বিরোধিতার কথা তিনি বলেননি। কিন্তু বলেছেন, ‘‘বিজেপি অর্থমন্ত্রীরা এ নিয়ে অখুশি। তাঁরাও প্রতিবাদ করতে বলছেন। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, কংগ্রেস ও বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন অমিতবাবু।
তাঁর যুক্তি, নোট বাতিলের কারণে পশ্চিমবঙ্গে জোর ধাক্কা লেগেছে পরিষেবা, ছোট শিল্প, অসংগঠিত ক্ষেত্রে। ফলে কর আদায় কমছে। সমস্যার মুখে অন্য অনেক রাজ্যও। ফলে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা জরুরি।
নোট নাকচের বিরোধিতায় গোড়া থেকেই সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তাকে অস্ত্র করে সময়ে জিএসটি চালু নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তাঁর অর্থমন্ত্রীও।