এ বার একটা কিনলে একটা ফ্রি ফ্ল্যাটেও

একটা কিনলে আর একটা ফ্রি। লক্ষাধিক টাকার ক্যাশ ব্যাক। মোটা অঙ্কের ছাড়।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৩৫
Share:

একটা কিনলে আর একটা ফ্রি। লক্ষাধিক টাকার ক্যাশ ব্যাক। মোটা অঙ্কের ছাড়।

Advertisement

শপিং মলের আদলে ক্রেতা টানতে এ বার মাঠে নেমেছে নির্মাণ শিল্প। নোট সঙ্কটের জের কাটিয়ে ছন্দে ফিরতে ছাড়ের বিপণন কৌশলই হাতিয়ার নির্মাণ ও আবাসন শিল্পের। মুম্বই, পুণে, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, কলকাতার ব্যবসায় গতি আনতে নতুন হাতিয়ারে শান দিচ্ছে সকলেই।

মুম্বইয়ের এক নির্মাণ সংস্থা চেম্বুরের ফ্ল্যাটের সঙ্গে বিনামূল্যে দিচ্ছে আলিবাগের একটি ফ্ল্যাট। দিল্লি ও রাজধানী সংলগ্ন অঞ্চলে (এনসিআর) হোর্ডিং জুড়ে ১৫-২০% ছাড়ের বিজ্ঞাপন। টাটা হাউসিং মুম্বই ও গোয়ার বিভিন্ন প্রকল্পে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্যাশ ব্যাক দিচ্ছে। পুণের একটি সংস্থা নির্মীয়মাণ প্রকল্পের দামে তৈরি ফ্ল্যাট বিক্রি করছে।

Advertisement

পিছিয়ে নেই কলকাতাও। লক্ষ টাকার থোক ক্যাশ ব্যাক দিচ্ছে স্থানীয় নির্মাণ সংস্থা সিদ্ধা। মাসিক পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার ক্যাশ ব্যাকের প্রকল্প চালু করেছে শাপুরজি পালোনজিও। নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাইয়ের দাবি, নোটের আকাল, নয়া আবাসন আইন ও পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) সংক্রান্ত কারণে অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। এ ধরনের সুবিধা সেই সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

গত ৮ নভেম্বর ৫০০ ও ১,০০০ টাকার নোট বাতিলের পর থেকেই সঙ্কট ঘোরালো হয়েছে আবাসন ও নির্মাণ শিল্পের। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, নির্মাণ শিল্পের কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে মিস্ত্রিদের মজুরি মেটানো— সবই মূলত নগদ-নির্ভর। তা ছাড়া নগদেও দামের একাংশ মেটান অনেক ক্রেতা। বিশেষ করে কৃষি নির্ভর মানুষ এ ব্যাপারে নগদকেই প্রাধান্য দেন। অথচ ২ লক্ষ টাকার বেশি নগদ লেনদেন নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্র। ফলে নোট বাতিলের পরে নগদহীন বাজারে দেশে প্রথম সারির আটটি শহরে মার খেয়েছে আবাসন শিল্প। সবচেয়ে বেশি ভুগেছে দিল্লি ও মুম্বই। ২০১৬-র শেষ ত্রৈমাসিকে কলকাতা খুইয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য। পরিসংখ্যান বলছে দেশ জুড়ে বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ ফ্ল্যাট।

২০০৮ সালে বিশ্ব জুড়ে মন্দার ধাক্কার অনেকটাই এসেছিল এ দেশের নির্মাণ ও আবাসন শিল্পে। তখন তার ছাপ পড়েছিল বিক্রিতে। তবে ২০১০ সালের পরে এই প্রথম বিক্রির পরিমাণ একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। এক ধাক্কায় ২০১৫ সালের তুলনায় ৪৪% বিক্রি কমেছে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে ৪০,৯৪০টি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে কলকাতায় বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩৪১৩টি। গত বছরের তুলনায় ২১% কম।

নোট বাতিলের পর থেকে চাহিদায় টানের কারণে জোগানও ছেঁটেছে নির্মাণ শিল্পমহল। নতুন প্রকল্প ঘোষণা করার সাহস দেখায়নি অধিকাংশ সংস্থা। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে দেশ জুড়ে মাত্র ২৪,৩০০ নতুন ফ্ল্যাট তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লিতে নতুন প্রকল্প ৭৩% কমেছে। মুম্বইয়ে ৫৩%। বেঙ্গালুরুতে ১৭%। কলকাতায় কমেছে ১৫%। এই মন্দার মেঘ সরিয়ে দিনের আলো দেখতে এখন তাই ক্রেতার মন পেতে উঠে-পড়ে লেগেছে আবাসন শিল্প, যে কারণে ছাড়ের নতুন নতুন কৌশল নিয়ে এগোতে চায় তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন