কর্নাটক ভোট মিটলেই লাফিয়ে দাম বাড়ার আশঙ্কা
Petrol Price

দর বাড়েনি, ভয় তাতেও

প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর আর ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামের পরিসংখ্যানে। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সোমবারই বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম ছিল সর্বোচ্চ।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৮ ০৩:০৯
Share:

নাগাড়ে বাড়ার পরে গত দু’সপ্তাহ যেন একটু হাঁফ ছাড়ার সময় দিয়েছে পেট্রল-ডিজেলের দাম। সেই ২৪ এপ্রিল থেকে তা এক চুলও নড়েনি। অথচ তাতেও আশঙ্কার শিরশিরে স্রোত আমজনতার মেরুদণ্ডে! ঘুরছে প্রশ্ন, দাম একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা কি শুধু কর্নাটক ভোটের সৌজন্যে? দক্ষিণী রাজ্যটিতে নির্বাচন মিটলেই তা লাফিয়ে বাড়বে না তো? ঠিক গুজরাত ভোটের সময়ে যেমনটা হয়েছিল।

Advertisement

প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর আর ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামের পরিসংখ্যানে। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সোমবারই বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম ছিল সর্বোচ্চ। ডলারের সাপেক্ষে টাকার দরও পড়ছে প্রায় রোজই। এ দিন তো আবার ডলার ছাড়িয়েছে ৬৭ টাকার গণ্ডিও। প্রশ্ন উঠছে, এখন যদি তেলের দর না বাড়ে, তবে আগে বাড়ল কেন? রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি বলে, মূলত এই দু’য়ের উপরেই নির্ভর করে দেশের বাজারে পেট্রল, ডিজেলের দামের ওঠানামা। তা হলে?

অনেকের প্রশ্ন, তবে কি এখনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনে তেলের দাম বাড়ায়-কমায়? নইলে ঠিক ভোটের মুখেই দর বাড়া এমন থমকে দাঁড়ায় কী ভাবে? নিছক সমাপতন?

Advertisement

সিঁদুরে মেঘ

পরিসংখ্যান

• বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়ছে চড়চড়িয়ে। সোমবার পেরিয়েছে ব্যারেলে ৭৬ ডলার।

• ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামও নামছে ক্রমশ। এ দিন ডলারের দর পৌঁছে গিয়েছে ৬৭.১৩ টাকায়।

• অথচ ২৪ এপ্রিলের পর থেকে দেশে পেট্রল-ডিজেলের দাম এক পয়সাও বাড়েনি। সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত।

কিন্তু প্রশ্ন

• কর্নাটক ভোটের কথা মাথায় রেখেই কি এই ধীরে চলো নীতি?

• গুজরাতে ভোট ছিল ৯ ও ১৪ ডিসেম্বর। তার ঠিক আগে দেশে জ্বালানির দাম বদলাচ্ছিল শামুক গতিতে। মাঝেমধ্যে দিনে কমছিলও ১-২ পয়সা করে। কিন্তু ভোট মিটতেই ফের বাড়তে শুরু করে পেট্রল-ডিজেলের দর।

• তখন জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে পেট্রল দিনে বাড়ছিল ১৫-২০ পয়সা। ডিজেল ৪ থেকে ১৮ পয়সা। আশঙ্কা, এ বারও তেমনটাই হবে না তো?

• দিল্লির দাবি, তেলের দামে বাড়া-কমা সংস্থাগুলির সিদ্ধান্ত। এতে কেন্দ্রের হাত নেই। তাহলে ভোটের মুখে বারবার দর থমকানো কি নিছকই কাকতালীয়?

পরিসংখ্যান

• ২০১৩ সালের অগস্ট-সেপ্টেম্বরে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর ছিল আকাশছোঁয়া। ঘোরাফেরা ব্যারেলে ১০৮ থেকে ১১৬ ডলারের মধ্যে। তখন পেট্রলের দাম লিটারে ছিল ৮১ থেকে ৮৩ টাকার আশেপাশে। ডিজেল নিয়ন্ত্রিত।

• সেখানে গত এপ্রিলে অশোধিত তেল ব্যারেলে ৭৫ ডলার ছুঁতে-না ছুঁতেই পেট্রল হয়েছে ৭৭.৩২ টাকা। ৫৫ মাসে সর্বোচ্চ। রেকর্ড ডিজেলেও। লিটারে ৬৮.৬৩ টাকা।

কিন্তু প্রশ্ন

• অশোধিত তেলের দর তুলনায় আরও অনেক বেশি থাকার সময়েও জ্বালানির এতটা দাম গুনতে হয়েছে খুব কমই। তবে এখন কেন?

• ইউপিএ জমানায় তেলের চড়া দর নিয়ে আক্রমণ শানাতেন নরেন্দ্র মোদী। অথচ তাঁর সময়েই দাম আকাশছোঁয়া। সরকার চুপ কেন?

পরিসংখ্যান

• বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল তলানিতে থাকাকালীন ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে ন’বার উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়েছিল কেন্দ্র। সেখানে তা কমেছে মাত্র এক বার।

• এখন পেট্রল ও ডিজেলে তার অঙ্ক লিটারে যথাক্রমে ১৯.৪৮ ও ১৫.৩৩ টাকা। শুধু ওই ১৫ মাসেই পেট্রল-ডিজেলে বাড়তি উৎপাদন শুল্ক চেপেছে ১১.৭৭ এবং ১৩.৪৭ টাকা। কেন্দ্রের রাজকোষে ঢুকেছে ২.৪২ লক্ষ কোটি।

কিন্তু প্রশ্ন

• অশোধিত তেলের দাম কম থাকার সময়ে যদি কেন্দ্র ও ভাবে শুল্ক চাপাতে পারে, তবে তা বাড়ার সময়ে তারা কর ছাঁটার পথে হাঁটবে না কেন? বিশেষত যখন তেলের দরে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের।

রোজ দর বদলের গুটিগুটি পায়ে হেঁটেই নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের রীতিমতো ছেঁকা দিচ্ছে তেলের দাম। পেট্রলের দর গত ৫৫ মাসে সর্বোচ্চ। রেকর্ড ডিজেলের দামেও। নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। এ নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করছেন বিরোধীরা। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর পরে এখনও উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাইয়ের কথা ভাবছে না কেন্দ্র। তাদের দাবি, তেমনটা করলে রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশা উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা।

আর এখানেই মোদী সরকারকে বিঁধছেন বিরোধীরা। এ দিনই যেমন তোপ দেগেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। আক্রমণ শানিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। রাহুলের দাবি, বিজেপি সরকার তেল-গ্যাস থেকে ১০ লক্ষ কোটি টাকা কর পেয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষকে সুরাহা দেওয়ার বেলায় নেই।

আসলে গত এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে তেল সংস্থাগুলির গড় লাভ প্রায় অর্ধেক হয়েছে। ফলে অনেকেরই আশঙ্কা, বিশ্ব বাজারে তেলের দর চড়া থাকলে ভোটের পরেই লাভ পুষিয়ে নিতে দাম বাড়াবে তেল সংস্থাগুলি। তাই সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরাও। সম্প্রতি কেন্দ্রের আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষ চন্দ্র গর্গের অবশ্য দাবি ছিল, তেলের দামের সঙ্গে কর্নাটক ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন