প্রস্তাব অর্থ জোগানোর, চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকেও

পেট্রোকেম খোলা নিয়ে পূর্ণেন্দুর দ্বারস্থ প্লাস্টিক শিল্প

সরকারের কাছে একাধিক আর্জি জানিয়ে সাড়া মেলেনি। এ বার হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের (এইচপিএল) অন্যতম প্রধান অংশীদার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের শরণাপন্ন হল সংস্থার উপর নির্ভরশীল প্লাস্টিক শিল্প। কার্যকরী মূলধনের অভাবেই পেট্রোকেমের উৎপাদন বন্ধ। প্লাস্টিক শিল্পের প্রতিনিধিদের দাবি, সেই অর্থের জোগান দিতেও রাজি তাঁরা। আর এটা নিয়েই পূর্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চায় প্লাস্টিক শিল্প।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৪ ০১:৫৪
Share:

সরকারের কাছে একাধিক আর্জি জানিয়ে সাড়া মেলেনি। এ বার হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের (এইচপিএল) অন্যতম প্রধান অংশীদার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের শরণাপন্ন হল সংস্থার উপর নির্ভরশীল প্লাস্টিক শিল্প। কার্যকরী মূলধনের অভাবেই পেট্রোকেমের উৎপাদন বন্ধ। প্লাস্টিক শিল্পের প্রতিনিধিদের দাবি, সেই অর্থের জোগান দিতেও রাজি তাঁরা। আর এটা নিয়েই পূর্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চায় প্লাস্টিক শিল্প।

Advertisement

সোমবার সেই লক্ষ্যে পূর্ণেন্দুবাবুকে চিঠি দিয়েছে ইন্ডিয়ান প্লাস্টিক্স ফেডারেশন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথ খুলে রাখতে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান ফেডারেশনের এক সদস্য।

গত এক মাসের উপরে রাজ্যের অন্যতম ‘শো-পিস’ হলদিয়া পেট্রোকেমে উৎপাদন বন্ধ। ফলে বন্ধ প্লাস্টিক শিল্পে কাঁচা মালের জোগান। যার জেরে বন্ধ হতে শুরু করেছে প্লাস্টিক পণ্যের কিছু কারখানাও। প্লাস্টিক শিল্পের এই চূড়ান্ত বেহাল দশার কথা জানিয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রকে চিঠি দিয়েছে ইন্ডিয়ান প্লাস্টিক্স ফেডারেশন। পেট্রোকেম কবে খুলবে, তা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে তারা। মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময়ও চেয়েছিল সংগঠন। এ বার ফেডারেশনের অভিযোগ, দেখা করা তো দূরস্থান। চিঠির উত্তর পর্যন্ত পায়নি তারা। এমনকী এ বিষয়ে অমিতবাবুর কোনও প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি।

Advertisement

প্লাস্টিক শিল্পমহলের মতে, এর আগেও কাঁচা মালের ক্রেতাদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে কার্যকরী মূলধনের অভাব মিটিয়েছে হলদিয়া পেট্রোকেম। এই প্রক্রিয়ায় ৭০ কোটি টাকার কাছাকাছি তুলেছিল সংস্থা। এ বারও সেই পথে হাঁটলে, সংস্থার পাশে দাঁড়াতে তৈরি প্লাস্টিক্স ফেডারেশন। এক সদস্যের মতে, কারখানা বন্ধ রাখার কারণ যে অর্থের অভাব, তা সকলের কাছেই স্পষ্ট। সেই কারণে সমস্যার সমাধানসূত্র বার করতে সংস্থা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু কোনও রকম সাড়া মেলেনি। এ বার ওই একই প্রস্তাব পূর্ণেন্দুবাবুর কাছে দিতে চায় ফেডারেশন।

পরিস্থিতি ক্রমশ শোচনীয় হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট প্রদীপ নায়ার। পেট্রোকেমের কাছ থেকে কাঁচা মাল না-পাওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে অন্তত ২০০টি প্লাস্টিক কারখানা। রুজি-রুটি হারিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। বন্ধ কারখানার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। বিশেষত, অসংগঠিত ক্ষেত্রে মোটা পুঁজি ও মজুত কাঁচা মাল প্রায় নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, “হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস খোলার জন্য আমরা সব রকম সাহায্য করতে রাজি। কারণ এর সঙ্গে গোটা প্লাস্টিক শিল্পের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে রয়েছে।” পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলে ৫০০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে তৈরি হয়েছে প্লাস্টিক শিল্প। সব মিলিয়ে রয়েছে ২৫০০ কারখানা। এগুলিতে কাজ করেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।

পাশাপাশি, রাজ্যের প্লাস্টিক শিল্পের দাবি, ৫০ শতাংশ উৎপাদন করেও পূর্বাঞ্চলে হলদিয়া পেট্রোকেমের ৪০ শতাংশ বাজার রয়েছে। সেই সূত্রেই সেখান থেকে ৮০ শতাংশ কাঁচা মাল পেতেন তাঁরা। প্রতি মাসে ১৭ হাজার টন কাঁচা মাল সরবরাহ করত পেট্রোকেম। ওই জোগান পুরোটাই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চূড়ান্ত দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। রিলায়্যান্স, ইন্ডিয়ান অয়েল ও গেইলের মতো সংস্থার কাছ থেকে পর্যাপ্ত কাঁচা মাল পাওয়া কঠিন। কারণ পশ্চিম ও উত্তর ভারতে কাঁচা মাল জোগান দেওয়ার পরে এ রাজ্যের জন্য তাদের হাতে বিশেষ কিছু থাকে না বললেই চলে। ফলে সব মিলিয়ে এখন মাসে প্রায় ১৫ হাজার টন কাঁচা মালের ঘাটতি হচ্ছে।

কাঁচা মাল নিয়ে সমস্যার কথা কবুল করেছেন ইন্ডিয়ান অয়েলের এক কর্তাও। তিনি জানান, এ ধরনের কাঁচা মাল জোগান দেওয়ার জন্য তাঁদের দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি করতে হয়। যাদের সঙ্গে চুক্তি আছে, তাদের দেওয়ার পরেই বাড়তি যা থাকে, সেটা অন্য কোথাও বিক্রি করা যায়। ফলে সেই অতিরিক্ত কাঁচা মালের পরিমাণ খুবই কম। এবং সেই বাড়তি কাঁচা মাল সরবরাহ করেও হলদিয়া পেট্রোকেমের অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন