নোটবন্দিতে নাভিশ্বাস ব্যবসা, শিল্পের

জোর ধাক্কা মোদীর মুদ্রা প্রকল্পে

নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের ধাক্কায় কি তাঁরই ‘সাধের’ মুদ্রা যোজনা ধরাশায়ী? অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রকের তথ্য অন্তত তেমন কথাই বলছে। দেখা যাচ্ছে, নোটবন্দির পরে লাফিয়ে বেড়েছে ওই প্রকল্পের আওতায় অনাদায়ি ঋণের অঙ্ক।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫২
Share:

প্রতিশ্রুতি: মুদ্রা প্রকল্পের কার্ড বিলিতে মোদী।

নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের ধাক্কায় কি তাঁরই ‘সাধের’ মুদ্রা যোজনা ধরাশায়ী? অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রকের তথ্য অন্তত তেমন কথাই বলছে। দেখা যাচ্ছে, নোটবন্দির পরে লাফিয়ে বেড়েছে ওই প্রকল্পের আওতায় অনাদায়ি ঋণের অঙ্ক। আবার তা মাথাচাড়া দেওয়ার কারণে নতুন করে ধার দিতে গড়িমসি করছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রীর তখ্‌তে বসে নরেন্দ্র মোদী ছোট উদ্যোগপতি বা ব্যবসায়ীদের জন্য সহজে ঋণের ব্যবস্থা করে ‘মুদ্রা যোজনা’ চালু করেছিলেন। কিন্তু নোট বাতিলের ঠিক পরে সেই ছোট উদ্যোগপতিরাই ঋণ শোধ করতে হিমসিম। ফলে নোট বাতিলের পরে এক বছরের মধ্যে ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণ এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে। বিপদ দেখে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তাদের কপালে ভাঁজ। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিই এখন নতুন ঋণ মঞ্জুর করতে চাইছে না।

এতে চিন্তায় পড়েছেন রাজ্য স্তরের বিজেপি নেতারা। কারণ, এই ছোট-মাঝারি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা বিজেপির ভোট-ব্যাঙ্ক। ঋণ না পেয়ে তাদের ব্যাঙ্কের দরজা থেকে ফিরে যেতে হলে সেই ক্ষোভ ইভিএমে আছড়ে পড়তে পারে। কংগ্রেস নেতাদের প্রশ্ন, ব্যাঙ্ক ঋণ দিতে চাইছে না বলেই কি ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এই ব্যবসায়ীদের ঋণ পাইয়ে দিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চাপ তৈরি করছে মোদী সরকার?

Advertisement

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নোট বাতিল ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই অর্থবর্ষে (২০১৬-১৭) মুদ্রা প্রকল্পে ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণ বা এনপিএ-র পরিমাণ ছিল ৩,৭৯০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ সালে তা এক লাফে ৯২% বেড়ে ৭,২৭৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন আগেই সতর্ক করেছিলেন, মুদ্রা যোজনায় ঋণ শোধ না হওয়ার ঝুঁকি ভাল ভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। না হলে তা ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের নতুন বিপদ হয়ে উঠতে পারে। অনেকে বলছেন, রাজনের কথাই এ বার সত্যি হচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘অল্প পুঁজি নিয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করা তরুণ উদ্যোগপতিরা ইচ্ছাকৃত ভাবে ব্যাঙ্কের ঋণ মেটাবেন না, এমন নয়। ব্যবসা মার খেয়েছে বলেই তাঁরা ঋণ শোধ করতে পারছেন না।’’

নোট বাতিলের ফলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন ছোট ও মাঝারি শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরাই। মুদ্রা প্রকল্পেও মূলত তাঁরাই ঋণ পেয়েছিলেন। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, এক ধাক্কায় অনাদায়ি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়াটা অবশ্যই চিন্তার। কিন্তু মুদ্রায় মোট ঋণের পরিমাণের তুলনায় অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ যথেষ্ট কম। তিন বছর হল মুদ্রা যোজনা চালু হয়েছে। সেই তুলনায় ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত অনাদায়ি ঋণের হার মাত্র ৩.৪৩%।

সারা দেশে ছোট শিল্পপতিদের অনাদায়ি ঋণের হার ৩.৪৩% হলেও, গুজরাতের মতো রাজ্যেই তার হার ৭ শতাংশের বেশি। সুরাত-সহ গুজরাতের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে নোট বাতিলের ধাক্কায় একের পর এক ছোট-মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়েছিল। গুজরাতের সেই ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি শিল্পে অনাদায়ি ঋণের হার ৭.৪%।

তার ফলে গুজরাতের মতো রাজ্যেই মুদ্রা প্রকল্পে নতুন ঋণ দিতে গিয়ে পিছিয়ে আসছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। যা এমনিতে শিল্পোন্নত ও ব্যবসায় এগিয়ে থাকা রাজ্য হিসেবে পরিচিত। তার প্রমাণ হল, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম সাত মাসে মুদ্রা যোজনায় পুরো বছরের লক্ষ্যের মাত্র ৩৫% বিলি হয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘গুজরাতেই যদি মুদ্রা যোজনায় ঋণ দিতে ব্যাঙ্কগুলি এত গড়িমসি করে, তা হলে অন্য রাজ্যের ছবি সহজেই অনুমেয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন