চলতি সপ্তাহেই (মঙ্গলবার) ১৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-কে ২২,৯১৫ কোটি টাকা শেয়ার মূলধন জোগানোর কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। ২০১৯ সাল পর্যন্ত চার বছরে প্রতিশ্রুতি রয়েছে মোট ৭০ হাজার কোটি ঢালারও। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মূলধনের প্রয়োজন আদপে তার তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করে মুডিজ।
আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থাটির মতে, দিন চারেক আগে কেন্দ্র যে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ঢালার কথা জানিয়েছে, তাতে ব্যাঙ্কগুলির কিছুটা সুবিধা হয়তো হবে। কিন্তু তাদের আসল প্রয়োজন সরকারি বরাদ্দের তুলনায় অনেক বেশি। মুডিজের যুক্তি, ২০১৯ সালের মধ্যে ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেই বাড়তি শেয়ার মূলধন লাগবে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। সেখানে তাদের জন্য সরকারি বরাদ্দ ৪৫ হাজার কোটি।
ঋণ খেলাপের সমস্যায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি আজ অনেক দিনই জেরবার। পাহা়ড়প্রমাণ অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা সামাল দিতে মোটা টাকা তুলে রাখতে বাধ্য হচ্ছে তারা। যার ছাপ পড়ছে তাদের হিসেবের খাতায় (ব্যালান্স শিট)। হয় লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে, নইলে হুড়মুড়িয়ে কমছে মুনাফা। এই পরিস্থিতিতে ওই ব্যাঙ্কগুলিতে নতুন করে মূলধন জোগানো আরও বেশি জরুরি বলে মুডিজের অভিমত।
গত অগস্টে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সাত দফা সংস্কারের কর্মসূচি (ইন্দ্রধনুষ) ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। তখনই বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির নতুন পুঁজি লাগবে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭০ হাজার কোটি দেবে কেন্দ্র। বাকি ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি বাজার থেকে তুলবে ব্যাঙ্কগুলি। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দাবি ছিল, কেন্দ্র পুঁজি জোগালে বাকি টাকা তোলা সহজ হবে।
ঠিক হয়, ২০১৫-’১৬ এবং ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা করে পাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ও সরকারি ব্যাঙ্কগুলি। পরের দুই অর্থবর্ষে (২০১৭-’১৮ এবং ২০১৮-’১৯) মিলবে ১০ হাজার কোটি করে। অথচ মুডিজ মনে করে, শুধু ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেরই লাগার কথা মোট ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটির শেয়ার-মূলধন। যা তাদের জন্য তুলে রাখা ৪৫ হাজার কোটির তুলনায় অনেক বেশি।
অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, যে ২৩ হাজার কোটি মঙ্গলবার ঢালা হয়েছে, তা এই আর্থিক বছরে ব্যাঙ্কগুলিতে মূলধন সরবরাহের প্রথম কিস্তি। এ বারের বাজেট বরাদ্দের (২৫ হাজার কোটি) ৯২%। আগামী দিনে ব্যাঙ্কের দক্ষতা, ধার-জমার পরিমাণ, খরচ কমানোর চেষ্টা ইত্যাদি মেপে প্রয়োজনে আরও মূলধন দেওয়া হবে।
কিন্তু মূল্যায়ন সংস্থাটি মনে করে, এই সরকারি বরাদ্দে মূলধনের চাহিদার চিঁড়ে ভিজবে না। বিশেষজ্ঞদের মতেও, বাসেল-থ্রি নিয়ম মানতে গেলে ব্যাঙ্কগুলির হাতে এমনিতেই অনেক বেশি নগদের জোগান থাকতে হবে। সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা সামাল দেওয়ার কথা।
হালফিলে ভারতে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ যা দাঁড়িয়েছে, তা নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতির মাপের থেকেও বেশি। সময়ে শোধ না-হওয়া ধারের জন্য টাকা সরিয়ে রাখতে গিয়ে বিপুল নিট লোকসানের মুখ দেখতে হয়েছে অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে। কারও আবার লোকসান না-হলেও, মুনাফার অঙ্ক কমে গিয়েছে অনেকটা। ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১ লক্ষ ১৪ হাজার কোটি টাকার ধার মুছে ফেলতে হয়েছে হিসেবের খাতা থেকে। ২০১৫ সালে অনুৎপাদক সম্পদের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৩.৬১ লক্ষ কোটি। সময়ে শোধ না-হওয়া ধারের অঙ্ক পৌঁছেছে ৮ লক্ষ কোটিতে। এই পরিস্থিতিতে নগদের চাহিদা এবং ঋণ খেলাপের সমস্যা সামাল দিয়ে ব্যাঙ্কগুলির ধার দেওয়ার ক্ষমতা বাড়াতে অনেক বেশি শেয়ার-মূলধন জরুরি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
মুডিজের মতেও, সরকার ২৩ হাজার কোটি ঢালায় ব্যাঙ্কগুলির কিছুটা সুবিধা হবে। বিশেষত উপকৃত হবে কম মূলধন হাতে থাকা ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ সরকারি মূলধন নস্যি বলেই মনে করছে তারা।