চাকরির তথ্য কই, প্রশ্নবাণ রাজনেরও

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজন বলেন, ভারতের এখন অন্যতম বড় সমস্যা চাকরি। মানুষ চাকরি চান। তাই তার সুযোগ তৈরি করতে হবে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০১:৩৩
Share:

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। - ফাইল ছবি

চাকরি কই? চাকরি নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যই বা কই? এ বার এই প্রশ্ন তুলে দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনও।

Advertisement

মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজন বলেন, ভারতের এখন অন্যতম বড় সমস্যা চাকরি। মানুষ চাকরি চান। তাই তার সুযোগ তৈরি করতে হবে। এটাই প্রথম কাজ। এই প্রসঙ্গে শিকাগো বুথ স্কুলের অর্থনীতির অধ্যাপকের মতে, দেশের বৃদ্ধির হার এমন হওয়া উচিত, যাতে তা বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি করে। যাঁরা স্কুল-কলেজ থেকে বেরোচ্ছেন, যাঁরা কৃষি ক্ষেত্র ছেড়ে আসছেন, তাঁরা যেন চাকরির সুযোগ পান। যে তরুণ প্রজন্ম দেশের সম্পদ হতে পারে, তা যেন ‘অভিশাপ’ না হয়ে দাঁড়ায়।

ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিসের (এনএসএসও) ফাঁস হওয়া রিপোর্ট বলছে, ২০১৭-১৮ সালে ভারতে বেকারত্বের হার ছিল ৪৫ বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে তা ধামাচাপা দেওয়ার। যা নিয়ে বিরোধীরা ক্রমাগত বিঁধছেন। পরিসংখ্যানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন ১০৮ জন অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানী। অভিযোগ করেছেন, যে পরিসংখ্যান কেন্দ্রের মনমতো নয়, তা-ই বিভিন্ন মাপকাঠি দেখিয়ে হয় ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে বা বদলানো হচ্ছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতে রাজন মনে করছেন, ভারতে দীর্ঘদিন ধরেই চাকরি নিয়ে ভাল তথ্য পাওয়া যায় না। তাই আগে তথ্য জোগাড়ের পদ্ধতি ঠিক করা উচিত। কিন্তু সে জন্য ইপিএফও বা অন্য কোনও পরিসংখ্যান চলবে না। বরং বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান হাতে থাকা জরুরি। তাঁর বক্তব্য, বিশ্বকে বোঝানো উচিত যে ভারত পরিসংখ্যানে কারচুপি করছে না। সে জন্য প্রয়োজনে স্বাধীন কমিটি তৈরি করা হোক। তারাই খতিয়ে দেখে বলুক যে দেশ এখন কোথায় দাঁড়িয়ে।

পরিসংখ্যানের প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রাজন টেনে এনেছেন বৃদ্ধির কথাও। তিনি বলেন, এই হার কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। ফলে এখন পরিসংখ্যান অর্থনীতির ঠিক কোন অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করছে, তা তাঁর জানা নেই। এখনকার কর্তব্য হল ভারতের প্রকৃত বৃদ্ধির হার কত, তা খুঁজে বের করা। প্রাক্তন গভর্নরের দাবি, নরেন্দ্র মোদী সরকারের এক মন্ত্রীই বলেছেন যে, ৭% বৃদ্ধির দেশে চাকরি নেই, তা হয় কি? একটা বিষয় হতে পারে দেশের অর্থনীতি যে আদৌ ৭% হারে এগোচ্ছে না।

অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির আগেই দাবি করেছেন যে, চাকরি ছাড়া দেশের বৃদ্ধি ৭-৮% হারে এগোতে পারে না। বলেছেন, দেশের কোথাও বড় সামাজিক অস্থিরতা না থাকাই প্রমাণ করে যে, তরুণ প্রজন্মের কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তাঁর দাবি, এ যেন সমালোচনা করতে হবে বলেই করা। রাজনের মতে, রেলে ৯০ হাজারের কাছাকাছি চাকরির জন্য ২৫ লক্ষ লোকের আবেদন করাই প্রমাণ করে যে, ভাল চাকরির চাহিদা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, নভেম্বরে বৃদ্ধি মাপার মাপকাঠি বদলে পরিসংখ্যান দফতর জানিয়েছে যে, ইউপিএ জমানার চেয়ে নরেন্দ্র মোদীর আমলে দেশ এগিয়েছে দ্রুত হারে। ২০১৭-১৮ সালে বৃদ্ধি ৬.৭% থেকে বাড়িয়ে ৭.২% করেছে কেন্দ্র। আবার এনএসএসও-র অপ্রকাশিত পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে বলছে, দেশে চাকরির ছবিটা খুব একটা ভাল নয়। ১৯৯৩-৯৪ সালের পরে দেশে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা এই প্রথম সরাসরি কমেছে। অনেকের মতে, এই অবস্থায় রাজনের বক্তব্য নতুন করে পরিসংখ্যানে স্বচ্ছতার দাবি তুলল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন