ঋণ খেলাপের ধাক্কায় ধস লাভে

ঋণ খেলাপের সমস্যা নিয়ে বিদায় বেলাতেও উদ্বিগ্ন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। কেন, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির প্রথম ত্রৈমাসিকের ফল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০২:৫০
Share:

ঋণ খেলাপের সমস্যা নিয়ে বিদায় বেলাতেও উদ্বিগ্ন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। কেন, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির প্রথম ত্রৈমাসিকের ফল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার এই অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) ফলাফল প্রকাশ করেছে ব্যাঙ্ক অব বরোদা। ওই সময়ে তাদের নিট মুনাফা কমেছে ৬০%। মূল কারণ অনুৎপাদক সম্পদের নাছোড় সমস্যা। আর এই সমস্যা ওই ব্যাঙ্কের একার নয়। সময়ে ধার শোধ না-পাওয়ার কারণে মুনাফার অঙ্কে ধস নেমেছে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক, কর্পোরেশন ব্যাঙ্ক ইত্যাদির। লাভের মুখই দেখতে পায়নি ইউকো ব্যাঙ্ক। কিছুটা ব্যতিক্রম আইডিবিআই ব্যাঙ্ক। গত আর্থিক বছরে ৩,৬৬৪ কোটি টাকা ক্ষতি দেখানো এই ব্যাঙ্কটির নিট লাভ এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে বেড়েছে ৭৮%। তবে অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা পিছু ছাড়েনি তাদেরও।

আগামী ৪ সেপ্টেম্বর শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধারের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন রাজন। নিজের তিন বছরের মেয়াদে রীতিমতো সময় বেঁধে ঋণ খেলাপের সমস্যা নিকেশে কড়া পদক্ষেপ করেছেন তিনি। ব্যাঙ্কগুলিকে বলেছেন, বিষয়টিকে কার্পেটের নীচে লুকিয়ে না-রেখে হিসেবের খাতা তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করতে। নির্দেশ দিয়েছেন, সময়ে শোধ না-হওয়া ধার তাড়াতাড়ি চিহ্নিত করে তার জন্য টাকা তুলে রাখার জন্য। আর তা করতে গিয়েই গত কয়েকটি ত্রৈমাসিক ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির লাভ কমছে হুড়মুড়িয়ে। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসও তার ব্যতিক্রম নয়।

Advertisement

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাজন বলেন, ঋণ খেলাপের পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভাল। কিন্তু ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা থেকে ওই সমস্যা পুরোপুরি মুছে ফেলার লক্ষ্য ছুঁতে অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। প্রথম ত্রৈমাসিকের ফলাফল প্রকাশ করতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বয়ানও প্রায় তা-ই। তাদের দাবি, পরিস্থিতি কিছুটা শুধরেছে। অনুৎপাদক সম্পদ খাতে টাকা রাখতে গিয়ে শুরুতে ধাক্কা খেতে হয়েছে। কিন্তু এ বার ধীরে ধীরে সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন হবে না।

ঋণ খেলাপের সমস্যা নিয়ে অনেক দিনই খাবি খাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। সঙ্কট কতখানি তীব্র, তা বোঝাতে গিয়ে কিছু দিন আগেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছিলেন, ‘‘গত বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মোট কার্যকরী মুনাফা ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটিরও বেশি। কিন্তু অনুৎপাদক সম্পদ খাতে টাকা রাখতে গিয়ে পুঞ্জীভূত নিট লোকসান হয়েছে ১৮ হাজার কোটি।’’ তাঁর প্রস্তাব, সময়ে শোধ না-হওয়া ধার আদায়ের জন্য সাবধানী পথে হেঁটে কী ভাবে এগোনো সম্ভব, সেই দাওয়াই বাতলাক ব্যাঙ্কগুলি। যাতে তা খতিয়ে দেখে সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারে কেন্দ্র। একই সঙ্গে তিনি জানান, এই সমস্যা যুঝতে প্রয়োজনে চলতি অর্থবর্ষে বাজেট বরাদ্দ (২৫ হাজার কোটি টাকা) ছাপিয়ে মূলধন জোগাতে তাঁরা তৈরি।

ঋণ খেলাপের জেরে তৈরি বাজারও এত বিপুল যে, তা টেনে আনছে বিদেশি লগ্নি। ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা থাকা ঋণখেলাপি সংস্থা চাঙ্গা করতে এ দেশে টাকা ঢালার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কানাডার ব্রুকফিল্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট। এ জন্য স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে মউ সই করেছে তারা।

তবে রাজন মনে করেন, ধীরে হলেও ঘুরতে শুরু করেছে অর্থনীতির চাকা। ভাল বর্ষা হলে তাতে গতি বাড়বে। জেটলিরও ধারণা, পরিকাঠামো ইস্পাত-সহ কয়েকটি ক্ষেত্রে বহু প্রকল্প আটকে থাকায় এত দিন ধার ফেরত পেতে হিমসিম খেয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু হালে ওই সমস্ত প্রকল্পে কিছুটা গতি আসতে শুরু করায় ঋণ শোধেও তার সদর্থক প্রভাব পড়বে। আপাতত সেই চাকা ঘোরার দিকেই চোখ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন