পিপিএফ, কিসান বিকাশপত্র, সুকন্যা সমৃদ্ধি থেকে শুরু করে প্রবীণদের জন্য পাঁচ বছরের সঞ্চয় প্রকল্প— সমস্ত স্বল্প সঞ্চয়ই ফের ১০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমাল কেন্দ্র। ফলে সুদের হার পিপিএফে ৮% থেকে কমে হচ্ছে ৭.৯%। প্রবীণদের পাঁচ বছরের সঞ্চয় প্রকল্পে ৮.৫% থেকে কমে ৮.৪%।
বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের মতো স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদের হারও এখন প্রতি ত্রৈমাসিকে পর্যালোচনা করা হয়। এর আগে সেগুলিতে ওই হার কমানো হয়েছিল গত অক্টোবরে। তবে এ বারের সিদ্ধান্তে সুদ যেখানে নামল, তা স্বল্প সঞ্চয়কারীদের গত ৪০ বছরের অভিজ্ঞতায় নেই।
বিরোধীদের বক্তব্য, গরিব-দরদী সেজে উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। অথচ সরকারকে বিশ্বাস করে ডাকঘরে নিজেদের পুঁজি রেখেছিলেন যাঁরা, ভোটে জয় হাসিল হতেই তাঁদের স্বার্থে এই ভাবে আঘাত করা হল। প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল সেভিংস ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের নভেম্বরে দেশ জুড়ে স্বল্প সঞ্চয় ছিল ৪৯ হাজার ৫১ কোটি টাকা। আর এ দিন সংসদে যোগাযোগমন্ত্রী মনোজ সিন্হা জানান, নভেম্বরে নোট বাতিলের পরে প্রবীণ নাগরিক সঞ্চয় প্রকল্পে জমা অনেকখানি বেড়েছে।
স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে চাকুরিজীবী মধ্য ও নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ মানুষ টাকা রাখেন। অনেকে নিজেদের পুরো সঞ্চয়ই এখানে রেখে, তার সুদের টাকায় সংসার চালান। কেন্দ্রের সুদ ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শ্রমিক সংগঠন সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, ‘‘এর পর বেশি সুদের জন্য বহু মানুষ ফের চিট ফান্ডের দিকে ঝুঁকবেন। ’’
নতুন সুদ এক নজরে
প্রকল্পের নাম পুরনো সুদ নতুন সুদ
• ১ বছরের মেয়াদি জমা ৭.০ ৬.৯
• ৫ বছরের মেয়াদি জমা ৭.৮ ৭.৭
• রেকারিং ডিপোজিট (৫ বছর) ৭.৩ ৭.২
• সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস ৮.৫ ৮.৪
• পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড ৮.০ ৭.৯
• জাতীয় সঞ্চয়পত্র (এনএসসি) ৮.০ ৭.৯
• কিসান বিকাশপত্র ৭.৭ ৭.৬
• সুকন্যা সমৃদ্ধি ৮.৫ ৮.৪
• সেভিংস অ্যাকাউন্ট ৪.০ ৪.০
* সব হার শতাংশে
অর্থ মন্ত্রকের অবশ্য যুক্তি, সুদ কমেছে সামান্যই। এত দিন প্রবীণদের সঞ্চয় প্রকল্পে ১ লক্ষ টাকা রাখলে বছরে ৮,৫০০ টাকা সুদ মিলত। এখন মিলবে ৮,৪০০ টাকা। মন্ত্রকের যুক্তি, দেশের অর্থনীতি তথা বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কমানো হয়েছে। এর ফলে ব্যাঙ্কগুলির পক্ষেও ঋণে সুদ কমানো সহজ হবে। তাদের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমালেও সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি সেই অনুয়ায়ী সুদ কমাতে পারছিল না। কারণ, সরকারি স্বল্প সঞ্চয়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে ব্যাঙ্কগুলিকেও জমার উপর
অতিরিক্ত সুদ দিতে হচ্ছিল।
পয়লা এপ্রিল থেকে শুরু নতুন আর্থিক বছরে সুদের হার কমার ফলে আমজনতা মুশকিলে পড়লেও, এ দিন থেকে লাভবান হতে চলেছে রাজ্যগুলি। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের মতো ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলি। যাদের ঋণের সিংহভাগই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে জমা হওয়া টাকা। বস্তুত, গত জানুয়ারিতেই কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, চারটি বাদে বাকি রাজ্যগুলিকে এই প্রকল্প থেকে বাইরে রাখা হবে। যার অর্থ, স্বল্প সঞ্চয়ে যে জমা পড়ে, তার থেকে ওই রাজ্যগুলিকে বাধ্যতামূলক ভাবে ধার নিতে হবে না। গুণতে হবে না চড়া হারে সুদও। তার বদলে বাজার থেকে অনেক কম হারে ঋণ নিতে পারবে তারা। বরং কেন্দ্রীয় সরকারই স্বল্প সঞ্চয়ের টাকা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করবে। তার উপর সুদের বোঝাও বইবে তারাই।