খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি নজির গড়ে মে মাসে নেমে এল ২.১৮ শতাংশে। তার মধ্যে খাদ্য সামগ্রীর দাম সরাসরি পড়েছে ১.০৫%, বিশেষ করে কমেছে ডাল ও শাক-সব্জির দাম। তবে সোমবার প্রকাশিত সরকারি হিসেবে বাজার দর কমার এই আপাত স্বস্তির খবরের পাশাপাশি অর্থনীতির পক্ষে অশনি সঙ্কেত কল-কারখানার উৎপাদন এপ্রিলে ৩.১ শতাংশে নেমে আসা, যা গত বছরের এপ্রিলের ৬.৫ শতাংশের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।
নভেম্বরে নোট বাতিলের জের এখনও কাটেনি বলেই শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি তলানি ছুঁয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, তার জন্যই এক দিকে মার খাচ্ছে নতুন লগ্নি, অন্য দিকে নগদ সঙ্কটে সাধারণ মানুষের চাহিদা এখনও তেমন বাড়েনি। কারণ হিসেবে মূলধনী পণ্যের উৎপাদন এপ্রিলে সরাসরি ১.৩% কমার দিকেই আঙুল তুলেছেন তাঁরা। নতুন বিনিয়োগের মাপকাঠি হিসেবেই ধরা হয় মূলধনী পণ্য উৎপাদনকে। আগের বছর এপ্রিলে তা বেড়েছিল ৮.১%। পাশাপাশি, ফ্রিজ-টিভি-ওয়াশিং মেশিনের মতো দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের ভোগ্যপণ্যের উৎপাদনও সরাসরি কমেছে ৬%, আগের বছর একই সময়ে যা বেড়েছিল ১৩.৮% হারে। বিশেষজ্ঞদের ইঙ্গিত, তলানিতে থাকা চাহিদাই মূল্যবৃদ্ধি নেমে আসার মূল কারণ। তা ছাড়া ডাল, শাক-সব্জির দাম কমা কৃষকদের জন্য আদৌ ভাল খবর নয় বলে মন্তব্য করেছেন ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ সুনীল কুমার সিন্হা। এই পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পের চাকায় গতি আনতে ও সাধারণ মানুষকে বাড়তি ঋণ নেওয়ার পথ করে দিতে মোদী সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে অগস্টে সুদ কমানোর জোরালো দাবি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২০১২ সালে কেন্দ্র খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হিসেব জানানো শুরু করার পর থেকে তা মে মাসেই প্রথম এত নীচে নামল। ডাল ও শাক-সব্জির দাম কমার হাত ধরে তা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি সরকারি পরিসংখ্যানে। শাক-সব্জির দাম মে মাসে নেমেছে ১৩.৪৪%, ডাল ১৯.৪৫%। পোশাক, আবাসন, জ্বালানি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও কমেছে মূল্যবৃদ্ধি। বস্তুত ২.১৮ শতাংশে নেমে আসা খুচরো মূল্যবৃদ্ধি রয়টার্সের পূর্বাভাস ২.৬০ শতাংশের চেয়েও কম।
সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসটিক্স অফিস প্রকাশিত শিল্প বৃদ্ধির পরিসংখ্যানে এ দিন জানানো হয়েছে, উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধি গত বছরের ৫.৫% থেকে এক ধাক্কায় নেমেছে ২.৬ শতাংশে। উল্লেখ্য শিল্প বৃদ্ধি হিসেব করায় উৎপাদন শিল্পের গুরুত্ব ৭৭.৬৩%। পাশাপাশি, খনন ক্ষেত্রের বৃদ্ধি ৪.২% (গত বছর ছিল ৬.৭%), বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫.৪% (গত বছর ১৪.৪%)। নোট বাতিলের ধাক্কা নতুন আর্থিক বছরেও পুরোপুরি না-কাটার ছাপই শিল্প বৃদ্ধিতে পড়েছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।