বার্তা: সাংবাদিক বৈঠকে উর্জিত পটেল। বুধবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই
প্রত্যাশা মিলিয়ে সুদ ছাঁটাইয়ের পথেই হাঁটল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই)। দশ মাসে এই প্রথম। এশিয়ায় তারাই প্রথম শীর্ষ ব্যাঙ্ক, যারা সুদ কমাল এই বছরে। ফলে রাস্তা তৈরি হল বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন ঋণে মাসিক কিস্তি কমার। তেমনই অবশ্য আয় আরও কমার আশঙ্কাও করছেন ব্যাঙ্ক, ডাকঘরের সুদ-নির্ভর মানুষরা।
স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে যে-সুদে ঋণ নেয়, বুধবার সেই রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে হল ৬%। গত ছ’বছরে সবচেয়ে নীচে। একই ভাবে, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সময়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গোনা সুদও (রিভার্স রেপো রেট) ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে হয়েছে ৫.৭৫%। অনেকেই মনে করছেন, এ বার ঋণে সুদ কমাবে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি।
ধারে সুদ আরও কমানোর সুযোগ যে ওই ব্যাঙ্কগুলির সামনে রয়েছে, তা জোরালো ভাবে মনে করে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। গভর্নর উর্জিত পটেল বলেন, এই সুযোগ রয়েছে ব্যাঙ্কের। সুদ ছাঁটাইয়ের সুবিধা গ্রাহকের কাছে পুরোপুরি না পৌঁছনোয় বরং কিছুটা উষ্মাই প্রকাশ করেন তাঁরা। ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্যের মতে, তহবিল সংগ্রহের বাড়তি খরচের ভিত্তিতে সুদ হিসেবের যে পদ্ধতি (এমসিএলআর) রয়েছে, তার কার্যকারিতা সন্তোষজনক নয়।
আরও পড়ুন: রেপো রেট কমল, কমছে বাড়ি-গাড়ির ঋণের সুদ
কেন্দ্র ও শিল্পমহলের আশা ছিল, মূল্যবৃদ্ধির হার ‘পুরোপুরি’ নিয়ন্ত্রণে থাকায় ২৫ নয়, বরং এক ধাক্কায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়নি। তাতে অবশ্য অখুশি নয় অর্থ মন্ত্রক। আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ বলেন, ‘‘রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমা বর্তমান আর্থিক অবস্থায় উপযুক্ত।’’ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পটেলের নেতৃত্বাধীন ঋণনীতি কমিটির পর্যালোচনা কেন্দ্র গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।
বদল যেখানে
রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে ৬%
রিভার্স রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে ৫.৭৫%
ঋণনীতি কমিটির ছ’জন সদস্যের মধ্যে চার জনের রায় সুদ কমানোর পক্ষে
লক্ষ্য দীর্ঘ মেয়াদে মূল্যবৃদ্ধি ৪ শতাংশে বেঁধে রাখা
চলতি অর্থবর্ষের জন্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.৩ শতাংশে অপরিবর্তিত
গত ২৮ জুলাই পর্যন্ত হিসেবে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় ৩৯,২৯০ কোটি ডলার
ঋণনীতি কমিটির পরবর্তী বৈঠক ৩-৪ অক্টোবর
এক দিকে, মূল্যবৃদ্ধি তলানিতে। অন্য দিকে, ক্রমশ বসে যাচ্ছে শিল্পের রথের চাকা। এই পরিস্থিতিতে অনেক দিন ধরেই সুদ ছাঁটাইয়ের দাবি করছিল শিল্পমহল ও বণিকসভাগুলি। আশা করেছিল, ঝাঁকুনি দিতে এক ধাক্কায় হয়তো ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমাবে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। সেই আশা না-মেটায় সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আরও বেশি হারে সুদ কমানো বাজারের পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হত।’’ ফিকি সভাপতি পঙ্কজ পটেলের মতে, অধিকাংশ সংস্থা ক্ষমতার তুলনায় কম উৎপাদন করছে। চাহিদা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। তবে তাঁর আশা, সুদ কমায় লগ্নিকারী ও ক্রেতা— উভয়ের কাছেই ইতিবাচক সঙ্কেত যাবে।
সুদ কমানো প্রায় নিশ্চিত ধরে নিয়েছিল শেয়ার বাজার। ফলে এ দিন সেনসেক্স নেমেছে মাত্র ৯৮.৪৩ পয়েন্ট। ৩৩.১৫ অঙ্ক পড়েছে নিফ্টি।