হ্যাটট্রিকেও সুদ কমবে কি, প্রশ্ন দিনভর

ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, জুন। টানা তিনটি ঋণনীতিতে রেপো রেট (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে যে সুদে ধার নেয়) কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৯ ০১:৫২
Share:

শক্তিকান্ত দাস, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর

ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, জুন। টানা তিনটি ঋণনীতিতে রেপো রেট (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে যে সুদে ধার নেয়) কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ভোটের আগে দুই ঋণনীতিতে সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে কমানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবারও তা একই হারে কমাল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। ফলে ন’বছরে এই প্রথম রেপো রেট নামল ৬ শতাংশের নীচে (৫.৭৫%)। একই হারে কমেছে রিভার্স রেপো রেটও (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির থেকে শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে সুদে ধার নেয়)। যদিও এর ফলে ব্যাঙ্কে ঋণের মাসিক কিস্তি কমবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ শীর্ষ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, কোনও ব্যাঙ্ক এখনও পর্যন্ত সুদ কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, দু’বারে মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমলেও, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি ঋণে সুদ কমিয়েছে ২১ বেসিস পয়েন্ট। তাঁর অবশ্য আশা, এ বার আগের থেকে ‘দ্রুত ও বেশি হারে’ সুদ কমাবে ব্যাঙ্কগুলি। সেই পথ খুলেই বৃহস্পতিবার শিল্প ঋণের চাহিদা তৈরি ও তার হাত ধরে আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি আনার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি।

Advertisement

শীর্ষ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, এতে রফতানিকারী ও ছোট শিল্পের সুবিধা হবে।
ব্যাঙ্কিং শিল্পের অবশ্য যুক্তি, রেপো কমলেই ঋণে সুদ কমানোয় সমস্যা রয়েছে। এমনিতে ব্যাঙ্কে ঋণের সুদ নির্ভর করে তহবিল সংগ্রহের খরচের উপর ভিত্তি করে। ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, ‘‘মূলত দু’টি উপায়ে এই খরচ কমানো যেতে পারে। এক, জমায় সুদ কমিয়ে। দুই, পরিচালন খরচ কমিয়ে।’’

কিন্তু অনেকের মতে, ব্যাঙ্ক কর্মীদের বেতন, লেনদেন-সহ বিভিন্ন পরিচালন খরচ কমিয়ে ঋণে সুদ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানো কঠিন। আবার এখন লগ্নির বিভিন্ন জায়গা খুলেছে।

Advertisement

এক ঝলকে


রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে ৫.৭৫%। ন’বছরে সর্বনিম্ন।
একই হারে কমে রিভার্স রেপো ৫.৫০%।
এই নিয়ে টানা তিন বার ঋণনীতিতে সুদ কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আরও কমানোর রাস্তা খোলা।
বাড়ানো হল মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস। চলতি অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে ৩%-৩.১%
এবং পরের ছ’মাসে
৩.৪%-৩.৭%।
২০১৯-২০ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই। ৭.২% থেকে কমে ৭%।

কয়েক দিন আগেই কোটাক মহীন্দ্রা ব্যাঙ্কের প্রধান উদয় কোটাক বলেছিলেন যে, ব্যাঙ্কের চেয়ে সুদ বেশি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে ব্যাঙ্কগুলির পক্ষে চাইলেই আমানতে সুদ কমানো সম্ভব নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। কারণ, সে ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার পুঁজি জোগাড়ে সমস্যা হতে পারে।
ব্যাঙ্ক কর্তাদের একাংশের আবার মত, রেপো রেট স্বল্প মেয়াদি ঋণের সুদ। কিন্তু তার ভিত্তিতে বাড়ি, গাড়ি, শিল্প, শিক্ষার মতো দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের সুদ কমানোয় ঝুঁকি থেকে যায়। যদিও অনেকের অভিযোগ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ালেই, ঋণে সুদ বাড়ায় ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু রেপো কমলে সুদ কমানোয় তৎপরতা দেখা যায় না। তাই ব্যাঙ্কিং মহলের ধারণা, আগামী দিনে সুদ হয়তো কমবে, কিন্তু তার হার কী হবে তা নিয়ে সংশয় থাকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন