রাজনকে ফের ভোগাতে পারে সেই টাকার দাম

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদে এসেই ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ডলারে টাকার দামকে টেনে তোলা ও বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ার ভরার চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছিলেন রঘুরাম রাজন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০৮:২০
Share:

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদে এসেই ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ডলারে টাকার দামকে টেনে তোলা ও বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ার ভরার চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছিলেন রঘুরাম রাজন। তাঁর কাজের মেয়াদ এ বছরের সেপ্টেম্বরের পরে আর বাড়বে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই তাঁকে আবার বেগ দিতে পারে টাকা। আবারও সেই সেপ্টেম্বরে।

Advertisement

রাজন শীর্ষ ব্যাঙ্কের দায়িত্ব নেওয়ার সময়েই চরম অস্থিরতার মুখোমুখি হয় টাকা। সে সময়ে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদ বাড়ানোর শঙ্কায় ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির মুদ্রার দাম পড়তে থাকে। শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি সংস্থার লগ্নি তুলে নেওয়াও ছিল তার অন্যতম কারণ। প্রতি ডলারে টাকা নেমে যায় ঐতিহাসিক নীচে, ৬৮.৮৫ ডলারে। তড়িঘড়ি অনাবাসী ভারতীয়দের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রার আমানত সংগ্রহ বাড়াতে তিন বছরের প্রকল্প চালু করেন রাজন। ফরেন কারেন্সি নন রেসিডেন্ট ব্যাঙ্ক ডিপজিট বা এফসিএনআর (বি) আমানত সংগ্রহ বাড়ানো এবং একই সঙ্গে টাকার পড়তি দামের জেরে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির ঝুঁকি কমানোই ছিল প্রকল্পের লক্ষ্য। প্রকল্পে জমা পড়া ডলারের বিনিময়ে বার্ষিক ৩.৫% সুদে ব্যাঙ্কের হাতে টাকা জোগানোর সিদ্ধান্ত নেয় শীর্ষ ব্যাঙ্ক। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল নভেম্বর পর্যন্ত। এর আওতায় ৩৪৩০ কোটি ডলার সংগ্রহ করে নজির গড়ে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলি। রিসারজেন্ট ইন্ডিয়া বন্ড (৩২০ কোটি ডলার) বা ইন্ডিয়া মিলেনিয়াম বন্ড (৫৫০ কোটি ডলার) ছেড়ে সংগৃহীত অর্থকে তা ছাপিয়ে যায়।

কাকতালীয় ভাবে তিন বছরের ওই অনাবাসী জমা প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হচ্ছে রাজনের এই দফায় কাজের মেয়াদ ফুরনোর সময়েই, আগামী সেপ্টেম্বরে। ফলে অনাবাসী আমানতকারীদের কমপক্ষে ২ হাজার কোটি ডলার ফেরাতে হবে বলে আঁচ করছেন রাজনই। সম্প্রতি টাকার দাম আবার কমতে শুরু করায় চড়ছে আশঙ্কার পারদও (এ দিন প্রতি ডলার ছুঁয়েছে ৬৮.০৫ টাকা)। কারণ ওই পরিমাণ ডলার বেরিয়ে গেলে আরও তলানিতে চলে যেতে পারে টাকা। বিশেষ করে ওই আমানত ফেরাতে হবে এমন সময়ে, যখন ফের মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদ বাড়ানো আসন্ন, বাড়ার মুখ নিয়েছে তেলের দাম, দুশ্চিন্তা বাড়ছে চিনা অর্থনীতি নিয়ে, ব্রিটেনে গণভোটের ফল কী হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

Advertisement

কেন এত সফল হয়েছিল ওই প্রকল্প? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাধারণত এই ধরনের প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট অনাবাসী ভারতীয়কে সুদ দেওয়া হয় লন্ডন আন্তঃ-ব্যাঙ্ক সুদের হারের (লিবর) চেয়ে ৪০০ বেসিস পয়েন্ট বেশি। উপরন্তু বিদেশি মুদ্রার ওঠা-পড়া থেকে বাঁচতে ব্যাঙ্ক প্রায় ৭ শতাংশ সুদে কিনে রাখে বাড়তি টাকা (কারেন্সি হেজ), যা ডলারের দাম বেড়ে গেলে আমানতকারীকে ফেরত দিতে কাজে লাগে। সেই বাবদই মাত্র ৩.৫% সুদে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা জুগিয়েছিল আরবিআই। ফলে তাদের তহবিল সংগ্রহের খরচ সাধারণ ভাবে ১২ শতাংশ থাকলেও, তা কমে দাঁড়ায় ৮.৭৫ থেকে ৯ শতাংশের মতো। প্রকল্পটির জন্য ব্যাঙ্কগুলির জোরদার প্রচার ও অনাবাসীদের এই খাতে জমার চেয়ে বাড়তি ধার বা ওভারড্রাফট নেওয়ার সুযোগের হাত ধরে ফুলে-ফেঁপে ওঠে সংগ্রহ। সেই ওভারড্রাফট আবার দেওয়া হয়েছিল চলতি সুদের চেয়ে এক শতাংশ কম হারে। ধরা যাক, কোনও অনাবাসী ১ হাজার ডলার জমা রাখলেন ভারতীয় ব্যাঙ্কে। সে ক্ষেত্রে তিনি ৯ হাজার ডলার ওভারড্রাফট নিতে পারতেন। পুরোটাই (১০ হাজার ডলার) জমা রাখতে হত ওই ব্যাঙ্কে। তিন বছর ধরে তাতে সুদ পেয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, ব্যাঙ্ক ওই ১০ হাজার ডলার ভারতে টাকায় বদলে নিয়ে ঋণ দিয়ে সুদ পেয়েছে ও ওভারড্রাফট বাবদ সুদ পেয়েছে ওই অনাবাসীর কাছ থেকে।

আমানতের মেয়াদ ফুরোলে এই সেপ্টেম্বরে ডলার ফেরাতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলিকে, যা চাপ তৈরি করতে পারে বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ারে। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তৈরি বলে ইতিমধ্যেই ভরসা দিয়েছেন রাজন। আগাম লেনদেনের বাজার থেকে ডলারও সংগ্রহ করে হাতে রেখেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতিও স্বস্তিজনক জায়গায়। বৃহস্পতিবার আরবিআইয়ের পরিসংখ্যানে ২০১৫-’১৬ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে তা নেমে এসেছে জাতীয় আয়ের মাত্র ০.১ শতাংশে, যা মাত্র ৩০ কোটি ডলার। আগের তিন মাসে ছিল ৭১০ কোটি। বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ারও ৩৬,৩৪৬ কোটি ডলার, যা আগের নজির ছাপিয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন