নোট নাকচের সিদ্ধান্ত যে অর্থনীতির গায়ে জোরালো ধাক্কা দেবে, সে কথা বলা হচ্ছে শুরু থেকেই। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের বিভিন্ন পরিসংখ্যান সামনে আসতে শুরু করায় এ বার টের পাওয়া যাচ্ছে যে, এক-এক করে সত্যি হচ্ছে সেই আশঙ্কাগুলোই। সাম্প্রতিক তথ্য দেখিয়েছে, ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের জেরে কমতে চলেছে বৃদ্ধির হার। ১৬ বছরের তলানিতে ঠেকেছে গাড়ি বিক্রি। কল-কারখানায় চাকার গতি কমেছে। নাভিশ্বাস উঠেছে ছোট শিল্পের। সেই তালিকায় এ বার নাম লেখাল আবাসন শিল্প।
শুরু থেকেই আশঙ্কা ছিল, নোট বাতিলের জেরে মুখ থুবড়ে পড়বে আবাসন শিল্প। এ বার উপদেষ্টা সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, ২০১৬ সালের শেষ তিন মাসে দেশের ৮টি বড় শহরেই মার খেয়েছে ফ্ল্যাট-বাড়ির ব্যবসা। আগের বছরের তুলনায় তা কমেছে ২২,৬০০ কোটি টাকা। সবচেয়ে মার খেয়েছে মুম্বই। কলকাতাও খুইয়েছে ৫০০ কোটি।
২০১০ সালের পরে এই প্রথম এত খারাপ হয়েছে বিক্রি। কলকাতায় বিক্রি হয়েছে ৩,৪১৩টি ফ্ল্যাট। গত বছরের তুলনায় ২১% কম। এ সবের ফলে ৩০ কোটির স্ট্যাম্প ডিউটি হারিয়েছে পশ্চিমবঙ্গও।
চাহিদায় টানের কারণে কমছে নতুন প্রকল্প ঘোষণা। রাজ্যে যতটুকু বাড়বাড়ন্ত, তা রাজারহাট ও দক্ষিণ কলকাতাতেই। চাহিদা কমার জন্য নোটের টান বড় কারণ। হাতে নগদ না-থাকায় টাকা খরচের ব্যাপারে বাড়তি সাবধানী সকলে। তা ছাড়া, ওই সময় অনেকেই মনে করছিলেন এতে বাড়ির দাম কমবে। কমবে গৃহঋণের সুদ। অপেক্ষা ছিল নতুন আবাসন আইনেরও। এই সব কারণে তখন ফ্ল্যাট কেনেননি অনেকে।
এতেই আশার আলো দেখছেন নাইট ফ্র্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ স্যমন্তক দাস। তাঁর দাবি, ‘‘নতুন আবাসন আইন ও সুদ কমার আশায় অনেকে কেনার সিদ্ধান্ত পিছিয়েছেন। নোট বাতিলের জের কাটলে বিক্রি বাড়বে। ২০০৮-’০৯ সালের মন্দার পরে যেমন হয়েছিল।’’ তবে নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই নোট বাতিলকে মূল কারণ ঠাওরাতে নারাজ। ক্রেডাই বেঙ্গলের প্রধান সুশীল মোহতার মতে, ‘‘সাময়িক ধাক্কা কাটিয়ে শীঘ্রই কেনাকাটা শুরু হবে। কম সুদের সুবিধা নিতে তৈরি হবে নতুন বাজার।’’ ঘুরে দাঁড়াতে আবাসন শিল্পের চোখ মধ্যবিত্ত বাজারে। বিজিএ রিয়েলটি থেকে সিদ্ধা গোষ্ঠী— ওই বাজার ধরতে নানা সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করছে প্রায় সব সংস্থাই।