সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের উৎস। অথচ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়লে সবচেয়ে আগে ধাক্কা খায় তারাই। আর্থিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সেই ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য বাজেটে মঙ্গলবার করছাড় সমেত কিছু সুবিধা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। যদিও এই শিল্পকে তা কতটা খুশি করল, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। নোট বাতিলের ধাক্কার পরে করছাড় পাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে এই শিল্পমহলের একাংশ যেমন খুশি, তেমনই অনেকের দাবি, ‘অচ্ছে দিন’ আসার আলো ততটা নেই বাজেটে।
নোট বাতিলের পরে দেশ জুড়ে ছোট ও মাঝারি শিল্পে বড়সড় ধাক্কা নেমে এসেছিল। চাহিদার অভাবে অনেক সংস্থাই উৎপাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। কেউ কেউ ঝাঁপও বন্ধ করে। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা বেশিরভাগই অসংগঠিত হওয়ায় উৎপাদন ধাক্কা খাওয়া কোপ পড়ে তাঁদের অনেকেরই উপর। চাকরি হারান হাজার হাজার শ্রমিক।
এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় রয়েছে তারা। বাজারে নগদের জোগান বাড়লে চাহিদা বাড়বে, সেই আশায় যেমন দিন গুনছে অনেক ছোট ও মাঝারি শিল্প, তেমনই বাজেটে কিছু না কিছু থাকবেই তাদের জন্য, আশায় ছিল তারা।
জেটলি এ দিন বলেছেন, ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক ব্যবসা করে এমন ছোট ও মাঝারি শিল্পের আয়কর ৩০ শতাংশ থেকে কমে হচ্ছে ২৫ শতাংশ। তাঁর দাবি, আয়কর দেয় এমন ৬.৯৪ লক্ষ সংস্থার মধ্যে ৬.৬৭ লক্ষই ওই ধাপে পড়ছে। শতাংশের হিসেবে যা প্রায় ৯৬ শতাংশ। করের বোঝা কমলে প্রতিযোগিতার বাজারে টক্কর দিতে সুবিধা হবে ছোট ও মাঝারি শিল্পের। এর ফলে সরকারের অবশ্য বছরে আয় কমবে ৭২০০ কোটি টাকা। করছাড়ের ঘোষণায় খুশি বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (বিএনসিসিআই)-এর প্রেসিডেন্ট স্মরজিৎ রায়চৌধুরী, ফেডারেশন অব স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ (ফসমি)-এর প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, ফেডারেশন অব অ্যাসোসিয়েশন্স অব কটেজ অ্যান্ড স্মল ইন্ডাস্ট্রি (ফ্যাক্সি)-এর প্রেসিডেন্ট হিতাংশু গুহ।
আবার ‘ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল’ সংস্থার এমডি তরুণ মল্লিকের মতে, ওই ছাড়ের পাশাপাশি ব্যক্তিগত করের হারেও যে-ছাড় (২.৫ লক্ষ-৫ লক্ষ টাকার বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশ) জেটলি ঘোষণা করেছেন, দুই মিলিয়ে লাভ হবে ছোট শিল্পের। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মতো ছোট সংস্থার ডিরেক্টরদের আয় কম। ফলে ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত কর মিলিয়ে ছাড় পেলে সার্বিক ভাবেই লাভ হবে। কর মিটিয়ে মানুষের হাতে খরচ করার মতো টাকার জোগান বাড়লে বাজারে চাহিদাও বাড়বে। ’’
ঠিক ততটা নিশ্চিত হতে পারছে না ফসমি বা ফ্যাক্সি। তাদের বক্তব্য, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল এই শিল্পের। উপর। এখনও তা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়নি। বিশ্বনাথবাবু এবং হিতাংশুবাবু দু’জনেই বলছেন, ‘‘প্রাপ্তি বলতে গেলে ওই করছাড় টুকুই। নোট বাতিলের ধাক্কা কাটাতে ছোট ও মাঝারি শিল্পকে সাহায্য করবে, এমন নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব আমরা আশা করেছিলাম যাতে ব্যবসা বাড়ে। রফতানি বাজারেও সুবিধা পায় এই শিল্প।’’
পাশাপাশি বিশ্বনাথবাবুর বক্তব্য, ছোট ও মাঝারি শিল্পের কর ছাড় আরও বেশি হবে, আশায় ছিলেন তাঁরা। আর হিতাংশুবাবুর প্রশ্ন, ‘‘যে আচ্ছে-দিন আসার কথা বলা হয়েছিল, সত্যিই কি তা এল?’’
পাশাপাশি নোট বাতিলের পরপর কেন্দ্র জানিয়েছিল, নগদের বদলে নগদহীন লেনেদন করলে বাড়তি ছা়ড় পাবে কিছু ছোট ও মাঝারি সংস্থা (যাদের ব্যবসার পরিমাণ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত)। বাজেটে এ দিন জেটলি সেই কথা জানিয়েছেন। যদিও আগেই কেন্দ্রের এই ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ছোট শিল্পের একাংশ। তাদের বক্তব্য, ওই ধরনের ছোট শিল্পের পক্ষে নগদহীন পরিকাঠামো তৈরি করা সহজ নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সকলের কাছে এই সুবিধা পৌঁছবে না।
জেটলি ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা তহবিল’ কিংবা বন্ধক ছাড়া ঋণ পাওয়ার তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধির কথাও বলেছেন বাজেটে। প্রাথমিক ভাবে খুশি হলেও বাস্তব সমস্যার কথাও তুলছে শিল্পমহল। তাদের বক্তব্য, মুদ্রা যোজনায় কম অঙ্কের ঋণ এখন যতটা সহজে মেলে, ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা তত সহজলভ্য নয়। একই সমস্যা বন্ধক ছাড়া ঋণের ক্ষেত্রেও রয়েছে। তাই শুধু তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধিই ছোট ও মাঝারি শিল্পের কাছে যথেষ্ট নয়। তা সহজ ভাবে কার্যকর না হলে লাভের লাভ পুরোপুরি মেলে না।
তবে বাজেটে জেটলি পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তার ফলে সেই সব প্রকল্পের কিছু কাজ মিলবে, আপাতত পরোক্ষ এই লাভের দিকেই তাকিয়ে ছোট ও মাঝারি শিল্পের একটা বড় অংশ।