বাজারের দিশা বদলে দিচ্ছে রিলায়্যান্স জিও-র ‘থালি’

মোবাইলে কথা বলা। তার পেটে সেঁধিয়ে থাকা ইন্টারনেট। বা বাড়ির ব্রডব্যান্ড। টেলিকম পরিষেবার দুনিয়ায় আলাদা-আলাদা ভাবে এমন ‘মেনু’ পাতে পড়ার দিন বোধহয় শেষ। রিলায়্যান্স জিও-র ঘোষণা যদি হাওয়া-মোরগ হয়, তবে গ্রাহকদের জন্য এ বার পুরোদস্তুর ‘থালি’র যুগ শুরু হতে চলেছে টেলি পরিষেবা শিল্পে।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১২
Share:

সাফল্য কামনা? শুক্রবার তিরুপতিতে মুকেশ।-এপি

মোবাইলে কথা বলা। তার পেটে সেঁধিয়ে থাকা ইন্টারনেট। বা বাড়ির ব্রডব্যান্ড। টেলিকম পরিষেবার দুনিয়ায় আলাদা-আলাদা ভাবে এমন ‘মেনু’ পাতে পড়ার দিন বোধহয় শেষ। রিলায়্যান্স জিও-র ঘোষণা যদি হাওয়া-মোরগ হয়, তবে গ্রাহকদের জন্য এ বার পুরোদস্তুর ‘থালি’র যুগ শুরু হতে চলেছে টেলি পরিষেবা শিল্পে।

Advertisement

গতকালই জিও-র প্রাথমিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন কর্ণধার মুকেশ অম্বানী। যা দেখে অনেকে বলছিলেন, এই শুরু যদি লম্বা দৌড়ের সঙ্কেত হয়, তবে দরের তীব্র লড়াই শুরু হবে এই বাজারে। পরের চব্বিশ ঘণ্টায় বাজার খুঁটিয়ে দেখে টেলিকম বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দামের লড়াই হবে ঠিকই। কিন্তু সম্ভবত স্বল্প মেয়াদে। বাজার কব্জায় রাখতে সংস্থাগুলির রেষারেষি শুধু তাতে আটকে থাকবে না। আসল যুদ্ধ বরং বাধবে সব রকম পরিষেবা এক সঙ্গে সাজিয়ে তা গ্রাহকের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে। হরেক পদ এক থালায় সাজিয়ে দেওয়ার মতো।

অর্থাৎ, মোবাইলে কথা বলা আর নেট ব্যবহার— দু’য়ের জন্য আলাদা প্রকল্প ভবিষ্যতে হয়তো আর সে ভাবে দেখাই যাবে না। এমনকী মোবাইলের পাশাপাশি বাড়ির ব্রডব্যান্ড কিংবা ইন্টারনেট-চালিত টিভির (আইপিটিভি) মতো অন্যান্য পরিষেবাও খুব সম্ভবত ঢুকে পড়বে একই প্রকল্পের আস্তিনে। বিশেষত যে সমস্ত গ্রাহক মোটা টাকার পরিষেবা কেনেন কিংবা দীর্ঘ দিন ধরে যাঁদের নাম সংস্থার খাতায়, তাঁদের ধরে রাখতে মরিয়া হবে সংস্থাগুলি। চেষ্টা করবে সব রকম পরিষেবার বেড়ায় তাঁদের ঘিরে রাখার। অনেক সময় যে ভাবে সাবান-শ্যাম্পু-বডি লোশনের ‘বান্ডিল’ বিশেষ দামে বিক্রি করে শপিং মলগুলি।

Advertisement

মোবাইলে ‘ভয়েস’ (কথা বলা) আর ‘ডেটা’ (নেট) পরিষেবা একসঙ্গে দেওয়ার প্রকল্প যে এখন অন্য সংস্থার নেই, এমনটা নয়। কিন্তু ফারাক হল, প্রথম ঘোষণায় নিজেদের যাবতীয় প্রকল্প শুধু ওই ধরনের ‘বান্ডিল’ হিসেবেই এনেছে জিও। বাজারের অভিমুখ এ ভাবে বদলাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কিছুটা সেই কারণেই।

যেমন, উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি-র কর্তা রোমল শেট্টি বলছেন, আপাতত কিছু দিন মাসুল-যুদ্ধ চলবে। কিন্তু লড়াই শুধু সেখানেই আটকে থাকবে না। সেই অন্য যুদ্ধ চলবেও দীর্ঘ দিন ধরে। মুকেশ জানিয়েছেন, দ্রুত ১০ কোটি গ্রাহকের কাছে পৌঁছনো তাঁদের লক্ষ্য। ফলে তাঁর চ্যালেঞ্জ যদি নতুনের পাশাপাশি অন্য সংস্থার গ্রাহক টানা হয়, তবে অন্য সংস্থার প্রথম লক্ষ্য নিজেদের গ্রাহক ধরে রাখা।

শেট্টির বক্তব্য, যাঁদের পরিষেবা দিয়ে বেশি আয় হয় বা যাঁরা বেশি দিন সঙ্গে রয়েছেন, এমন গ্রাহকদের ধরে রাখাই হবে পুরনো সংস্থাগুলির মূল চ্যালেঞ্জ। সে ক্ষেত্রে তাঁদের কী ভাবে আরও বেশি পরিষেবা একসঙ্গে দেওয়া যায়, তা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে মাসুল হারের চেয়েও। যেমন, মোবাইলের সঙ্গে ব্রডব্যান্ড ও ল্যান্ডলাইন জুড়ে গুচ্ছ (বান্ডলড্) পরিষেবা দেওয়া হতে পারে। এক সঙ্গে সব পরিষেবা সহজে ও ভাল গুণমানে পেলে, মাসুল হ্রাস ততটা গুরুত্বপূর্ণ না-ও হতে পারে বলে তাঁর দাবি।

উপদেষ্টা সংস্থা আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং-এর পূর্বাঞ্চলের অন্যতম কর্তা হরিশ অগ্রবাল আবার বলছেন, চড়া ধার, আয়ের গতি কমা-সহ নানা সমস্যায় এমনিতেই জেরবার টেলিকম শিল্প। তার উপর ফের ডেটা মাসুল কমলে সেই চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকে। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ তাই বলছে, দীর্ঘ মেয়াদে দামের গলাকাটা প্রতিযোগিতা সব সংস্থার পক্ষেই চালানো শক্ত। তবে ভারতের মতো সম্ভাবনাময় কিন্তু দামে স্পর্শকাতর বাজারে জিও-র ‘সাধ্যের মধ্যে আনা’ পরিষেবার সুবিধাকে স্বাগত জানিয়েছেন হরিশ।

মুকেশের আক্রমণ আগাম আঁচ করে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পরিষেবার মাসুল কমিয়েছে নানা সংস্থা। এনেছে মোবাইলে বিভিন্ন সুবিধা সমেত গুচ্ছ পরিষেবাও। কিন্তু এ নিয়ে এখনই মুখ খুলতে রাজি নয় ভোডাফোন বা আইডিয়ার মতো সংস্থাগুলি।

অবশ্য শেট্টির দাবি, যুদ্ধে শুধু যে লোকসানই গুনে যেতে হবে তা নয়। তাঁর মতে, কথা বলার পরিষেবায় যে লোকসান হবে, তার কিছুটা পুষিয়ে দেবে নেট। এখন সংস্থাগুলির ব্যবসার ২২-২৩% আসে ডেটা পরিষেবা থেকে। কম মাসুলে ভর করে আগামী ক’বছরে তা ৪০-৪৫% হবে। আর যে কম মাসুলে জিও পরিষেবা দেওয়ার কথা বলছে, তা কত দিন চালানো সম্ভব? শেট্টির মতে, ১২-১৮ মাস। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণত তারপর মাসুল পুনর্মূল্যায়ণ করে শিল্প।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন