লাল ফিতের ফাঁসে বিদেশি লগ্নি আটকে যাওয়ার পথই বন্ধ করতে চায় কেন্দ্র। আর, সেই লক্ষ্যেই এ বার সিঙ্গাপুর-আমেরিকার ধাঁচে বিদেশি নাগরিকদের আক্ষরিক অর্থেই লাল কার্পেট পেতে স্বাগত জানাতে তৈরি তারা। যার আওতায় এখন থেকে কোনও বিদেশি নাগরিকের ভারতে লগ্নি একটি নির্দিষ্ট সীমা ছাড়ালে তাঁকে ২০ বছর পর্যন্ত আবাসিকের মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাবে সিলমোহর দিল কেন্দ্র। তবে নিরাপত্তার খাতিরে পাকিস্তানি বা চিনা নাগরিকরা এই নতুন নিয়মের সুযোগ পাবেন না।
প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বা ভারতে উৎপাদন করার কর্মসূচিকে বিদেশিদের সামনে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেই এই পদক্ষেপ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংস্কারের নতুন পথে হেঁটে এই প্রকল্প অনুমোদনের কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতে বড় অঙ্কের পুঁজি ঢাললে ২০ বছর পর্যন্ত এ দেশে বসবাসের সুবিধা মিলবে বিদেশি নাগরিকদের। তাঁরা সুযোগ-সুবিধা অনেকটাই পাবেন ভারতীয়দের মতো। সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই ‘পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি স্টেটাস’ বিদেশিদের দেওয়া হবে ‘মাল্টিপ্ল এনট্রি ভিসা’ সমেত, যাতে তাঁরা একই ভিসায় অনেক বার নিজেদের দেশ থেকে ভারতে যাতায়াত করতে পারেন। বিষয়টিকে ভিসা সংক্রান্ত নিয়ম-কানুনের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
লগ্নির বহরও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে মোদী সরকার। ১৮ মাসে অন্তত ১০ কোটি টাকা লগ্নি করলে সংশ্লিষ্ট বিদেশি নাগরিক ১০ বছরের জন্য আবাসিকের পারমিট পাবেন। বিকল্প হিসেবে তিন বছর ধরে অন্তত ২৫ কোটি টাকা এ দেশে বিনিয়োগ করলেও মিলবে একই স্বীকৃতি। এই সঙ্গে আর একটি শর্ত হল প্রতি অর্থবর্ষে কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয়কে এ ধরনের লগ্নি প্রকল্পে কাজ দিতে হবে। এই পারমিটের মেয়াদ পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত বাড়ানোও যাবে। অর্থাৎ ২০ বছর পর্যন্ত আবাসিকের মর্যাদা পাবেন লগ্নিকারী।
সংশ্লিষ্ট বিদেশি নাগরিক ভারতে বসবাসের জন্য একটি জমি-বাড়ি কেনার অনুমতি পাবেন। তাঁর স্বামী/স্ত্রী, এবং সন্তান ও নির্ভরশীল ব্যক্তিরা ভারতে বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরি ও পড়াশোনা করতে পারবেন।
এত দিন পর্যন্ত এ ধরনের বিদেশি নাগরিকরা ভারতে ব্যবসা করতে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের ভিসা (বিজনেস ভিসা) পেতেন। বিদেশি লগ্নির পরিমাণ বাড়াতে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই যে ঢালাও সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, বিদেশিদের ভারতে আবাসিক বলে গণ্য করার সিদ্ধান্ত তারই অঙ্গ। দু’বছর আগে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জোর দিচ্ছে বিদেশি লগ্নি টানার উপর। সরকারের দাবি, ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি ২৩% বেড়ে ছুঁয়েছে ৫,৫৫০ কোটি ডলার বা প্রায় ৩,৭১,৮৫০ কোটি টাকা।