সাজাপ্রাপ্ত: দু’হাত, কোম়র দড়ি দিয়ে বাঁধা। শাস্তি ঘোষণার দিনে আদালতে পুলিশ পাহারায় জে ওয়াই লি। শুক্রবার সোলে। ছবি: রয়টার্স।
ঘুষ কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়েছিলেন স্যামসাং গোষ্ঠীর প্রধান জে ওয়াই লি। ছ’মাস ধরে শুনানির পরে অবশেষে জেলেই যেতে হচ্ছে তাঁকে। এ দিন দক্ষিণ কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট আদালত তাঁকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে।
ব্যবসায় সুবিধা পেতে পরিবার নিয়ন্ত্রিত সংস্থাটির শীর্ষ কর্তা তথা ধনকুবের ব্যবসায়ী লি-র বিরুদ্ধে সে দেশের প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হে ও তাঁর বন্ধুকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ছ’মাস আগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি এই বিতর্কের জেরে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অপসারিত হতে হয়ে পার্ক-কেও।
এ দিন সোলের কেন্দ্রীয় জেলা আদালত লি-কে ওই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছর হাজতবাসের নির্দেশ দেয়। আদালতে তিনজন বিচারপতির প্যানেল এ ছাড়াও স্যামসাঙের তহবিল তছরূপ, বিদেশে সম্পত্তি লুকোনো, মুনাফা গোপন করা ও ইচ্ছাকৃত ভাবে অসত্য কথা বলার অভিযোগেও তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আদালতের মতে, লি ও তাঁর পরামর্শদাতারা দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজ ও অর্থনীতির উপর বিশাল নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছেন। এবং রাজনীতি ও পুঁজির মধ্যে অশুভ গাঁটছড়াই এই মামলার মূল প্রতিপাদ্য। সরকারি কৌঁসুলিরা অবশ্য লি-র ১২ বছর করাদণ্ডের আর্জি জানিয়েছিলেন।
সালতামামি
• নভেম্বর ২০১৬: দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হে-র বন্ধু চোই সুন-সিলকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে পুলিশি হানা স্যামসাং দফতরে
• নভেম্বর ২০১৬: ক্ষমা চাইলেন পার্ক
• নভেম্বর ২০১৬: ক্ষমতার অপব্যবহারে দোষী সাব্যস্ত চোই
• ডিসেম্বর ২০১৬: পার্কের ক্ষমতা কাড়ল পার্লামেন্ট। এ নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা শুরু
• ফেব্রুয়ারি ২০১৭: ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার স্যামসাং প্রধান জে ওয়াই লি
• ফেব্রুয়ারি ২০১৭: ঘুষ দেওয়া ও তহবিল তছরুপে দোষী সাব্যস্ত লি
• মার্চ ২০১৭: পার্ককে অপসারণে সায় আদালতের
• অগস্ট ২৫, ২০১৭: দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় পাঁচ বছরের জেল লি-র
বস্তুত, রায়ের পরে সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, লি তাঁর বাবা ও ঠাকুর্দার পদাঙ্কই অনুসরণ করেছেন। বাবা লি কুন হি-কে ছোট বৈদ্যুতিন সংস্থা থেকে বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল ও মেমরি-চিপ সংস্থায় রূপান্তরের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনিও ঘুষ কাণ্ডে ১৯৯৬ সালে দোষী সাব্যস্ত হন। যদিও তাঁকে শেষ পর্যন্ত জেলে যেতে হয়নি। তেমনই তাঁর ঠাকুর্দাও ১৯৬৬ সালে তাঁর সার সংস্থার একটি ‘স্মাগলিং’-এর ঘটনায় অভিযুক্ত হন। তিনিও অবশ্য শাস্তি এড়িয়ে যান। কিন্তু তৃতীয়বার তাঁদের উত্তরসূরির ক্ষেত্রে ভাগ্য আর সুপ্রসন্ন হল না।
দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে স্যামসাঙের গুরুত্ব অনেক। তবে এখনই তাদের ব্যবসায় এই ঘটনার প্রভাব পড়বে না, মত বিশেষজ্ঞদের। তিন জন সিইও ব্যবসা দেখেন। যে কারণে লি-র গ্রেফতারি ও গ্যালাক্সি নোট৭-এ আগুন লাগার মতো সঙ্কট সামলেও ব্যবসা চালাচ্ছে স্যামসাং।