বিশ্ব বাজারে কমছে তেলের দাম। গত বছর রেকর্ড বাজেট ঘাটতির মুখে পড়েছে সৌদি আরব। এ বছরের অবস্থাও তথৈবচ। সব মিলিয়ে চাপ বাড়ছে অর্থনীতির উপর। এই অবস্থায় আর্থিক ভাবে শুধুমাত্র তেলের উপর নির্ভরশীল না-থেকে, অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিকল্প রাস্তা খুঁজতে চাইছে তারা। আর সেই লক্ষ্যেই পা বাড়াচ্ছে সংস্কারের পথে। এর প্রথম ধাপ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা অ্যারামকো-র ৫ শতাংশের কম অংশীদারি বিক্রির কথা জানিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার দেশটি। সেই অর্থের কিছুটা দিয়ে গড়া হবে ২ লক্ষ কোটি ডলারের (প্রায় ১৩৪ লক্ষ কোটি টাকা) তহবিল। অর্থের নিরিখে যা হবে বিশ্বের বৃহত্তম সরকারি তহবিল।
সোমবার আগামী ১৫ বছরের জন্য অর্থনীতির পথনির্দেশিকা ‘ভিশন ২০৩০’ প্রকাশ করেছেন সৌদি আরবের রাজা সলমন। তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সিংহাসনের দ্বিতীয় দাবিদার যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন বলেন, দেশ অতিমাত্রায় তেল নির্ভর। এর জেরে ধাক্কা খেতে পারে অর্থনীতি। গত কয়েক বছরে অন্যান্য ক্ষেত্রে সে রকম সংস্কারের পথে এগোনো সম্ভব হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অ্যারামকোর অংশীদারি বেচার কথা জানান ৩০ বছরের এই যুবরাজ। সে ক্ষেত্রে অ্যারামকোকে হোল্ডিং কোম্পানিতে পরিণত করে তাদের পরিচালন ব্যবস্থা ঢেলে সাজার কথাও জানান মহম্মদ। এই কর্মসূচি সফল হলে ২০২০-র মধ্যে দেশের তেল নির্ভরতা সম্পূর্ণ ভাবে কমবে বলেও তাঁর আশা।
সৌদির অর্থনীতি বিষয়ক কমিটির প্রধান মহম্মদের মতে, অ্যারামকোর ১% শেয়ারও যদি বেচা হয়, সে ক্ষেত্রে তা হবে বিশ্বের বৃহত্তম নতুন ইস্যু। সংস্থার মোট শেয়ার মূল্য ধরলে তা দাঁড়াতে পারে ২-২.৫ লক্ষ কোটি ডলার। তিনি বলেন, অ্যারামকো নথিভুক্ত হবে সৌদি আরবের স্টক এক্সচেঞ্জে। অর্থের জোগান বাড়াতে মার্কিন মুলুকের বাজারেও নথিভুক্ত করা হতে পারে বিশ্বের বৃহত্তম এই তেল সংস্থাকে। দিনে ১ কোটি ব্যারেলেরও বেশি তেল উৎপাদন করে এক সময়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষ পরিচালিত অ্যারামকো। ভাঁড়ার প্রায় ২৬,৫০০ কোটি ব্যারেল বা বিশ্বের ১৫%।
শুধু বিলগ্নিকরণই নয়, ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশে তেল উৎপাদনে সরাসরি লগ্নিও করতে চায় অ্যারামকো। সে ক্ষেত্রে চিন, ভারতের মতো দেশ হতে পারে তাদের গন্তব্য। একই কথা শোনা গিয়েছে ভারতের তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের মুখেও। তিনি বলেন, দহেজে পেট্রোপণ্য শোধনাগার, বিনা পরিশোধনাগার সম্প্রসারণ এবং পশ্চিম উপকূলে তেল শোধনে লগ্নি নিয়ে অ্যারামকোর সঙ্গে কথা চালাচ্ছেন তাঁরা।