কটাক্ষ সঙ্গী করেই নয়া কর জমানা চালু দেশে

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও আক্রমণাত্মক। ফেসবুকে তাঁর বক্তব্য, ‘‘১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট মাঝরাতে ভারত স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। আর ৩০ জুন মধ্যরাতে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র গভীর সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে। ফিরতে চলেছে ইন্সপেক্টর রাজ।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০৩:২৮
Share:

সূচনা: এক দেশ, এক কর। বোতাম টিপে জিএসটি চালু করছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার মধ্যরাতে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে। ছবি: পিটিআই।

সতেরো বছর!

Advertisement

প্রায় দেড় যুগের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছল জিএসটি। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁতেই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর হাতে বোতাম টেপার মাধ্যমে পণ্য-পরিষেবা কর চালু হয়ে গেল সারা দেশে। সাক্ষী থাকল সংসদের ঐতিহাসিক সেন্ট্রাল হল। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্যরাতে যেখানে কিংবদন্তি ‘ট্রিস্ট উইথ ডেস্টিনি’ বক্তৃতায় ইতিহাসে ঢুকে পড়েছিলেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবি, স্বাধীন ভারতে পরোক্ষ কর-এ এত বড় সংস্কার কখনও হয়নি। এই রাত তাই ঐতিহাসিক। যার উদ্‌যাপন এমন ঐতিহাসিক জায়গায় ছাড়া মানানসই হতও না। এই মুহূর্ত কেন্দ্র, সমস্ত রাজ্য, সব রাজনৈতিক দল এবং এ নিয়ে এর আগে কাজ করা প্রতিটি সরকারের সম্মিলিত প্রাপ্তি। উজ্জ্বল উত্তরাধিকার। একই কথা বললেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও।

Advertisement

কিন্তু তার আগে এ দিন এই নিয়ে রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, এ আসলে বরাবরের মতো মোদীর নিপুণ বিপণন, ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’। তাঁর অভিযোগ, সংস্কারের এত বড় সম্ভাবনাকেও খাপছাড়া ভাবে প্রস্তুতিহীন অবস্থায় শুরু করতে গিয়ে ‘তামাশা’য় পরিণত করেছে কেন্দ্র। কংগ্রেস বারবারই মনে করিয়েছে যে, এক সময়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জিএসটি-র বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন গলা ফাটিয়েছেন খোদ মোদীই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও আক্রমণাত্মক। ফেসবুকে তাঁর বক্তব্য, ‘‘১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট মাঝরাতে ভারত স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। আর ৩০ জুন মধ্যরাতে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র গভীর সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে। ফিরতে চলেছে ইন্সপেক্টর রাজ।’’

জিএসটি-উৎসবের জৌলুস ফিকে করে দিতে অনুষ্ঠানে আসেনি কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ অধিকাংশ বিরোধী দল। কিন্তু তা বলে আয়োজনে ত্রুটি রাখেনি কেন্দ্র। আলোয় সেজেছে সংসদ ভবন। অনুষ্ঠানে এসেছেন রতন টাটা। ছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলও। কিন্তু এই জাঁকজমক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বলেছেন, ফি-বছর সংসদের এই আলোর সাজ তোলা থাকে ১৫ অগস্ট আর ২৬ জানুয়ারির জন্য। মোদী সরকার কি তবে কর-সংস্কারকে সেই পর্যায়ে নিয়ে গেল? অনুষ্ঠানে অবশ্য প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন নীতীশ কুমার। এসেছেন শরদ পওয়ার। শেষ মুহূর্তে মত বদলে এসেছে সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ শিবিরও।

আরও পড়ুন: দাম বাড়ার সম্ভাবনা আবাসনের, বলছে শিল্প

অনুষ্ঠানে প্রণব মুখোপাধ্যায় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় স্মৃতির সরণীতে হাঁটলেন। বললেন, অর্থমন্ত্রী হিসেবে জিএসটি-র কর্মযজ্ঞে তাঁর দীর্ঘ দিন সামিল থাকার কথা। এমপাওয়ার্ড কমিটির প্রথম চেয়ারম্যান অসীম দাশগুপ্তের কাছে জিএসটি-র প্রথম পাঠ নেওয়ার কথা বললেন জেটলি। উল্লেখ করলেন জিএসটি পরিষদে যাবতীয় সিদ্ধান্ত ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়ার কথা। উঠে এসেছে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের নাম। তুলে ধরা হল জিএসটি-র দরুন সব রাজ্যের সমৃদ্ধির সম্ভাবনাও।

কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, কী লাভ? মঞ্চে প্রচারের যাবতীয় আলো তো সেই শুষে নিলেন মোদীই। তাঁর বক্তৃতা এতটাই দীর্ঘ, যে নিজের বক্তৃতা ছাঁটতে হল রাষ্ট্রপতিকে। জিএসটি চালুর কথা বলতে গিয়ে সর্দার বল্লভভাই পটেলের ভারত-জোড়ার প্রসঙ্গ টেনে আনলেন মোদী। অনেকটা নোট বাতিলের ঘোষণার ঢঙে দাবি করলেন, জিএসটি চালুর দরুন না কি কপাল ফিরবে গরিবদের। ধাক্কা খাবে কালো টাকা। বিরোধীদের প্রশ্ন, প্রচার লক্ষ্য না-হলে, স্বাধীনতা ঘোষণার ঢঙে সেন্ট্রাল হলে মাঝরাতের অনুষ্ঠান কেউ নতুন কর চালুর জন্য করে!

এমনিতে এই কর চালু হলে এক দেশ-এক করের পথে পা ফেলা যাবে। তা চালুও হল বিস্তর চড়াই-উতরাই পেরিয়ে। সেই অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় প্রথম এ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু। দানা বাঁধা কেলকার কমিটির রিপোর্টে। মাঝে দীর্ঘ ১৭ বছর লেগে গিয়েছে সমস্ত রাজ্য ও রাজনৈতিক দলের মন পেতে।

কিন্তু এ সব সত্ত্বেও জিএসটি চালুর দিনে মোদী-সরকারের জন্য অস্বস্তি অপেক্ষা করেছে রাজনীতির চৌহদ্দির বাইরেও। দেশ জুড়ে বস্ত্র ব্যবসায়ীরা ধর্মঘটে। অনেক জায়গায় দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। নতুন কর-জমানায় পা মেলানো যাবে কী ভাবে, তা নিয়ে বিস্তর ধোঁয়াশা শিল্পমহলে। দীর্ঘ মেয়াদে সুফল আশা করলেও আজ থেকে কী হবে ভেবে উদ্বিগ্ন তাঁরা।

মোদী অবশ্য আশ্বাস দিলেন, জিএসটি আসলে হবে ‘গুড অ্যান্ড সিম্পল ট্যাক্স’। গোড়ায় সামান্য হোঁচট খেতে হলেও শেষ পর্যন্ত কঠিন হবে না মানিয়ে নেওয়া। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন চশমায় সড়গড় হতেও তো দিন দু’য়েক সময় লাগে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন