ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে সুদ কমছে। আরও কমতে পারে ভবিষ্যতে। তাই সকলেই এখন বিকল্পের সন্ধানে। আর সেই বিকল্প হিসেবে প্রথমেই বেছে নেওয়া যেতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডকে।
প্রয়োজন অনুযায়ী এখানে আছে নানা ধরনের প্রকল্প। রয়েছে ঝুঁকির তারতম্য। একটু বড় মেয়াদে আয়ের দিক থেকে বেশ ভালই। এ ছাড়া ফান্ডে লগ্নির মস্ত সুবিধা, লগ্নির উপর কর রেহাই (ইএলএসএস প্রকল্পে) এবং আয়ে করছাড়। এই কারণেই কম সুদের জমানায় বেড়ে উঠছে ফান্ডে লগ্নির বহর। ফান্ডগুলিও পসরা সাজিয়ে বসেছে নতুন লগ্নি টানার জন্য। নোট বাতিলের কারণে পুরনো সব বড় নোটের বর্তমান বাসস্থান বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। এর অনেকটাই বাড়িতে পড়ে থাকত। এগুলি ব্যাঙ্কে স্থানান্তরিত করার পরে বিভিন্ন প্রকল্পের আকর্ষণ বাড়তে পারে গ্রাহকদের কাছে। এই ব্যাপারে মিউচুয়াল ফান্ড কিন্তু টেক্কা দিতে পারে অন্য অনেক প্রকল্পকে।
ইকুইটি ফান্ডে ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু এ রকম ফান্ডে ১ থেকে ৫ বছর মেয়াদে গড় রিটার্ন দেখলে চমকে উঠতে হবে। কিছু উদাহরণ সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল।
দেখা যাচ্ছে, কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও একটু বড় মেয়াদে ইকুইটি ফান্ডে লগ্নিতে বড় দাঁও মারা সম্ভব। এখানে ডিভিডেন্ডে কর নেই। কর দিতে হয় না এক বছর ধরে রাখার পরে বিক্রি করে লাভ হলেও। ফলে হু-হু করে বাড়ছে ইকুইটি ফান্ডের জনপ্রিয়তা। ২০১৬-১৭ সালের প্রথম ১০ মাসে যেখানে লগ্নি হয়েছে প্রায় ৫৫,৭০০ কোটি টাকা, সেখানে শুধু জানুয়ারিতেই ৪,৮৮০ কোটি ঢালা হয়েছে ইকুইটি ফান্ডে। নোট বাতিলের পরে ডিসেম্বরে রেখেছিলেন ১০,১০৩ কোটি টাকা। চলতি বছরে এ পর্যন্ত খোলা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩৫.৩৬ লক্ষ। সব ইকুইটি ফান্ড মিলিয়ে সম্পদের পরিমাণ (এ ইউ এম) ৪.৯৭ লক্ষ কোটি টাকা (জানুয়ারির শেষে)। কর রেহাই প্রকল্পগুলিতে জানুয়ারিতে লগ্নি হয়েছে ১,১৬৬ কোটি টাকা। পরের দু’মাসে ইএলএসএস প্রকল্পগুলিতে লগ্নি আরও বাড়ার কথা। সব ধরনের প্রকল্প মিলিয়ে এপ্রিল থেকে জানুয়ারি, এই ১০ মাসে মিউচুয়াল ফান্ডে অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৬২ লক্ষ। ফলে মোট ফোলিও-র সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫.৪ কোটি। জানুয়ারির শেষে ফান্ডের মোট তহবিলের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১৭.৩৭ লক্ষ কোটি। তবে এত আকর্ষণ সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ তথা পূর্ব ভারত দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ফান্ডে লগ্নিতে বেশ পিছিয়ে। ভারতের অন্য এলাকার মানুষ যখন মিউচুয়াল ফান্ডের ফায়দা তুলছেন, তখন এই অঞ্চলের মানুষ ব্যাঙ্ক থেকে স্টেপ আউট করে ছক্কা হাঁকাবেন না-ই বা কেন?
ঝুলিতে কত?
ইকুইটি ফান্ড ছাড়াও লগ্নি করা যেতে পারে ব্যালান্সড এবং ঋণপত্র-নির্ভর ডেট ফান্ডে। এই দু’ধরনের ফান্ডে ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম। যে-ব্যালান্সড ফান্ডের ৬৫% বা তার বেশি ইকুইটিতে লগ্নি করা হয়, তা ইকুইটি ফান্ডের মর্যাদা পায় এবং কর বাবদ সুবিধা মেলে। বড় মেয়াদে এই ধরনের ফান্ডে আয় হতে পারে ৯-১৫%। এই পরিস্থিতিতে ৭.৫% থেকে ৮% বৃদ্ধি আশা করা যায় ডেট ফান্ডে। ব্যাঙ্কের বিকল্প হিসেবে সব ক’টি প্রকল্পই ভাল।
দেশে এখন মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৪০। প্রকল্পের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার।