প্রবীণদের প্রকল্পে উঁচু সুদের শেষ সুযোগ মার্চেই

বাজেটে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ইপিএফে কর বসার গোল খেতে বসেছিল আমজনতা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের উপর প্রবল চাপ তৈরি করে তা রোখা গিয়েছিল কোনও ক্রমে। তবে গোল সেই হজম করতেই হল শেষ পর্যন্ত।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৯
Share:

বাজেটে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ইপিএফে কর বসার গোল খেতে বসেছিল আমজনতা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের উপর প্রবল চাপ তৈরি করে তা রোখা গিয়েছিল কোনও ক্রমে। তবে গোল সেই হজম করতেই হল শেষ পর্যন্ত। এ বার ধাক্কা এল পিপিএফ, কিষান বিকাশ পত্র (কেভিপি)-সহ ডাকঘর স্বল্প সঞ্চয়ের প্রায় সব প্রকল্পেই সুদ কমার মাধ্যমে।

Advertisement

কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) বাজেটে কর বসানোর প্রস্তাবে প্রতিবাদের তুমুল ঝড় উঠেছিল গোটা দেশ জুড়ে। তীব্র চাপের মুখে জেটলিকে এই প্রস্তাব গুটিয়ে নিতে হয়েছে অতি দ্রুত। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক যেতে না যেতেই আবার আঘাত এসেছে মধ্যবিত্তের ঘরে। এ বার সুদ কমানো হয়েছে স্বল্প সঞ্চয়ে। কোপ পড়েছে শিশুকন্যাদের সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্পের সুদে। বাদ যায়নি অবসরপ্রাপ্ত এবং প্রবীণদের ভরসা ডাকঘর মাসিক আয় এবং সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস প্রকল্পও। স্বনির্ভরদের বড় ভরসা পিপিএফ। আঘাত এসেছে সেখানেও। ফলে ফের প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে দেশময়। সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিভিন্ন কর্মী সংগঠন এবং বিরোধী দলগুলি। সামনে বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন। এই সময়ে কয়েক কোটি মধ্যবিত্তকে চটানোর ঝুঁকি মোদী সরকার শেষ পর্যন্ত নেবে কি না এখন সেটাই দেখার।

যদিও এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটার এখনও কোনও ইঙ্গিত দেয়নি কেন্দ্র। বরং অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দাবি, অর্থনীতিকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে কম সুদের জমানায় ফেরা জরুরি। সে কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে তাঁর যুক্তি, ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের সুদ বাজারের প্রচলিত সুদের হারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই বাজারের তুলনায় বাড়তি সুদ দিতে সরকারকে কোষাগার থেকে ভতুর্কি দিতে হয়। তা বন্ধ করতে চান তাঁরা।

Advertisement

অনেকে মনে করছেন, ডাকঘর ছেড়ে ব্যাঙ্কে যাতে মানুষ বেশি টাকা রাখেন তার জন্যই সরকারের এই পদক্ষেপ। যে দাবি ব্যাঙ্কগুলি জানিয়ে আসছিল কয়েক মাস ধরে। একটু নজর করলে দেখা যাবে, গত এক বছরে ব্যাঙ্কগুলি যতটা না সুদ কমিয়েছে তার থেকে এ বার একলপ্তে বেশি সুদ কমানো হচ্ছে কোনও কোনও ডাকঘর প্রকল্পে। যেমন, ডাকঘর মেয়াদি আমানতে (১ বছর) সুদ কমেছে ১৩০ বেসিস পয়েন্ট। ২ এবং ৩ বছর মেয়াদি আমানতে সুদ কমানো হয়েছে যথাক্রমে ১২০ ও ১০০ বেসিস পয়েন্ট। অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে ৫ বছর মেয়াদি রেকারিং ডিপোজিটে ১০০ বেসিস পয়েন্ট, পিপিএফে ৬০, কিষান বিকাশে ৯০, মাসিক আয় এবং সুকন্যা সমৃদ্ধিতে ৬০ এবং প্রবীণ নাগরিক প্রকল্পে ৭০ বেসিস পয়েন্ট করে।

উল্লেখ্য, ইপিএফে যেখানে কিছু সুদের হার ৮.৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮.৮০ শতাংশ করা হয়েছে, সেখানে পিপিএফে এতটা সুদ কমে যাওয়া একেবারেই পরস্পরবিরোধী। যদিও অর্থমন্ত্রীর যুক্তি পিপিএফে ৮.১ শতাংশ সুদ করমুক্ত। আর তা ১১ থেকে ১১.৫০ শতাংশ করযুক্ত সুদের সমান।

এখানেই শেষ নয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ডাকঘরের সমস্ত স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার হেরফের করার ব্যাপারটি বিবেচনা করা হবে প্রতি তিন মাস অন্তর। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে এপ্রিল মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও এক দফা সুদ ছাঁটাই করতে পারে। এবং সত্যিই তা যদি হয়, তবে চাপ আসবে ডাকঘরে আরও সুদ কমিয়ে দেওয়ার। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, ২০১৬ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ কমাতে পারে। অর্থাৎ তাদের আশঙ্কা আগামী দিনে মধ্যবিত্তের রাতের ঘুম চলে যাবে সুদ থেকে পড়তি আয় এবং বাড়তি ব্যয়ের অঙ্ক মেলাতে।

সরকারের সুদ কমানোর সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করে এরই মধ্যে পথে নেমেছে কংগ্রেস এবং বামেরা। ইপিএফের মতো এ বারও সরকার পিছু হটবে কি না, তা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকটা দিন। কিন্তু হাতে সময় একদম নেই। নতুন সুদের হার প্রযোজ্য হতে চলেছে ‘এপ্রিল ফুল’-এর (১ এপ্রিল) দিন থেকে। তখন যাতে বোকা বনতে না হয় তার জন্য কাজ সারতে হবে অতি দ্রুত। হাতে মাত্র ১০টি দিন। তার মধ্যে আবার পড়েছে কয়েকটি ছুটিও। হাতে টাকা থাকলে প্রবীণরা এখনই খুলে ফেলুন সিনিয়র সিটিজেন্স প্রকল্পের অধীনে একটি অ্যাকাউন্ট। ৩১ মার্চের মধ্যে খুলে ফেলতে পারলে পরের পাঁচ বছর ধরে সুদ পাওয়া যাবে পুরনো ৯.৩ শতাংশ হারেই। ৮.৪ শতাংশ সুদ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে টাকা রাখা যেতে পারে ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে। ৩১ মার্চের আগে টাকা জমা করা যেতে পারে কেভিপি, সুকন্যা সমৃদ্ধি এবং ডাকঘরের মেয়াদি আমানত প্রকল্পগুলিতেও।

যাঁরা শেয়ার বাজারে টাকা খাটান, তাঁদের চিন্তাধারা কিন্তু একদম উল্টো। ডাকঘরে সুদ কমলে ব্যাঙ্কে আমানত বাড়বে। সুবিধা হবে শিল্প ক্ষেত্রে টাকার জোগানে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে আরও সুদ কমানোর পথ প্রশস্ত হবে। এতে লাভ শিল্পের এবং তার প্রতিফলন পড়বে শেয়ার বাজারে। আবার বাজার চাঙ্গা থাকলে, তার লাভ বর্তাবে মিউচুয়াল ফান্ডের জগতেও।

সুদ নিয়ে আশা-নিরাশার দোলা এখন সারা পৃথিবীতেই। ভারত সরকার এক দিকে যখন সুদ কমাতে চাইছে, অন্য দিকে ঠিক তখনই চাইছে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক যেন সুদ না বাড়ায়। এই দফায় মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটেনি। ফলে তেজী হয়েছে ভারতের শেয়ার বাজার। বেড়েছে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামও। সোনার ব্যবসায়ীরা অবশ্য বাজেটের পর থেকে টানা ১৮ দিন ধর্মঘট পালন করেছেন গয়নার উপর (রুপো বাদে) ১ শতাংশ উৎপাদন শুল্ক বসানোর বিরোধিতায়। তবে এতে সোনা কেনাবেচা বন্ধ থাকায় বেশ কিছুটা কমেছে বিদেশ থেকে তার আমদানি। সাশ্রয় হচ্ছে বিদেশি মুদ্রা। যদিও শনিবার রাতে ওই ধর্মঘট তুলে নিয়েছেন গয়না ব্যবসায়ীরা।

এখানে আর একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া ভাল। ‘ফেলে রাখা খাজনা মোটে ভাল কাজ না’। অর্থাৎ কর যদি এখনও বকেয়া থাকে, তবে তা মিটিয়ে দিন ৩১ তারিখের আগেই। একই সময়ের মধ্যে সঞ্চয় করুন কর বাঁচানোর তাগিদে। পাশাপাশি, পুরনো হারে সুদ পেতে এবং পুরনো দরে গাড়ি কিনতে হলেও কাজগুলি সারতে হবে ওই ৩১-এর মধ্যেই। কারণ, পরের দিনটাই কিন্তু ‘এপ্রিল ফুল’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন