বাজার চাঙ্গা নয়া সম্বতের সূচনায়

শুরু হল সম্বৎ ২০৭২। এই উপলক্ষে বুধবার শেয়ার বাজারে মুরত লেনদেন একেবারে নিরাশ করল না লগ্নিকারীদের। আগের দিন ৩৭৮ পয়েন্ট কমায় অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, ২০০৮ সালের পরে ফের এ বার মুরতের দিন কমতে পারে সূচক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৫ ০২:০৮
Share:

মুরতে ঘণ্টা বাজাচ্ছেন বিএসই-র সিইও আশিস চহ্বাণ ও অভিনেত্রী ঈশা কোপ্পিকর।—পিটিআই

শুরু হল সম্বৎ ২০৭২। এই উপলক্ষে বুধবার শেয়ার বাজারে মুরত লেনদেন একেবারে নিরাশ করল না লগ্নিকারীদের। আগের দিন ৩৭৮ পয়েন্ট কমায় অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, ২০০৮ সালের পরে ফের এ বার মুরতের দিন কমতে পারে সূচক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ দিন বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স আগের দিনের থেকে প্রায় ১২৪ পয়েন্ট বেড়ে থিতু হয় ২৫,৮৬৬.৯৫ পয়েন্টে। এক সময়ে তা ২০০ পয়েন্ট পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল।

Advertisement

এই দিনও ফের উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে ইন্ডিগোর শেয়ার দর। মঙ্গলবারই শেয়ার বাজারে সংস্থার শেয়ার লেনদেন শুরু হয়। বাজারে প্রতিটি শেয়ার ৭৬৫ টাকায় নথিভুক্ত হয়ে ওই দিন এক সময়ে তা ৮৯৮ টাকায় উঠে গিয়েছিল। বাজার বন্ধের সময়ে অবশ্য তা কিছুটা কমে এলেও দাম ১৪.৬৭% বেড়ে দাঁড়ায় ৮৭৮.৪৫ টাকায়। ইন্ডিগো শেয়ারকে ঘিরে এই উৎসাহ ছিল বুধবার মুরতের দিনেও। এ দিন ইন্ডিগোর শেয়ার দর প্রায় ৬.৫৮% বেড়ে ঠেকেছে ৯২৩ টাকায়।

তবে মুরতে সূচক উঠলেও তেমন আশাবাদী নন অনেকেই। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কিন্তু ওই সব ঘোষণা বাজারকে কতটা তাতাতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

এই মুহূর্তে সকলেই তাকিয়ে আছেন ২৬ নভেম্বরের দিকে। ওই দিন সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে। যে-বিষয়টির দিকে সকলেরই নজর তা হল, এ বার পণ্য-পরিষেবা কর-সহ আর্থিক সংস্কার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিল পাশ করানো সম্ভব হয় কি না।

শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘বিশেষ করে পণ্য-পরিষেবা কর সংক্রান্ত বিলটি পাশ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। তা না-হলে বিদেশি লগ্নি টানতে যে-সব ঘোষণা অর্থমন্ত্রী করেছেন, তার অনেকগুলিই শুধু ঘোষণাতেই আটকে থাকবে। বাস্তবায়িত হবে না।’’

তবে বিহারে বিজেপির হার শেয়ার বাজারের ভাগ্য বদলে দেবে, এমনটা মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞ মহল। অজিতবাবুর পাশাপাশি ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখের মতো বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, ‘‘শেয়ার বাজারে রাজনীতিই শেষ কথা নয়। শেষ কথা হল দেশের অর্থনীতি। আর্থিক অবস্থা ভালর দিকে গেলে শেয়ার বাজারও চাঙ্গা হতে শুরু করবে।’’

অজিতবাবু বলেন, ‘‘ভারতের সব থেকে বড় শক্তি ১২০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার কারণে তার বিপুল বাজার। সেই বাজারের ক্রয়ক্ষমতাও অবজ্ঞা করার মতো নয়। তাই ভারতের উন্নয়নের সম্ভাবনার ভিত যে মজবুত জায়গায় রয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে সরকারের শুধু আর্থিক সংস্কারের কথা মুখে বললেই হবে না, তার সুফল সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছে দিতে না-পারলে এই সম্ভাবনার বাস্তব রূপায়ণ কঠিন হবে।’’

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য যে-উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তা রাজনীতির আঘাতে ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কোশিকেরও। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে রাজনীতিকরা অনেক সময়েই দেশের স্বার্থের থেকে রাজনৈতিক লাভ-লোকসানকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। তাই আমার আশঙ্কা, বিহারে বিজেপির হারের পরে সংসদে আর্থিক সংস্কারের বিলগুলি পাশ করানোর ক্ষেত্রে বাধা দিতে কোমর বেঁধে নামবেন অনেক নেতাই। বিশেষ করে পণ্য-পরিষেবা কর বিলটি আইনে পরিণত করার জন্য সমস্ত রাজ্যের সহযোগিতা প্রয়োজন। নির্বাচনে জিতে বিহারের নতুন সরকার সেই সহযোগিতা কতটা করবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।’’

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের কী করা উচিত? অজিতবাবু বলেন, ‘‘প্রথমত তাঁদের কম করেও এক বছরের মেয়াদে লগ্নির পরিকল্পনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কিনতে হবে ভাল শেয়ার। এখন বহু ভাল শেয়ার কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। পরিকাঠামো শিল্পের ভবিষ্যৎ ভাল বলে আমি মনে করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন