অর্থনীতিকে উপেক্ষা করে বছরভর দৌড় সূচকের

লগ্নিকারীদের সম্পদ বাড়ল ১১ লক্ষ কোটি

এই অবস্থায় নতুন বছর কেমন যাবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৪৯
Share:

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের আর্থিক হাল খারাপ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ২০১৯ সালে শেয়ার সূচক পৌঁছেছে রেকর্ড অঙ্কে। মঙ্গলবার বছরের শেষ দিনে বাজার পড়লেও, ২০১৯ সালে সামগ্রিক ভাবে সেনসেক্স বেড়েছে ১৪.৩৭%। নিফ্‌টির উত্থান ১২%। ফলে লগ্নিকারীদের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ১১ লক্ষ কোটি টাকা।

Advertisement

এই অবস্থায় নতুন বছর কেমন যাবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। যাঁরা আশাবাদী তাঁদের মতে, ২০২০ সালেও বাজার ১২%-১৫% বাড়বে। অন্য পক্ষের বক্তব্য, চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে শুরু হতে চলেছে নতুন বছর। তবে দু’পক্ষই মানছেন, বাজারের উত্থান নির্ভর করছে অনেকগুলি ‘যদির’ উপরে।

স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজ়ের চেয়ারম্যান কমল পারেখ বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে, সূচক রেকর্ড অঙ্কের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। প্রায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নজির। কিন্তু বাজার বাড়ছে নথিভুক্ত মাত্র ১৫% শেয়ারের দাম বৃদ্ধির হাত ধরে। বাকি ৮৫% সংস্থার শেয়ারের দামই গত এক বছরে কমেছে ২৫%-৯০%।’’

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থিক হাল ফেরাতে কেন্দ্র যে সব পদক্ষেপ করেছে, সেগুলি ভাল ফল দিলে তবেই নতুন বছরে চাঙ্গা হতে পারে বাজার। তৃতীয় ও চতুর্থ ত্রৈমাসিকের আর্থিক ফলও সূচককে প্রভাবিত করবে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের আগাম কর আদায়ের অঙ্ক দেখে অনেকেরই ধারণা, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ফল ভাল হওয়ার সম্ভাবনা কম।

পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষত আমেরিকা ও চিনের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কেমন থাকে, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ইউরোপের আর্থিক অবস্থা কেমন দাঁড়ায় বা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের বিষয়টির দিকেও তাকিয়ে লগ্নিকারীরা।

দেকো সিকিউরিটিজের কর্ণধার অজিত দে বলেন, ‘‘আমেরিকার আর্থিক হাল খারাপ হলে তার প্রভাব পড়ে ভারত-সব বিশ্ব জুড়েই। আবার মার্কিন আর্থিক অবস্থা ভাল হলে সেখানে সুদের হার বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নিকারীরা বিনিয়োগ তুলে নিয়ে গিয়ে সে দেশে ঢালতে পারে। সেটা ঘটলে কিন্তু তার বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে ভারত-সহ বিশ্বের আরও বেশি কিছু দেশের শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজারে।’’

ভারতে এখন মিউচুয়াল-ফান্ড সহ দেশীয় আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাজার অনেকটা নির্ভরশীল বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির বিনিয়োগের উপরে। ওই সব সংস্থা ২০১৯ সালে দেশের শেয়ার বাজারে ঢেলেছে ১৪৪৭ কোটি ডলার (প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা)। ঋণপত্রে তাদের লগ্নির অঙ্ক ৩৩৬ কোটি ডলার (প্রায় ৬৫,০০০ কোটি টাকা)। অজিতবাবুর মতো অনেকের মত, ওই সব বিদেশি সংস্থার লগ্নির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। অন্য কোনও দেশে বেশি মুনাফার সুযোগ পেলে তারা ভারতে থেকে লগ্নি তুলে নিতে দ্বিধা করবে না।

বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি এত ডলার ভারতে আনলেও টাকার দাম খুব মজবুত জায়গায় নেই। ২০১৮ সালের শেষে ১ ডলার ছিল ৬৯.৭৭ টাকা। ২০১৯ সালের শেষে তা ১৬৯ পয়সা বেড়ে ঠেকেছে ৭১.৩৬ টাকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন বছরে যা বাজারের পক্ষে স্বস্তির কারণ নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন