—প্রতীকী চিত্র।
ইজ়রায়েল এবং ইরানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় গত ১২ তারিখ থেকে পরপর চার দিন ভালরকম নেমেছিল ভারতীয় শেয়ার বাজারের সূচক। পরে আশঙ্কা কিছুটা থিতিয়ে আসায় গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে সেনসেক্স মোট ১৮৫০ পয়েন্ট ওঠে। শুক্রবার অবশ্য বিক্রির চাপে তা ফের প্রায় ৬০০ পয়েন্ট মাথা নামায়। সে দিন কিন্তু এশিয়া ও আমেরিকার বাজার তেজি ছিল। তবে আজ, সোমবার এশিয়ার বাজারের সূচনা ইতিবাচক হলে সেনসেক্সও একই পথে হাঁটবে বলে আশা করা যায়।
এ দিকে, দেশে সাধারণ নির্বাচনের দু’দফার ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হয়েছে। আরও পাঁচ দফা পার করে আগামী ৪ জুন ফল ঘোষণা। তা বাজারের মনমতো হলে সূচক আরও উপরে উঠবে। না হলে বড় পতনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্বাচনের ফল বাজারের আশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে এবং দেশ মজবুত সরকার পাবে ধরে নিয়ে ব্রোকারেজ সংস্থা প্রভুদাস লীলাধরের আশা, বছরের শেষাশেষি নিফ্টি পৌঁছতে পারে ২৫,৮১০ পয়েন্টে। এখন যা ২২,৪২০ অঙ্কে।
শিল্প ও ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক আর্থিক ফলাফল প্রকাশ এখন মধ্যগগনে। চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। তার চার দিনের মাথায় নির্বাচনী ফলাফল। সে ক্ষেত্রে মে মাসের শেষ দিক থেকে বাজারের ভালরকম ওঠাপড়ার মুখোমুখি হতে পারেন লগ্নিকারীরা। এখন পর্যন্ত যত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ভালর দিকেই পাল্লা ঝুঁকে। বাজারের জন্য আর একটি ভাল খবর, এপ্রিলে দেশের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের পিএমআই কম্পোজ়িট সূচক বেড়ে পৌঁছেছে ৬২.২ অঙ্কে। গত ১৪ বছরের সর্বোচ্চ।
আবার উল্টো দিকে, শিল্প এবং শেয়ার বাজার চাইলেও অদূর ভবিষ্যতে সুদ কমার সম্ভাবনা ক্রমশ কমছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রেপো রেট (যে সুদে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) বাড়িয়ে ৬.৫% করেছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। পরবর্তী ১৫ মাস তা একই জায়গায় থমকে। সম্প্রতি মূল্যবৃদ্ধির হার কমতে শুরু করায় সংশ্লিষ্ট মহলে আশা তৈরি হয়েছিল, হয়তো রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটবে। কিন্তু খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার মার্চে ৪.৮৫ শতাংশে নেমে এলেও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কিন্তু ৮.৫ শতাংশের উপরেই থেকে গিয়েছে। দেশের একটি বড় অংশে তীব্র তাপপ্রবাহ চলায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হলে তা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে এবং প্যালেস্টাইনের সমর্থনে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী সুয়েজ খাল দিয়ে যাতায়াত করা জাহাজে আক্রমণ শানানোয় সেই পথে পণ্য পরিবহণ এখন তলানিতে। জাহাজগুলি ঘুরপথ নেওয়ায় খরচ গিয়েছে বেড়ে। তার প্রভাব পড়ছে পণ্যের দামে। তার উপরে নির্বাচনের সময়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলির খরচ এবং মূল্যবৃদ্ধির উপরে তার কিছুটা প্রভাব তো আছেই।
এপ্রিলে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার কী দাঁড়ায়, তা মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জানা যাবে। সেই হারের ভিত্তিতেই ৫-৭ জুন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটি পরবর্তী দু’মাসের সুদ ঠিক করতে বৈঠকে বসবে। তবে এপ্রিলে মূল্যবৃদ্ধির হার কমার আশা ক্ষীণ। সে কারণে জুনে রেপো রেট কমবে এমন আশা অনেকেই আর করছেন না। সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের জমাতেও সুদ কমবে না এখনই।
(মতামত ব্যক্তিগত)