আপাতত ঘাড় থেকে নেমেছে ফেড জুজু। এই দফায় মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়ানো থেকে বিরত থাকায় স্বস্তি ফিরেছে শেয়ার বাজারে। তবে ডিসেম্বরে যে সুদ বাড়তে পারে, সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন ফেড কর্ণধার। এই কারণে বুধবার মার্কিন মুলুকে সুদ না-বাড়ার সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার বাজার উঠেছিল মাত্র ১%। যাই হোক, আপাতত আশঙ্কা কাটায় লগ্নিকারীরা উৎসবের মরসুমে সূচককে কিছুটা উপরে দেখতে চাইছেন।
আগামী দিনে ভারতে সূচক বৃদ্ধির ট্রিগার হতে পারে সুদ ছাঁটাই। পর্যাপ্ত বর্ষার সুবাদে খরিফ ফসল ভাল হওয়ায় এ বার খাদ্যপণ্যের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর হাত ধরে অক্টোবরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তা যদি হয় তবে নিফটি যে ৯০০০ পেরোবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কোনও সংশয় নেই। অর্থনীতির পক্ষে আর একটি ভাল খবর হল, আমদানি ভাল রকম কমে আসায় ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি নেমে এসেছে বেশ সন্তোষজনক জায়গায়। পাশাপাশি রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্যে নানা সুবিধার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই বর্ষার সুফল পৌঁছবে গ্রামে এবং শহরে। বাড়বে বহু পণ্যের চাহিদা। তার জেরে অক্টোবর-নভেম্বরে প্রকাশিত ষাণ্মাসিক কোম্পানি ফলাফল যদি মদত জোগায়, তবে এ বারের দেওয়ালিতে হয়তো আলোর রোশনাই একটু বেশিই হবে। সেনসেক্স ৩০ হাজার স্পর্শ করলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
খুচরো লগ্নিকারীদের কাছ থেকে তেমন সাড়া না-মিললেও মোটের উপর ভালই আগ্রহ ছিল প্রথম বিমা আইপিও নিয়ে। বড় মাপের ইস্যু হওয়া সত্ত্বেও আইসিআইসিআই প্রু লাইফের পাবলিক ইস্যুতে আবেদন জমা পড়েছে ১০ গুণেরও বেশি। চলতি সপ্তাহে অ্যালটমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা। কত দামে এই শেয়ার নথিভুক্ত হয়, নজর এখন সে দিকে। বড় কোনও লাভের সন্ধান দিতে পারেনি সদ্য আইপিও ফেরত এল অ্যান্ড টি টেকনোলজি সার্ভিসেস। ৮৬০ টাকায় করা ইস্যু ৯০০ টাকায় লিস্টিং হলেও দিনের শেষে দাম দাঁড়ায় ৮৬৫ টাকা।
১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করার লক্ষ্যে জোরকদমে কাজ চলছে। জিএসটি জমানায় শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ সংস্থার সংখ্যা কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে গত সপ্তাহে কলকাতায় মন্তব্য করেন মুম্বই শেয়ার বাজারের কর্ণধার আশিসকুমার চহ্বাণ। বিএসই-তে এখন ৫৫০০টি সংস্থা নথিবদ্ধ। তা আগামী ১০ বছরে ১০ হাজারে পৌঁছে যাবে বলে তাঁর আশা।
গত কয়েক মাস ধরে বাজার তেজী থাকায় ভাল রিটার্নের ব্যবস্থা করতে পেরেছে এনপিএসের (নিউ পেনশন সিস্টেম) আওতায় থাকা প্রকল্পগুলি। শুধু ইকুইটি নির্ভর প্রকল্পই নয়, ভাল বেড়েছে ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পগুলির ন্যাভ-ও। গত বছর যাঁরা এই প্রকল্পের ব্যাপারে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, তাঁরা এখন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। আসলে এই ধরনের প্রকল্পের ভালমন্দ বিচার করতে হবে একটু বড় মেয়াদের ভিত্তিতে। আগের এক বছরে (১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) নিফটির বৃদ্ধি যখন হয়েছিল ১১.১৫%, তখন এনপিএস ইক্যুইটি গড়ে বেড়েছিল ১৪.৫১% হারে। সাতটি ফান্ড ম্যানেজারের মধ্যে সব থেকে বেশি (১৬.২৯%) রিটার্নের ব্যবস্থা করে ইউটিআই রিটায়ারমেন্ট সলিউশন্স। অন্যদের বৃদ্ধির হার ছিল ১৩.১১% থেকে ১৫.৫২%। এনপিএস-এর একদম সাম্প্রতিক চিত্রটি দেখানো হল সঙ্গের সারণিতে। এনপিএসে লগ্নি করলে এখন পাওয়া যায় অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকার উপর করছাড়ের সুবিধা। আগামী দিনে এনপিএস ফান্ড ম্যানেজারের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ করার প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।
ফেড রেট আপাতত না বাড়ায় আবার তেজী হয়ে উঠেছে সোনার দরও। পাকা সোনার দর ফের ৩২০০০ ছুঁইছুঁই। হলমার্ক প্রায় ৩১০০০ টাকা। দেশে ফসল ভাল হওয়ায় আগামী দিনে সোনার চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা। এ ছাড়া সামনে আছে উৎসবের মরসুম এবং ধনতেরস। এই সব কারণে সোনার বাজার এখন চাঙ্গা থাকারই কথা। অর্থাৎ আপাতত স্বস্তি থাকবে গোল্ড ইটিএফ এবং গোল্ড বন্ডে লগ্নিকারীদের মনে। অক্টোবরে সুদ কমতে পারে এই আশায় চাঙ্গা বন্ড বাজারও। সব মিলিয়ে শেয়ার, সোনা এবং বন্ড এই তিনটি বাজারেই এখন বেশ রমরমা অবস্থা।