গত শুক্রবার জুনের শেষ লেনদেনের দিনে সেনসেক্স ৩৮৬ পয়েন্ট বেড়েছে। তাল রেখে নিফ্টিও বেড়েছে ১২৫ পয়েন্ট। মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ সূচকও বেড়েছে যথাক্রমে ২৭৫ এবং ৩০২ পয়েন্ট। সূচকের এই বৃদ্ধি লগ্নিকারীদের কিছুটা স্বস্তি দিলেও এর অর্থ এই নয় যে, বাজার শোধরাচ্ছে।
সম্প্রতি তেল ও ডলারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বাণিজ্য যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অস্থির ছিল বাজার। মনে রাখতে হবে, এই সমস্যাগুলির কিন্তু এখনও সমাধান হয়নি। শুল্ক যুদ্ধে বেশি লোকসান হয়তো চিনের হবে, কিন্তু ভারতও তা থেকে রেহাই পাবে না। এই পরিস্থিতিতে বাজারে অস্থিরতা বজায় থাকাই স্বাভাবিক।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকবে বিশ্বকাপ জ্বর। এর পরেই বাজারের পরিস্থিতি কিছুটা পরিষ্কার হবে। লগ্নিকারীদের নজর ঘুরবে মূলত দু’টি বিষয়ের উপরে—
• দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে শুরু হবে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ। যার যথেষ্ট প্রভাব থাকবে শেয়ার সূচকের উপর। ইনফোসিসের ফল জানা যাবে ১৩ জুলাই। এর পর এক-এক করে প্রকাশ হতে থাকবে বিভিন্ন সংস্থার ফলাফল।
• দেশ কতটা বর্ষা পাচ্ছে, তা-ও জানা যাবে এ মাসেই। শেষ খবর অনুযায়ী, এরই মধ্যে মৌসুমী বায়ু পৌঁছেছে দেশের প্রায় সর্বত্র। স্বাভাবিক সময়ের প্রায় ১৫ দিন আগেই। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, এ বারও স্বাভাবিক বর্ষা হবে। ফলে চাপ কমবে পণ্যমূল্যের উপর। কমতে পারে আরও সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা। শেয়ার বাজারের জন্য এটিও একটি সদর্থক ইঙ্গিত।
মাথায় রাখুন
সম্প্রতি বন্ডে সুদ বেড়েছে। বহু লগ্নিকারীও ঝুঁকছেন সে দিকে।
তবে অবশ্যই মনে রাখবেন—
• লগ্নি কতটা সুরক্ষিত। বেসরকারি বন্ড/এনসিডি-র রেটিং ‘AAA’ বা ‘AAA+’ হলে সুরক্ষা ভাল বলে ধরা হয়।
• কম সুরক্ষার জায়গায় বড় মেয়াদে টাকা রাখা বেশ ঝুঁকির।
• বন্ড বাজারে নথিবদ্ধ হলে ভাল। তাতে বিক্রি করতে সুবিধা হয়।
• করমুক্ত বন্ড কিন্তু নতুন করে কোনও সংস্থা ইস্যু করতে পারে না। সেগুলি কেনা যায় শুধু বন্ড বাজার থেকেই।
• করমুক্ত বন্ডের পাশাপাশি পিপিএফের সুদও পুরোপুরি করবিহীন। উঁচু হারের করদাতারা বছরে ১.৫ লক্ষ টাকার পুরোটাই এই অ্যাকাউন্টে জমা করলে লাভবান হবেন।
এ দিকে, যাঁরা এখনও কাগজের সার্টিফিকেটের (ফিজিকাল) মাধ্যমে শেয়ার ধরে রেখেছেন, তাঁদের গা ঝাড়া দেওয়ার সময় হয়েছে। কারণ, কয়েক মাস পরই কাগজের সার্টিফিকেটের মাধ্যমে আর শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না। ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলে ওই সমস্ত শেয়ার ডি-ম্যাট করাতে হবে। ৮ জুন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেবি এই নিয়ম পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে। নতুন নিয়ম কার্যকর হবে বিজ্ঞপ্তি জারির ১৮০ দিন অর্থাৎ ৬ মাস পর থেকে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া শেয়ারের ক্ষেত্রে অবশ্য এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। তবে যাঁরা বেনামে শেয়ার কিনে রেখেছেন তাঁদের তা বিক্রি করে টাকা উদ্ধারে অসুবিধা হতে পারে। তথ্য বলছে, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ৩২.৯%, আইটিসির ৩১.৭%, ভোল্টাসের ২৯.৭৯% এবং এমআরএফের ২৬.৩৭% শেয়ার এখনও রয়েছে কাগজের সার্টিফিকেটে। কাগজের সার্টিফিকেটে রাখা শেয়ারের মোট মূল্য প্রায় ১.২৪ লক্ষ কোটি টাকা।
অনেক দিন ঝিমিয়ে থাকার পরে কিছুটা সুদিন ফিরছে আবাসন শিল্পে। বাড়ি ও ফ্ল্যাটের দাম ফের ঊর্ধ্বমুখী। ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাঙ্কের বাড়ির দাম সংক্রান্ত সূচক এনএইচবি রেসিডেক্স এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। মার্চে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে ফ্ল্যাট, বাড়ির সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে লখনউ শহরে (৯.৪%)। কলকাতায় ৮.৫%। আগের বছর একই সময়ের তুলনায় বাড়ি ও ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে ৩৯টি শহরে।
(মতামত ব্যক্তিগত)