সূচনা: জিএসটি চালুর পরে প্রথম লেনদেন। সোমবার ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জে। ছবি: পিটিআই
দেশে পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হওয়ার দিকে দীর্ঘ দিন তাকিয়েছিল শেয়ার বাজার। অবশেষে নতুন জমানা আসায় খুশি তারা। যার প্রতিফলন হিসেবে সোমবার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির মুখ দেখল শেয়ার সূচকগুলি।
শুক্রবার মাঝরাতে এই পরোক্ষ কর ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তার পরে সোমবারই প্রথম লেনদেন হল শেয়ার বাজারে। এ দিন সেনসেক্স এক লাফে বেড়েছে ৩০০ পয়েন্ট। নিফ্টির উত্থান ৯৪ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স ৩১,২২১.৬২ অঙ্কে এবং নিফ্টি ৯,৬১৫ অঙ্কে শেষ হয়। সূচকের এই দৌড়ই প্রমাণ করল, নতুন জমানাকে স্বাগত জানাচ্ছে বাজার।
তবে এ দিন ডলারে টাকার দাম ৩০ পয়সা কমায় প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৪.৮৯ টাকা। গত এক মাসে এটাই টাকার সব চেয়ে কম দাম।
এ দিন বাজারের উত্থানে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল: প্রথমত, বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করলেও সূচক এতটা বেড়েছে। সোমবার তারা ৮০৪ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। কিন্তু তাদের বিক্রির অঙ্ককে টেক্কা দিয়ে ৯৫৮ কোটির শেয়ার কিনেছে ভারতীয় আর্থিক সংস্থাগুলি, যার সিংহভাগই মিউচুয়াল ফান্ড।
আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভে লাঠি মোদীর রাজ্যেই
দ্বিতীয়ত, এ দিন আইটিসি-র শেয়ার দর এক লাফে বেড়েছে প্রায় ৬%। এনএসইতে সংস্থার শেয়ারের দাম ৫.৯২% বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪২.৮০ টাকা। আর বিএসইতে তা ৫.৭০% বেড়ে হয়েছে ৩৪২.৩০ টাকা। এক সময়ে তাদের শেয়ার দর ৩৫৪.৮০ টাকায় উঠে যায়। যা গত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। জিএসটিতে কমছে সিগারেটের দাম। কেন্দ্র সিগারেট, পানমশলা ও তামাকের উপর অতিরিক্ত উৎপাদন শুল্ক তোলায় পুরনো কর ব্যবস্থার তুলনায় জি এস টিতে সিগারেটে কর প্রায় ৬ শতাংশের মতো কমেছে। এতে উৎসাহিত হয়ে এ দিন আইটিসি-র শেয়ার কেনেন লগ্নিকারীরা। ফলে বাড়ে তার দামও।
তৃতীয়ত, জিএসটি দেশের রেটিংয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজের ইঙ্গিত সূচকের উত্থানে ইন্ধন জুগিয়েছে।
পালে হাওয়া
• বিদেশি সংস্থার তরফে বিক্রিকে টেক্কা দিয়ে শেয়ার কিনতে ভারতীয় আর্থিক সংস্থার মাঠে নামা
• জিএসটিতে দাম কমছে সিগারেটের। আইটিসি-র শেয়ার দর এক লাফে বাড়ল প্রায় ৬ শতাংশ
• ভারতের রেটিং বাড়ার ইঙ্গিত মুডিজ-এর
তবে দীর্ঘ দিন ধরে জিএসটি বাজারের আলোচ্য বিষয় থাকলেও, তার প্রভাব শেয়ারের দামে তেমন ভাবে পড়বে না বলেই ধারণা অনেক বিশেষজ্ঞের। প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘বাজারে জিএসটির প্রভাব বিশেষ পড়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। বাজার নিজের নিয়মেই চলবে।’’
বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য মনে করেন, জিএসটির প্রভাব বাজারে সরাসরি হয়ত পড়বে না। কিন্তু এতে কিছু ক্ষেত্রে কর বাড়লেও সার্বিক ভাবে তা কমবে। ফলে মানুষের হাতে লগ্নিযোগ্য অর্থ বাড়বে। যা বাজার চাঙ্গা করতে বিশেষ সহায়ক হবে।
এ ছাড়া জিএসটি জমানায় কর ফাঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে বলেই দাবি করেছে কেন্দ্র। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর ফলে সরকারের হাতে অতিরিক্ত রাজস্ব আসবে। যার একটা অংশ পরিকাঠামো-সহ দেশের উন্নয়নে খরচ হবে। তার ইতিবাচক প্রভাবও পড়বে শেয়ার বাজারে।
তবে স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ মনে করেন, এখন শেয়ারের দাম যেখানে উঠেছে, তা অনেকটাই কৃত্রিম। তাই দামে বড় সংশোধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।