চলো পাল্টাই।
খোদ সিএমডি-র দফতর থেকে এমনই বার্তা এসেছে বিএসএনএলের সব সার্কেলের চিফ জেনারেল ম্যানেজারের কাছে। চিঠির বয়ান সোজাসাপ্টা। তা হল, সরকারি বরাতের বদান্যতার আশায় বসে থাকার দিন শেষ। বরং বাজার দখলের লড়াইয়ে ঝাঁপাতে হবে কর্পোরেট আগ্রাসনকে সঙ্গী করে। ছিনিয়ে আনতে হবে ব্যবসা। আর সেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই পুরোদমে শুরু করতে হবে প্রস্তাবিত ‘স্মার্ট সিটি’কে হাতিয়ার করে।
দেশে একশোরও বেশি স্মার্ট সিটি তৈরির পরিকল্পনা মোদী-সরকারের। ঘুরে দাঁড়াতে সেই বাজারকেই পাখির চোখ করতে চান রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির কর্ণধার। তিনি চান, শুধু টেলি বা নেট পরিষেবা দিয়ে ক্ষান্ত না থেকে আগামী দিনে ‘স্মার্ট সলিউশন প্রোভাইডার’ হিসেবে গড়ে উঠুক সংস্থাটি। যাতে যোগাযোগ সংক্রান্ত যে কোনও পরিষেবায় তাদের নাম মনে আসে। স্মার্ট সিটিতে এ ধরনের ব্যবসার রাস্তা প্রশস্ত করতে সমস্ত সার্কেলকে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে বলেছেন তিনি।
এ রাজ্যে বিএসএনএলের সার্কেল দু’টি। ক্যালকাটা টেলিফোন্স ও ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেল। প্রস্তাবিত রাজারহাট ও বিধাননগর স্মার্ট সিটি ক্যালকাটা টেলিফোন্স অঞ্চলে। হলদিয়া ও দুর্গাপুর স্মার্ট সিটি ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেলভুক্ত। ক্যালকাটা টেলিফোন্সের জিএম (বিপণন) এস এন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজারহাটের জন্য হিডকো চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। সল্টলেক পুরসভার মেয়রের সঙ্গেও দেখা করার সময় চাওয়া হয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেলের জিএম (বিপণন) অসীম কুমার সিন্হা বলেন, ‘‘সুযোগ খতিয়ে দেখতে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজ্যের সঙ্গে কথা বলব।’’
নানা আধুনিক পরিষেবা চালু করেও প্রতিযোগিতায় বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে টক্করে পিছিয়ে পড়েছে বিএসএনএল। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সরকারি বরাতের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ও গয়ংগচ্ছ মনোভাব তার অন্যতম কারণ। সিএমডি চান, সেই মরচে ধরা মানসিকতা বদলাক। জোর পাক পেশাদারিত্ব আর প্রতিযোগিতা।
সেই লক্ষ্যেই তাঁর নির্দেশ, স্মার্ট সিটি প্রকল্পে প্রযুক্তির সার্বিক উপদেষ্টা হতে নিজে থেকেই উদ্যোগী হোক সংস্থা। ঝাঁপাক সর্বশক্তি দিয়ে। এ বিষয়ে কড়া নজর রাখতেও বলা হয়েছে সার্কেলের শীর্ষ কর্তাদের। এ জন্য স্থানীয় পুরসভা বা প্রশাসনের চাহিদা বোঝা ও তাদের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে উন্নত পরিষেবার জন্য সহায়তা দেওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে সার্কেলগুলিকে।
স্মার্ট সিটির নাগরিক পরিষেবার অন্যতম বিষয় ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ বা আইওটি। বিষয়টি কেমন? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আগামী দিনে হয়তো এমন প্রযুক্তি আসবে, যেখানে প্রত্যেকের সঙ্গে নেট মারফত একটি যন্ত্রের যোগাযোগ থাকবে। যা তাঁর স্বাস্থ্যের উপর প্রতিদিন নজর রাখবে। অর্থাৎ শরীর বিগড়ালে, সেই তথ্য নেটের মাধ্যমে আপনিই চলে যাবে স্বাস্থ্য সংস্থায়। উপদেষ্টা সংস্থা আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের পূর্বাঞ্চলীয় ম্যানেজিং পার্টনার হরিশ অগ্রবাল জানান, সারা বিশ্বেই এখন স্মার্ট সিটি প্রকল্পে উপযোগী আইওটি পরিষেবায় লগ্নি করছে টেলিকম সংস্থাগুলি। বিএসএনএলও স্বাস্থ্য, জল, জঞ্জাল সাফাইয়ের মতো নানা ক্ষেত্রে তাদের পরিকাঠামো, অভিজ্ঞতা ও কেন্দ্রের ডিজিটাল কর্মসূচিতে অংশীদার হওয়ার সুবিধা এ ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে বলে তাঁর দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘চাহিদা বোঝা, বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিষেবা প্রদান ও গ্রাহকের দরজা পর্যন্ত পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে বিএসএনএল।’’