হ্যাঁ নয়, তবে না-ও বলেননি রাজন

শুধু দু’টো শব্দ। আন্তরিক আর দীর্ঘ মেয়াদি। তাতেই যেন ঘি পড়েছে থেকে যাওয়া নিয়ে জল্পনার আগুনে। শেয়ার বাজার, বিদেশি লগ্নিকারী, আর্থিক বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় এখন কান পাতলেই ফিসফাস।

Advertisement

নয়াদিল্লি

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০২:৫০
Share:

শুধু দু’টো শব্দ।

Advertisement

আন্তরিক আর দীর্ঘ মেয়াদি।

তাতেই যেন ঘি পড়েছে থেকে যাওয়া নিয়ে জল্পনার আগুনে। শেয়ার বাজার, বিদেশি লগ্নিকারী, আর্থিক বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় এখন কান পাতলেই ফিসফাস। জোরালো হচ্ছে জল্পনা— ‘তিনি থাকছেন।’ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংসেও রঘুরাম রাজনকে মাঠে দেখা যাবে বলে আশাবাদী তাঁরা।

Advertisement

বুধবার রাজনের দাবি, সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক উষ্ণ ও আন্তরিক। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে কখনও বড়সড় মতের অমিল হয়নি তাঁর। বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে সেই গবেষণা ও অধ্যাপনার জগতেই ফিরতে চান তিনি। জল্পনার আগুনে ঘি ঢালতে ওইটুকুই যথেষ্ট ছিল। শুরু হয় গুঞ্জন, তবে কি মুম্বইয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অফিসের আঠারো তলায় সেপ্টেম্বরের পরে আরও দু’বছর দেখা যাবে রাজনকে?

ক্ষমতার অলিন্দে কান পাতলে শোনা যেত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী না কি যথেষ্ট পছন্দ করেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধারকে। রাজনের বুদ্ধিমত্তা এবং অর্থনীতির কঠিন তত্ত্ব ও তথ্য সহজ ভাবে তুলে ধরার ক্ষমতার প্রশংসাও করেছেন তিনি। তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্ণধারের পদে রাজনের মেয়াদ বাড়াতে তাঁর আপত্তি থাকবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। কিন্তু তাঁদের আশঙ্কা, রাজনের ‘অকাল বিদায়ে’র জন্য বরং তৎপর হতে পারে অর্থ মন্ত্রক। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে জেটলি বারবার সুদ ছাঁটাইয়ের জন্য সওয়াল করলেও, অনেক সময় মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কায় তা করেননি রাজন। তার জন্য না কি তাঁকে অর্থ মন্ত্রকের অনেক অফিসারের চক্ষুশূল হতে হয়েছিল। দূরত্ব তৈরি হয়েছিল জেটলির সঙ্গেও। তাই এ দিন রাজন দু’জনের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্কের দাবি করায় স্বাভাবিক ভাবেই জোরালো হয়েছে তাঁর দ্বিতীয় দফার জল্পনা।

রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী সম্প্রতি রাজনের দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন বারবার। অভিযোগ করেছেন, মার্কিন স্বার্থ দেখতে গিয়েই সুদ কমাননি শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার। তাঁকে সরানোর আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও পাঠিয়েছেন। সরকার বা দল স্বামীর এই দাবির পাশে দাঁড়ায়নি। এ দিন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রাজনও। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের একাংশ বলছিল, ৪ সেপ্টেম্বর মেয়াদ শেষের পরে আর শীর্ষ ব্যাঙ্কে থাকবেন না রাজন। ফিরবেন আমেরিকায়। গবেষণা ও অধ্যাপনার বৃত্তে। সে কথা না কি চিঠি দিয়ে সরকারকে জানিয়েও দিয়েছেন তিনি। পরে অবশ্য কেন্দ্র ও রাজন উভয়েই জানান যে, এমন আলোচনা হয়নি। এই অবস্থায় শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথ স্কুলে ছুটিতে থাকা অধ্যাপক এ দিন দীর্ঘ মেয়াদে পড়ানোর চাকরিতে ফেরার কথা বলায় আশ্বস্ত লগ্নিকারীরা। তাঁদের ব্যাখ্যা, তার মানে এখনই ক্লাসরুমে ফেরার তাড়া নেই রাজনের।

থাকা-না-থাকার জল্পনা নিয়ে এ দিন রাজন শুধু বলেন, ‘‘৪ সেপ্টেম্বরের আগে নিশ্চয়ই জানতে পারবেন।’’ অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্‌হাও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ঠিক সময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু তাতে কী? সব কিছুর পরেও দিনভর চর্চা চলেছে রাজনের ভবিষ্যৎ ঘিরে!

ডি সুব্বারাও, ওয়াই ভি রেড্ডি, বিমল জালান এবং সি রঙ্গরাজন— রাজনের আগের চার গভর্নরেরই মেয়াদ বাড়িয়েছিল সরকার। কিন্তু তা নিয়ে এত আলোচনা হয়নি। অনেকে বলছেন, ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে আর রাজন রিজার্ভ ব্যাঙ্কে থাকবেন কি না, সেটিই এখন চর্চার মুখরোচক বিষয়।

অর্থনীতির নামী অধ্যাপক। সুদর্শন। আইএমএফের সবচেয়ে কমবয়সি মুখ্য অর্থনীতিবিদ। সেই হাতে গোনাদের এক জন, যাঁরা আগাম পড়তে পেরেছিলেন ২০০৮ সালের মন্দা। বক্তব্য পেশে চাঁছাছোলা রাজন সংস্কারের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো রক্ষণশীল প্রতিষ্ঠানে। মূল্যবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা বাঁধা আইন হয়েছে। উন্নত দুনিয়ার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সুদ বদলের সিদ্ধান্ত একা গভর্নরের হাতে না রেখে ঋণনীতি কমিটির হাতে দিতে পা বাড়িয়েছেন। জোর দিয়েছেন ব্যাঙ্কিং পরিষেবার প্রসারে। দ্রুত নিকেশ চেয়েছেন অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যার। এখন এ হেন ‘সম্পদ’ রাজনকে কেন্দ্রও ছাড়বে না বলে জল্পনা জোরালো হচ্ছে ক্রমশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন