প্রতীকী ছবি।
সোনারপুরের হার্ডওয়্যার পার্কে বিনিয়োগকারী টানতে আর অনলাইনে জমি নিলামের (ই-অকশন) পথে হাঁটতে চায় না রাজ্য। এর আগে তা করতে গিয়ে দু’-দু’বার সাড়া পায়নি তারা। তার বদলে জমি দিতে চায় ‘আগে এলে-আগে পাবে’ নীতিতে। শুধু তা-ই নয়। এ বার ওই ভাবে জমি দেওয়ার প্রস্তাব তোলার আগে তার দাম কমাতে চাইছে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অর্থ দফতরের কাছে আর্জিও জানানো হয়েছে তাদের তরফ থেকে।
এই হার্ডওয়্যার পার্কে জমির চড়া দাম ও তলানিতে ঠেকা চাহিদার জোড়া সমস্যার কারণে দফায় দফায় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে দরপত্র চেয়েও সাফল্য মেলেনি। প্রায় ১১ একর জমিতে তৈরি পার্কে লগ্নিকারী টানতে দু’বার ই-নিলাম করেছে রাজ্য। কিন্তু সাড়া মেলেনি। কখনও বা পুঁজি টানায় বাধা হয়েছে পরিকাঠামোর ঘাটতি, সঙ্গে আইনি জটিলতাও।
এখন সব কিছুকে পিছনে ফেলে ফের লগ্নি টানার চেষ্টায় কোমর বেঁধে নামতে ‘আগে এলে-আগে পাবে’ নীতিতে জমি দিতে চায় তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। তার আগে দর কমাতে অর্থ দফতরে আর্জিও জানিয়েছে দফতর।
এক সময়ে এখানে একর পিছু ন্যূনতম দর (রিজার্ভ প্রাইস) রাখা হয়েছিল প্রায় তিন কোটি টাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের মতে, এই দাম দেওয়ার মতো চাহিদা পশ্চিমবঙ্গের বাজারে নেই। সমস্যা সামলাতে ছ’বছর আগে যে-সব লগ্নিকারী প্রাথমিক ভাবে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, সম্প্রতি তাঁদের বিনা দরপত্রেই জমি দিতে চেয়েছিল রাজ্য। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। তাই আপাতত অর্থ দফতরে জমির দাম কমানোর আর্জি জানানো ছাড়া আর উপায় ছিল না বলে মনে করছে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর।
লগ্নি টানতে হোঁচট
• সোনারপুরে হার্ডওয়্যার পার্ক গড়তে বাম জমানায় জমি কেনে রাজ্য
• প্রকল্পের শিলান্যাস ২০১০ সালে। পরিকল্পনা ছিল ২০১৫-এর মধ্যে তা পুরোদমে চালুরও
• দু’-দু’বার অনলাইনে নিলামের মাধ্যমে জমি দেওয়ার চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি
• বারবার অভিযোগ উঠেছে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না-থাকা এবং জমির দর বেশি হওয়ার
• পাঁচ একরের একটি জমি নিয়ে বাধে আইনি জটিলতাও
• যারা প্রাথমিক ভাবে আগ্রহী ছিল, জমি নেওয়ার জন্য সম্প্রতি তাদের ফের বলেছিল রাজ্য। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি
• এখন ভাবা হচ্ছে ‘আগে এলে-আগে পাবে’ পদ্ধতিতে জমি দেওয়ার কথা। সেই সঙ্গে জমির দাম কমাতেও চাইছে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর
শুধু জমির দর বা চাহিদার ঘাটতি নয়, হার্ডওয়্যার পার্কে বিনিয়োগ আসার পথে বাধা হয়েছে আইনি জটিলতাও। বছর তিনেক আগে জোরকদমে ওই পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু তা থমকেও যায় আইনি লড়াইয়ের জেরে। প্রায় ১১ একরের পার্কে আইনি জটে জড়িয়ে যায় ৫ একরের একটি জমি। তার সঠিক দাম দেওয়া হয়নি বলে রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক জমি-মালিক। আটকে যায় লগ্নি। পরে সেই মামলার নিষ্পত্তি না-হলেও, তাকে পাশে সরিয়ে রেখে বাকি জমি বিপণনে মাঠে নামে রাজ্য।
২০১০ সালে বাম জমানায় পার্কটির শিলান্যাস হয়। জমি কেনা হয়েছিল প্রায় ৯ কোটি টাকা দিয়ে। পূর্ব পরিকল্পনা মতো ১১ একরের পার্কে ২০টি সংস্থার জায়গা হওয়ার কথা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কাজ পেতে পারেন ১০ হাজার জন। এমনকী ২০১৫ সালে পার্ক পুরোদমে চালুর পরিকল্পনাও ছিল সরকারের। নতুন করে লগ্নি টানতে রাজ্য এ বার মাঠে নামার পরে শেষমেশ তা আসে কি না, সে দিকেই এখন নজর শিল্পমহলের।