সেনসেক্সের আবার এভারেস্ট জয়। এভারেস্টের উচ্চতা ২৯,০২৮ ফুট। বৃহস্পতিবার সেনসেক্স বেলা শেষে থেমেছে ২৯,০৪৫ অঙ্কে। এটি অবশ্য মুম্বই সূচকের সর্বোচ্চ উচ্চতা নয়। ৪ মার্চ ২০১৫ সেনসেক্স ছুঁয়েছিল ৩০,০২৫ অঙ্ক। এ বারের উচ্চতা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। একটু তলিয়ে দেখলে ধরা পড়বে, এই সময়ে লার্জ ক্যাপের তুলনায় আরও বেশি বেড়েছে মিড ক্যাপ ও স্মল ক্যাপ সূচক। অর্থাৎ গোটা বাজারেই এখন রমরমা অবস্থা। বৃহস্পতিবার মুম্বই বাজারে নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট মূল্য বা মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ছাড়িয়েছে ১১২ লক্ষ কোটি টাকা। যা একটি রেকর্ড।
যে-সূচক প্রথম বারের জন্য ১,০০০ অঙ্কের মাত্রা পার করেছিল ১৯৯০ সালে, তা ২৫ বছর বাদে, ২০১৫ সালে অতিক্রম করে ৩০ হাজারের সীমা। অর্থাৎ ২৫ বছরে ৩০ গুণ। বহু শেয়ার এর থেকেও অনেক বেশি বেড়েছে এই মেয়াদে। মাঝে-মধ্যে ছোট, মাঝারি ও বড় পতন হলেও দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার সূচক কিন্তু সব সময়েই আগের রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এই জন্য সোনা নয়, শেয়ারকেই শ্রেষ্ঠ সম্পদ-শ্রেণি বা ‘অ্যাসেট ক্লাস’ বলা হয়। ২৫ বছরে সূচকের দৌড় দেখানো হয়েছে সঙ্গের সারণিতে। ২০১৪ সালের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ওই বছর ২১ হাজারের মাত্রা থেকে কয়েক মাসের মধ্যে তা উঠে এসেছিল ২৮,০০০ অঙ্কে। অর্থাৎ বেড়েছিল কম-বেশি ৩৩%। এই কারণেই শেয়ারের এত আকর্ষণ।
বাজার এতটা চাঙ্গা হয়ে ওঠায় সাময়িক লোকসান ঝেড়ে তরতাজা হয়ে উঠেছে মিউচুয়াল ফান্ডের জগৎও। গত ৩-৪ মাসে তরতরিয়ে ন্যাভ বেড়েছে বহু প্রকল্পের। বেড়েছে ইকুইটি ইটিএফ-এর বাজার দরও। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা শেয়ার বাজারে খাটানোর সিদ্ধান্তে যাঁদের ‘ত্রাহি ত্রাহি’ রব উঠেছিল, তাঁরা লগ্নির উপর প্রথম বছরের লাভ দেখলে হাসবেন, না মুখ ভার করে থাকবেন— তা বুঝতে একটু সময় নেবেন! ভাল লাভের হদিশ দিয়েছে নিউ পেনশন সিস্টেম বা এনপিএস-এর অধীন প্রকল্পগুলিও।
বাজার এতটা ওঠার পিছনে যে-সব শক্তি কাজ করেছে সেগুলি হল:
• ভাল বর্ষা
• জিএসটি বিল সংসদে উতরে যাওয়া
• প্রথম তিন মাসে ভাল কোম্পানি ফলাফল
• মার্কিন মুলুকে এখনই সুদ না-বাড়ার সম্ভাবনা
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও কোম্পানি ফলাফল ভালই হবে, আশা বাজারের। গাড়ি ও মোটরবাইক শিল্পে যথেষ্ট বিক্রি বাড়া এর ইঙ্গিত দেয়। অগস্টে গাড়ি বিক্রি বেড়েছে ১৬.৭%। এতটা তেজী বাজারে কিছুটা বেসুরো লেগেছে প্রথম সারির কয়েকটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে। ব্রেক্সিটের প্রভাবে এদের শক্তিক্ষয় হতে শুরু করেছে।
সূচক এতটা ওঠার পরে বিক্রির চাপে কিছুটা সংশোধন দেখা গিয়েছে শুক্রবার। তবে এই পতন সাময়িক বলেই মনে করা হচ্ছে। বাজারের অনুকূলে থাকা শক্তিগুলি যে-ভাবে জমাট বাঁধছে, তাতে ৩০ হাজারের সীমা পেরিয়ে সর্বকালীন রেকর্ড করতে সেনসেক্সকে খুব বেশি বেগ পেতে হবে বলে মনে হয় না। অর্থাৎ ভাল শেয়ার ধরে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যে-সব শেয়ার এই বাজারেও তেমন বাড়েনি এবং যে-সব সংস্থা ব্যবসায়িক দিক থেকে ভাল করছে না, সেগুলি থেকে বেরোনোর কথা ভাবা যেতে পারে। লগ্নি করা যেতে পারে ভাল নতুন ইস্যুতে। স্থির আয়ের দিকে লক্ষ থাকলে বন্ড ইস্যুতে নজর রাখা উচিত হবে। বাজারে একনাগাড়ে আসছে একগুচ্ছ বন্ড ও ডিবেঞ্চার ইস্যু।
বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলির তুলনায় জীবনবিমা নিগমের (এলআইসি) আর্থিক ফলাফল এ বার অনেকটাই ভাল হয়েছে। ২০১৫-১৬ সালে এলআইসি-র মুনাফা যেখানে ৩৮% বেড়েছে, সেখানে ২২টি বেসরকারি বিমা সংস্থার গড় লাভ কমেছে ১৫%। আইসিআইসিআই প্রুডেন্সিয়ালের লাভ বেড়েছে মাত্র ১%। ইউলিপ সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনের কারণেই বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলির লাভ কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রিমিয়াম না-চালানোর কারণে এখন আর পলিসি বাতিল করা যায় না। লাভের সঙ্গে যুক্ত হয় না আগে দেওয়া প্রিমিয়াম।
কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে শেয়ার ছাড়তে শুরু করবে বিমা সংস্থাগুলিও। চলতি মাসের ১৯ তারিখে আইপিও নিয়ে বাজারে আসার কথা আইসিআইসিআই প্রু লাইফের। মূল্য-বন্ধনী ধার্য হয়েছে ৩৩০-৩৩৪ টাকা। বাজার থেকে এরা সংগ্রহ করতে চায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা।
চড়া বাজারে মারুতি-সুজুকির শেয়ারের দাম ৫০০০ টাকা পেরিয়ে যাওয়ায় কথা চলছে দেশের পয়লা নম্বর গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার শেয়ার বিভাজন নিয়ে। শেয়ারের ফেস ভ্যালু বা মূল দাম ১০ টাকার থেকে কমানো হলে তা অনেকেরই নাগালের মধ্যে আসবে। ফলে বাড়বে চাহিদা। দামও বাড়বে বিভাজিত শেয়ারের।
লগ্নি বাড়ায় এবং শেয়ার বাজার শিখরে ওঠায় মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের সামগ্রিক সম্পদ সর্বকালীন রেকর্ড জায়গায় পৌঁছেছে অগস্টের শেষে। ওই সময়ে তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫.৬৩ লক্ষ কোটি টাকা।