সঙ্কটে ছোট চা বাগান, ফের সক্রিয় দালাল-চক্র

নোট-কাণ্ডের গেরোয় উত্তরবঙ্গের ছোট চা বাগান। দালালদের রুখতে টি বোর্ড বা চা পর্ষদের সহায়তায় স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়েছিলেন ছোট চা চাষিরা। নোট বাতিল, তার জেরে খুচরোর সঙ্কট এবং ব্যাঙ্ক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা ফের সেই ফড়ে-রাজের মুখেই ঠেলে দিয়েছে ছোট চা বাগানের শ্রমিক-মালিক-বিক্রেতাদের।

Advertisement

অনির্বাণ রায় ওসব্যসাচী ঘোষ

জলপাইগুড়ি ও মালবাজার শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩০
Share:

নোট-কাণ্ডের গেরোয় উত্তরবঙ্গের ছোট চা বাগান।

Advertisement

দালালদের রুখতে টি বোর্ড বা চা পর্ষদের সহায়তায় স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়েছিলেন ছোট চা চাষিরা। নোট বাতিল, তার জেরে খুচরোর সঙ্কট এবং ব্যাঙ্ক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা ফের সেই ফড়ে-রাজের মুখেই ঠেলে দিয়েছে ছোট চা বাগানের শ্রমিক-মালিক-বিক্রেতাদের। তাঁদের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ এনে আরও উদ্বেগ জানানো হয়েছে যে, নগদের সমস্যায় ছোট চা বাগিচার শীতকালীন পরিচর্যাও আটকে গিয়েছে। ফলে বছরভর উৎপাদন মার খাবে বলে আশঙ্কা।

বস্তুত নোট বাতিলের জেরে কার্যত থমকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরি বিলিও। চা পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘চা চাষিরা প্রতিদিন আমাদের ফোন করছেন। সমস্যার কথা জানি। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।’’

Advertisement

ছোট চা বাগানের অন্যতম সমস্যা পাতা বিক্রি। চা পাতা কিনে যারা প্রক্রিয়া করে, সেই বটলিফ কারখানা অনেক সময়ে ছোট চা বাগানের কাছ থেকে বেশি পাতা নিতে চায় না। পাতা নিলেও সঠিক দাম না-দেওয়ার অভিযোগ আগেও ছিল। সমস্যা এড়াতেই চা পর্ষদের পক্ষ থেকে কয়েক বছর আগে ছোট চা চাষিদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে দেওয়া হয়। এই ধরনের একাধিক গোষ্ঠী পাতা বিক্রি করে বটলিফ কারখানা থেকে পাওয়া টাকা সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে নিচ্ছিল। যার জেরে দালাল রাজের দাপট কমতে থাকে বলে দাবি জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তীর। তিনি জানান, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে চা চাষিরা ভালই দাম পাচ্ছিলেন। কিন্তু নোট বাতিলের পরে ব্যাঙ্ক লেনদেনে বিধিনিষেধের জেরে গোষ্ঠীর সদস্যরা দরকার মতো টাকা তুলতে পারছেন না। রুজি-রুটির জন্য তাই অনেকেই বাকিতে বিক্রি না-করে দালালদের হাতে পাতা তুলে দিচ্ছেন।’’

একনজরে

• উত্তরবঙ্গে ছোট চা বাগানের সংখ্যা: ৪০ হাজার

• মোট জমির পরিমাণ: ১ লক্ষ ১০ হাজার একর

• শ্রমিক সংখ্যা: ১ লক্ষ

• উৎপাদন: উত্তরবঙ্গের মোট উৎপাদনের ৪২%

জলপাইগুড়ি জেলায় চা চাষিদের ৬৯টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে, উত্তরবঙ্গ জুড়ে গোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় দেড়শো। একটি ছোট গোষ্ঠীরও প্রতি সপ্তাহে অন্তত ২ লক্ষ টাকা লাগে। অথচ ব্যাঙ্কের নিষেধাজ্ঞার জেরে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে সপ্তাহে ৫০ হাজারের বেশি টাকা তোলা যাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী গোষ্ঠীগুলির সবই আবার সেভিংস অ্যাকাউন্ট। সব মিলিয়ে গত দু’সপ্তাহে সদস্যদের হাতে প্রায় কিছুই তুলে দিতে পারেনি গোষ্ঠীগুলি। অভিযোগ, সে কারণেই সংসার চালাতে দালালদের কাছে পাতা বিক্রি শুরু করেছেন অনেকে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কুকুরজান এলাকায় ৭২ জন ছোট চাষি মিলে গড়া একটি গোষ্ঠীর অন্যতম কর্তা পার্থ দেবনাথ বলেন, ‘‘বটলিফ কারখানা তো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে দিয়েছে। সে টাকা আমরা তুলে সকলের হাতে দেব কী করে?’’ প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে জমে রয়েছে। কিন্তু তুলতে পারছে না গোষ্ঠী।

দালালরা কিন্তু সরাসরি পাতা কিনে চাষিদের হাতে নগদ দিয়ে দিচ্ছে। ন্যায্য দামের থেকে অনেক কম পেলেও নগদের টানে বাধ্য হয়েই দালালদের দিকেই ঝুঁকছেন তাঁরা।

পাাশাপাশি, চা বাগিচার শীতকালীন পরিচর্যার অঙ্গ হিসেবে সেচের পাম্পসেট লাগিয়ে পাইপ দিয়ে ফোয়ারার মত জল ছড়াতে হবে বাগিচায়। বিঘা প্রতি অন্তত ২ হাজার টাকা এককালীন প্রয়োজন। নোটের জটে আটকে গিয়েছে সব খরচই।

• শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার পুরো টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তোলা যাচ্ছে না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন