শেয়ার বাজার, সোনা ও জমি-বাড়িকে টেক্কা দিয়ে এ বার লগ্নির তালিকায় প্রথম সারিতে উঠে আসছে স্টার্ট-আপ বা সদ্য তৈরি সংস্থা। রতন টাটা, নারায়ণমূর্তি, মোহনদাস পাই থেকে শুরু করে আমবিত্তবান। সকলেরই লগ্নির পছন্দের গন্তব্য স্টার্ট-আপ।
শুধু লাভের আশা নয়। ছোট থেকে বড় হওয়ার উত্তেজনাও রসদ জোগাচ্ছে স্টার্ট-আপ দুনিয়াকে। ঝুঁকি মেনেই পুঁজি ঢালছেন কোটিপতিরা। বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বইয়ে বিত্তবানদের মধ্যে লগ্নির এই পথ আগেই পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে। প্রথা হল, হয় সরাসরি নতুন সংস্থায় পুঁজি ঢেলে কিছু শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নেওয়া, বা ‘ভেঞ্চার ফান্ড’ (উদ্যোগ-পুঁজি) সংস্থায় লগ্নি করে স্টার্ট-আপ বিপ্লবে যোগ দেওয়া। এই নতুন সুযোগ নিতে এ বার এগিয়ে আসছে কলকাতাও।
কলকাতায় বছর তিনেক আগে তৈরি হয়েছে স্টার্ট-আপে লগ্নিকারীদের সংগঠন ক্যালকাটা এঞ্জেল নেটওয়ার্ক। তৈরি হয়েছে ট্রাইটন ইনভেস্টমেন্টস, প্রাইমার্ক আইভেঞ্চারের মতো উদ্যোগ-পুঁজি সংস্থা। এই তালিকায় নতুন সংযোজন বিডিজি গ্লোবাল। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা গ্লোবসিনের প্রধান বিক্রম দাশগুপ্তের দাবি, নতুন এই সংস্থা শুধুমাত্র স্টার্ট-আপের জন্যই তৈরি হয়েছে। ১০ কোটি টাকার উদ্যোগ-পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে এই সংস্থা। ইতিমধ্যেই ১৫টি সংস্থায় ৩ কোটি টাকা ঢেলেছেন বিক্রমবাবু। লগ্নির পরিমাণ ২০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: অর্থনীতি এগোবে, ইঙ্গিত সমীক্ষায়
ভিন্ রাজ্যের উদ্যোগ-পুঁজি সংস্থায়ও টাকা ঢালছেন এ রাজ্যের লগ্নিকারীরা। মুম্বইয়ের সংস্থা ইউনিকর্ন ইন্ডিয়া ভেঞ্চার্স সংস্থার প্রাথমিক তহবিলের ২৫% জুগিয়েছেন রাজ্যের বিনিয়োগকারীরা। সংস্থার অন্যতম কর্তা ভাস্কর মজুমদারের দাবি, দিল্লি-মুম্বই শহরের মতোই লগ্নির এই নতুন সুযোগ নিয়ে উৎসাহী কলকাতা। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দফায় কলকাতা থেকে ১২ কোটি টাকা উঠেছে। এর মধ্যে বিত্তবান ব্যক্তিদের পাশাপাশি রয়েছে সিমপ্লেক্স-এর মতো সংস্থাও।’’
ঝুঁকির কথা মেনে নিচ্ছেন প্রাইমার্ক আইভেঞ্চারের প্রধান সিদ্ধার্থ পাসারি। তবে সাফল্যের কথা মাথায় রেখেই ঝুঁকি নিতে পিছপা নন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘সব স্টার্ট-আপ সংস্থাই লাভের মুখ দেখবে না। কিন্তু তবুও নতুন ব্যবসার ভাবনা-চিন্তা ও মেধা-সম্পদ দেখেই লগ্নি করা হয়। কারণ একটির সাফল্যও বাজিমাৎ করতে পারে।’’ ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা-সহ ১২টির বেশি সংস্থায় পুঁজি ঢেলেছে তাঁর সংস্থা।
সাধারণত ১৫-২০% শেয়ারের বদলে তিন থেকে আট বছরের জন্য টাকা ঢালেন লগ্নিকারীরা। পুঁজি জোগানোরও বিভিন্ন ধাপ আছে। প্রথম পর্যায়ে টাকার অঙ্ক কম থাকলেও ঝুঁকির পরিমাণ সব চেয়ে বেশি থাকে। পরবর্তী ধাপে সংস্থার ব্যবসায়িক মডেল লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনার ভিত্তিতে টাকা ঢালা হয়। তবে সাফল্য তখনই আসে, যখন অন্য সংস্থা মোটা দামে কিনে নেয় স্টার্ট-আপকে। অথবা বাজারে শেয়ার ছাড়ার মতো পরিস্থিতি অর্জন করতে পারে সংস্থা। বিনিয়োগকারীর লাভের অঙ্ক সে ক্ষেত্রে অনেক গুণ বেড়ে যায়।