মন্দ কাটেনি বছরের প্রথম সপ্তাহটা।
ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ কমতে পারে এমন শঙ্কা ছিল অনেকেরই মনে। সুখের কথা, এই দফায় সুদ কমেনি। অর্থাৎ পুরনো হারেই সুদ চালু রইল পিপিএফ (৮ শতাংশ), প্রবীণ নাগরিক প্রকল্প (৮.৫ শতাংশ), সুকন্যা সমৃদ্ধি (৮.৫ শতাংশ), এমআইপি (৭.৭ শতাংশ), এনএসসি (৮ শতাংশ) ইত্যাদির মতো জনপ্রিয় প্রকল্পে। এই সব সুদের হার বর্তমান ব্যাঙ্ক সুদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। নতুন বছরের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী প্রবীণ নাগরিকদের ১০ বছরের জন্য ৮ শতাংশ সুদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই ঘোষণায় অবশ্য প্রবীণরা তেমন আপ্লুত হতে পারেননি। কারণ ৫ বছর মেয়াদি সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিমে এখনও সুদ পাওয়া যাচ্ছে ৮.৫ শতাংশ হারে। ৫ বছরের শেষে এই প্রকল্পের মেয়াদ আরও ৩ বছর বাড়িয়ে নেওয়া যায়। এ ছাড়া করযুক্ত সরকারি বন্ডেও এখন সুদ দেওয়া হচ্ছে ৮ শতাংশ হারে।
সুখের কথা আরও আছে। এক দিকে জমায় যেমন সুদ কমেনি, অন্য দিকে ঋণে কিন্তু সুদ কমেছে বেশ খানিকটা। সুদ কমানোর কথা প্রথম ঘোষণা করে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। দেশের বৃহত্তম এই ব্যাঙ্ক নতুন বছরের গোড়ায় সুদ ছাঁটাইয়ের পরপরই ঋণে সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় আরও বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক সুদ কমিয়েছে ২০ থেকে ১৪৮ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত। এতে গাড়ি ও বাড়ির ঋণে সুদ অনেকটাই কমবে। সুবিধা হবে সাধারণ মানুষের। উপকৃত হবে এই দুই শিল্পও। শিল্পেও বাড়বে ঋণের চাহিদা। ব্যাঙ্কগুলির ঘরে হঠাৎ বেড়ে ওঠা বিপুল পরিমাণ তহবিলের একাংশ ঋণের মাধ্যমে বাজারে ফিরবে। ফলে বাড়বে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। উপকৃত হবে ছোট এবং মাঝারি শিল্প।
আর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে অক্টোবর-ডিসেম্বর তিন মাসের কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের পালা। নোট বাতিলের প্রভাবে বিভিন্ন শিল্পে যতটা লোকসানের আশঙ্কা করা হয়েছিল, সম্ভবত ততটা হবে না। একটি সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, নোট বাতিলের তেমন বড় প্রভাব পড়বে না এই ফলাফলে। এই কারণেই শেয়ার সূচক সে ভাবে নীচে নামছে না। আশা, নোট বাতিলের প্রতিকূল প্রভাব মার্চের মধ্যেই কেটে যাবে। এর পরপরই ধীরে ধীরে শক্তি ফিরে পাবে অর্থনীতি। এই কথা মাথায় রেখে গুণগত মানে ভাল শেয়ার এবং মিউচুয়াল প্রকল্পে লগ্নির পরামর্শ দিচ্ছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। লগ্নি করা যেতে পারে ভাল নতুন ইস্যুতেও। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে বাজারে আসবে বেশ কিছু ভাল ইস্যু। এর মধ্যে থাকবে মুম্বই এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন ইস্যু। পাশাপাশি আসবে বেশ কয়েকটি বন্ড এবং ডিবেঞ্চার। একটু বেশি সুদের আশায় পা বাড়ানো যেতে পারে এই সব ইস্যুর দিকে। তবে অবশ্যই গুণগত মান এবং রেটিং যাচাই করে।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে ফল প্রকাশ। ১ ফেব্রুয়ারি পেশ হবে কেন্দ্রীয় বাজেট। একই মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণনীতির পর্যালোচনা করবে। অর্থাৎ বাজারে টানটান উত্তেজনা থাকবে প্রায় দু’মাস ধরে। দেখতে হবে ‘অচ্ছে দিন’-এর সন্ধান পাওয়া যায় কি না। তাই সজাগ থাকতে হবে লগ্নিকারীদের।
তবে অর্থনীতিতে মন্থরতা স্পষ্ট। মূল পরিকাঠামো শিল্পের বৃদ্ধি অক্টোবরের ৬.৬% থেকে কমে নভেম্বরে হয়েছে ৪.৯%। এ সময়ে অবশ্য বেড়েছে কয়লা (৬.৪%), রাসায়নিক সার (২.৪%) ও বিদ্যুৎ (১০.২%) উৎপাদন। মিশ্র ফলাফল লক্ষ করা গিয়েছে গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রেও। মারুতি, হুন্ডাই, এম অ্যান্ড এম, ফোর্ডের বিক্রি কমলেও বেড়েছে টাটা মোটরস (৩৫%), রেনো (৯.২%), নিসানের (২১%)।
ডিসেম্বরে ভাল রকম বেড়েছে কর সংগ্রহ। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর মিলিয়ে ডিসেম্বরে জমা পড়েছে ৯১,১৫৭ কোটি টাকা। নভেম্বরে সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৩৬,০৬১ কোটি টাকা। সরকারের আশা, যে-পরিমাণ বাতিল নোট ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে, তার একটি অংশ লুকনো আয় হিসেবে ঘোষিত হবে এবং তার উপর কর এবং জরিমানা বাবদ সরকারের ঘরে জমা পড়বে মোটা টাকা। এই খাতে কর আদায় বাড়লে সরকারের পক্ষে অন্যত্র করছাড় দেওয়া সহজ হবে।
বাজারে নগদের জোগান বাড়ছে। স্টেট ব্যাঙ্কের আশা, কিছু দিনের মধ্যেই অর্থনীতি ছন্দে ফিরবে। ব্যাঙ্কের অনুমান, চলতি মাসেই বাতিল টাকার ৬৭ শতাংশ নতুন নোট বাজারে এসে যাবে। ফেব্রুয়ারির শেষে নতুন নোটের জোগান পৌঁছে যেতে পারে ৮০ থেকে ৮৯ শতাংশে। তবে সম্ভবত বাতিল নোটের পুরোটা ফেরানো হবে না। বর্ধিত ডিজিটাল লেনদেন সেই জায়গা পূরণ করবে বলেই দাবি নরেন্দ্র মোদী সরকারের।