আগ্রহী আবাসন নির্মাতারা

ট্রাম ডিপোর জমির দরপত্র খুলছে সোমবারই

টালিগঞ্জ ও বেলগাছিয়া ট্রাম ডিপোর বাড়তি জমি লিজে দিতে দরপত্র চেয়েছিল রাজ্য। তা খোলা হবে সোমবারই। দু’জায়গাতেই জমি নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে বিভিন্ন আবাসন নির্মাণ সংস্থা। সংশ্লিষ্ট শিল্পের দাবি, ওই দুই নিলাম থেকে কমপক্ষে ১১৫-১২০ কোটি টাকা আসতে পারে রাজ্যের ভাঁড়ারে।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:০২
Share:

টালিগঞ্জ ও বেলগাছিয়া ট্রাম ডিপোর বাড়তি জমি লিজে দিতে দরপত্র চেয়েছিল রাজ্য। তা খোলা হবে সোমবারই। দু’জায়গাতেই জমি নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে বিভিন্ন আবাসন নির্মাণ সংস্থা। সংশ্লিষ্ট শিল্পের দাবি, ওই দুই নিলাম থেকে কমপক্ষে ১১৫-১২০ কোটি টাকা আসতে পারে রাজ্যের ভাঁড়ারে।

Advertisement

এর আগে ওই দুই জমির জন্য দু’বার দরপত্র চেয়েও সে ভাবে সাড়া মেলেনি। তাই তৃতীয় বারে রাজ্য সেই পরীক্ষায় উতরোয় কিনা, তা দেখতে আগ্রহী অনেকে। তেমনই নির্মাণ শিল্পে অনেকের আবার কৌতূহল শেষমেশ দর কেমন ওঠে, তা জানায়। কারণ, চাহিদায় ভাটার কারণে দামি ফ্ল্যাট বিক্রি করতে নাভিশ্বাস উঠছে প্রোমোটারদের। তাই এই পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ দর কত হেঁকেও লাভজনক প্রকল্প গড়া সম্ভব হতে পারে, সে দিকে নজর রয়েছে নির্মাণ শিল্পের।

টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোয় উদ্বৃত্ত জমি ২৪১ কাঠা। কলকাতায় যে ছ’টি ট্রাম ডিপোর (শ্যামবাজার, বেলগাছিয়া, টালিগঞ্জ, গ্যালিফ স্ট্রিট, খিদিরপুর ও কালিঘাট) বাড়তি জমি লিজে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজ্য নিয়েছে, তার মধ্যে টালিগঞ্জেই জমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বেলগাছিয়ায় নিলাম হচ্ছে ৫৯.৩৩ কাঠা।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের মতে, টালিগঞ্জের জমি নিলাম করে অন্তত ১০০-১৫০ কোটি টাকা রাজ্যের কোষাগারে আসার কথা। বেলগাছিয়ার জমি থেকেও পাওয়ার কথা অন্তত ১৫ কোটি। কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন, আবাসনের এই পড়তি বাজারে এখন জমি লিজে না-দিয়ে পরে তা করলে কি আরও বেশি দর পেতে পারত রাজ্য?

বছর দুয়েক আগেই রুগ্‌ণ সংস্থার বাড়তি জমি বাণিজ্যিক ভাবে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। তাদের দায় না টেনে বরং পরিকল্পনা করে মাছের তেলে মাছ ভাজার। ঠিক হয়, ধুঁকতে থাকা সংস্থাকে নূতন পুঁজি জুগিয়ে চাঙ্গা করতে সম্ভব হলে ব্যবহার করা হবে তারই বাড়তি জমি। থোক টাকাও আসবে কোষাগারে।

কৌশল কার্যকর করতে পথ দেখায় পরিবহণ দফতর। এ জন্য বিশ্বের অগ্রণী উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি-কে ট্রানজ্যাকশন অ্যাডভাইজর হিসেবে বেছে নেয় তারা। প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত হয় কলকাতা ট্রাম কোম্পানির (সিটিসি) ছ’টি ডিপো। সব মিলিয়ে ৩৭৩ কাঠা জমির জন্য দরপত্র চায় রাজ্য।

কলকাতায় জমির জোগান তলানিতে। অথচ আবাসন প্রকল্প গড়তে আগ্রহী সংস্থার অভাব নেই। সেই হিসেবে রাজ্যের ডাকা নিলামে নির্মাণ সংস্থাগুলির ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। শ্যামবাজার, বেলগাছিয়া ও টালিগঞ্জের জমি নিয়ে বিশেষ উৎসাহই দেখায়নি নির্মাণ সংস্থাগুলি! সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, লিজ চুক্তির কড়া শর্ত ও ফ্ল্যাট তৈরির খরচ হু হু করে বাড়তে থাকার কথা মাথায় রেখেই পিছিয়ে যায় অনেক সংস্থা।

ফলে এখনও পর্যন্ত ছ’টির মধ্যে তিনটি ডিপোর জমি থেকে কোষাগারে টাকা এসেছে। ২০১৩ সালে গ্যালিফ স্ট্রিট, কালিঘাট ও খিদিরপুরের জমি লিজে নেয় আরপি সঞ্জীব গোয়েন্কা গোষ্ঠীর সংস্থা সিইএসসি। ২৭.৭৩ কোটি টাকায় ৪৯.১৬ কাঠা জমি পায় তারা।

বাকি তিনটি ডিপোর জমি নিতে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি নির্মাণ শিল্প। শ্যামবাজারের জন্য একটি দরপত্রও জমা পড়েনি। বেলগাছিয়া আর টালিগঞ্জের জন্য এসেছিল যথাক্রমে একটি ও দু’টি দরপত্র।

সাড়া আশানুরূপ না হওয়ায়, বেলগাছিয়া ও টালিগঞ্জের জন্য ফের দরপত্র চায় রাজ্য। নিয়মকানুন কিছুটা শিথিল করা হয়। বাড়ানো হয় বেলগাছিয়ার জমি। কিছুটা সাড়া মেলে। টালিগঞ্জের জন্য ৭টি ও বেলগাছিয়ার জন্য ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। নিলামে যোগ দেয় শাপুরজি-পালনজি, অম্বুজা, মার্লিন, টাটা হাউজিং ও কেভেন্টার্সের যৌথ সংস্থা প্রমুখ।

কিন্তু দ্বিতীয় বারও শেষ হয়নি নিলাম প্রক্রিয়া। কলকাতা পুরসভার নির্মাণ সংক্রান্ত নয়া নিয়ম-কানুনের জন্য মাঝপথেই তা থমকে যায়। গত অগস্টে তৈরি হয় নতুন নগরোন্নয়ন নীতি। বদলে যায় ফ্লোর-এরিয়া রেশিও (জমি আর মোট কত বর্গ ফুট নির্মাণ, তার অনুপাত)। নতুন নিয়মে স্যাংশন ফি-র বদলে কম জমিতে বেশি বর্গ ফুট জায়গা তৈরির সুযোগ মেলে। এই সুবিধা নির্মাণ সংস্থাগুলির হাতে তুলে দিতে বাতিল করা হয় নিলাম। ফের নতুন করে দরপত্র চাওয়া হয়। বদলে যায় সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম দামও। এ বার নিলামে যোগ দেয় শাপুরজি-পালনজি, মার্লিন, সুরেকা ও বেলানি গোষ্ঠী। সরে যায় টাটা হাউজিং ও কেভেন্টার্সের যৌথ সংস্থা।

এত কিছুর পরে শেষমেশ দরপত্র কেমন মিলল, সোমবার সে দিকেই চোখ থাকবে সকলের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন