Coronavirus Lockdown

নড়বড়ে বাজার, পড়তি সুদ, সঞ্চয় নিয়ে বাড়ছে ভয় 

লকডাউন শিথিল হলেও, দেশের সর্বত্র আর্থিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হতে পারছে না সংক্রমণ বাড়ায়।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ০৩:২৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনার ধাক্কা, মুখ থুবড়ে পড়া শিল্প, অর্থনীতির বহর কমার আশঙ্কা, লাদাখে চিনের আগ্রাসন— এত কিছু সত্ত্বেও শেয়ার বাজার তেমন নামেনি গত সপ্তাহে। সেনসেক্স থেকেছে ৩৫ হাজারের উপরেই। আর তাতেই তার নড়বড়ে, দিশেহারা, গুমোট ভাব যেন আরও প্রকট হয়েছে। অর্থাৎ পথ এবড়ো-খেবড়ো। ভেতরে অস্থিরতা বহাল। কিন্তু কবে, কখন সূচক ফের হোঁচট খাবে বোঝা যাচ্ছে না। এই অনিশ্চয়তা এড়াতে বহু লগ্নিকারী তুলনায় সুরক্ষিত সঞ্চয়ের দিকে ঝুঁকবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পড়তি সুদের জমানায় সে পথেও কাঁটা। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এমন পথ কই, যেখানে মূল্যবৃদ্ধিকে টেক্কা দেওয়ার মতো টাকা জমে? বিশেষত রুজি-রোজগার যেখানে অসুরক্ষিত এবং ছাঁটাইয়ের পথে বিভিন্ন সংস্থা।

Advertisement

লকডাউন শিথিল হলেও, দেশের সর্বত্র আর্থিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হতে পারছে না সংক্রমণ বাড়ায়। অর্থনীতির অবস্থা আঁচ করে রেটিং সংস্থাগুলিও চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি সঙ্কোচনের পূর্বাভাস দিচ্ছে। অথচ ভারতে সূচক শক্তি ধরে রেখেছে। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি শুধু জুনেই নিট ২১,২৩৫ কোটি টাকার পুঁজি ঢেলেছে। যারা মার্চ, এপ্রিল, মে-তে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।

মনে করা হচ্ছে, বাজারের শক্তি ধরে রাখার কারণ চিন থেকে অনেক সংস্থার ভারতে সরে আসার সম্ভাবনা। অনেকের আবার আশা, অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভারত অনেক দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। তবে সবই ভবিষ্যতের কথা। বর্তমানের সমস্যা গুরুতর এবং তা বহাল থাকবে আরও বেশ কিছু দিন। ফলে বাজারে লগ্নি করতে হলে, বড় মেয়াদে করাই ভাল। অনিশ্চিত শেয়ার ও পড়তি সুদের ব্যাঙ্ক আমানতে আকর্ষণ কমায়, লগ্নি বাড়ছে সোনায়। তবে এখানেও মাথা খুঁড়ছেন মধ্যবিত্ত মানুষ। কারণ পাকা সোনা ৫০ হাজার (২৪ ক্যারাট ১০ গ্রাম, জিএসটি সমেত) টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।

Advertisement

কোথায় কত সুদ

প্রবীণদের পাঁচ বছরের ব্যাঙ্ক জমা ৬.৩০*

অন্যান্যদের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক আমানত ৫.৫৫*

সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিম ৭.৪

প্রধানমন্ত্রী বয়োবন্দনা ৭.৪

পরিবর্তনশীল সুদে সেভিংস বন্ড ২০২০ (আরবিআই) ৭.১৫

ডাকঘর টার্ম ৬.৭

ডিপোজ়িট (৫ বছর)

ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্প ৬.৬

জাতীয় সঞ্চয়পত্র ৬.৮

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ ৭.১

সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্প ৭.৬

কিসান বিকাশপত্র ৬.৯

সব হার শতাংশে,

*ব্যাঙ্ক নির্বিশেষে হেরফের হতে পারে আমানতের সুদ

গত অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসের আর্থিক ফলাফল প্রকাশের সময় আরও একমাস বাড়িয়ে ৩১ জুলাই করেছে সেবি। এর মধ্যেই গত সপ্তাহে কিছু সংস্থার ফল বেরিয়েছে। আইটিসি-র নিট লাভ ৩১৫ কোটি টাকা বেড়ে পৌঁছেছে ৩৭৯৭ কোটি টাকায়। পুরো অর্থবর্ষের মুনাফা ১৫,১৩৬ কোটি। প্রতিটি ১ টাকার শেয়ারে ১০.১৫ টাকা ডিভিডেন্ড দেবে তারা। তবে জানুয়ারি-মার্চে ইমামির লাভ কমেছে ৫৯%। কোল ইন্ডিয়ার কমেছে ২৩%। ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার লোকসান হয়েছে ৩৫৭১ কোটি।

এ দিকে, মে মাসের শেষে বন্ধ হয়েছিল ৭.৭৫% সুদের ভারত সরকারের করযোগ্য বন্ড (আরবিআই বন্ড)। সুখের কথা, সুদ কিছুটা কমিয়ে ১ জুলাই প্রকল্পটি চালু হচ্ছে নতুন রূপে। প্রথম দিকে সুদ ৭.১৫%। যা ছ’মাস অন্তর পুনর্বিবেচিত হবে। অর্থাৎ ৭ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে সুদ স্থির না-ও থাকতে পারে। তা দেওয়া হবে ছ’মাস অন্তর। সুদ কমলেও, এই হার ব্যাঙ্ক সুদের থেকে বেশি। শুধু মেয়াদ শেষের আগে দু’একটি ক্ষেত্র ছাড়া টাকা তোলা যাবে না। এই বন্ড কেনা যাবে বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কের বড় শাখার মাধ্যমে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন