দক্ষিণ জিতল। উত্তর হারল।
কলকাতা ট্রাম কোম্পানির টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর চার একর জমির বিনিময়ে রাজ্যের কোষাগারে এল ১৮০.৮১ কোটি টাকা। মন্দার বাজারেও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে ৩০ কোটি টাকা বেশি দর দিয়েছে জয়ী নির্মাণ সংস্থা। অন্য দিকে বেলগাছিয়া ট্রাম ডিপোর জমির জন্য ন্যূনতম দামও পায়নি রাজ্য সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ওই দাম কমিয়ে ফের দরপত্র চাইবে রাজ্য।
এ দিন টালিগঞ্জ ও বেলগাছিয়া ট্রাম ডিপোর বাড়তি জমি লিজে দেওয়ার দরপত্র খোলা হয়। টালিগঞ্জের ২৪১ কাঠা জমির জন্য শাপুরজি পালোনজি, মার্লিন ও বেলানি গোষ্ঠী দরপত্র জমা দেয়। পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কাঠা প্রতি ৭৫ লক্ষ টাকা দর দিয়ে এই জমির লিজ-স্বত্ব জিতে নিয়েছে বেলানি গোষ্ঠী। একই সঙ্গে তিনি জানান, বেলগাছিয়া ডিপোর প্রায় ৬০ কাঠা জমির জন্য তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি, কারণ জমির অবস্থান ও কৌণিক আকারের জন্য আশানুরূপ দাম দিতে চাইছে না নির্মাণ সংস্থাগুলি।
এখনও পর্যন্ত যে-সব ডিপোর বাড়তি জমি বাণিজ্যিক ভাবে কাজে লাগাতে চাইছে রাজ্য সরকার, তার মধ্যে টালিগঞ্জ ডিপো থেকেই সর্বোচ্চ দাম পেল তারা। বছর দু’য়েক আগেই রাজ্য সরকার রুগ্ণ সংস্থার উদ্বৃত্ত জমি এই ভাবে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে রুগ্ণ সংস্থার আর্থিক বোঝা টেনে বেড়ানো যে সম্ভব নয়, তা প্রতি পদে টের পাচ্ছিল রাজ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এই টাকা ট্রাম কোম্পানির পরবর্তী দফার পুনর্গঠনে ব্যবহার করা হবে। সংস্থা চাঙ্গা করতে আর এক দফা স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পও চালু করবে রাজ্য। প্রায় ১০০০ কর্মীর স্বেচ্ছাবসর প্রক্রিয়ায় এই টাকা কাজে লাগানো হবে। বর্তমানে কর্মী সংখ্যা ৫৩০০।
প্রথম দফায় গ্যালিফ স্ট্রিট, কালীঘাট ও খিদিরপুরের জমি নিলাম করা হয়েছিল। তিনটি ডিপো মিলিয়ে মোট জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ কাঠা। ২৭.৭৩ কোটি টাকার বিনিময়ে ৪৯.১৬ কাঠা জমি লিজে নেয় আরপি সঞ্জীব গোয়েন্কা গোষ্ঠীর সংস্থা সিইএসসি। পরিবহণ দফতরের দাবি, এই টাকার পুরোটাই স্বেচ্ছাবসর বাবদ কর্মীদের পাওনা মেটাতে খরচ হয়।
দু’দফার নিলামে টালিগঞ্জ, গ্যালিফ স্ট্রিট, খিদিরপুর ও কালীঘাটের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছে। কিন্তু বেলগাছিয়ার রাহুর দশা কাটছে না। তৃতীয় বারেও দর পেল না তারা। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, শীঘ্রই গড়িয়াহাট ট্রাম ডিপো ও গড়িয়া, ঠাকুরপুকুর, সরশুনার বাস ডিপোর জমির বাণিজ্যকরণ হতে চলেছে। আগামী সাত দিনেই দরপত্র চাওয়া হতে পারে। বিশেষজ্ঞ সংস্থা কেপিএমজি প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। এই পর্ব মিটে যাওয়ার পরে আবার বেলগাছিয়া ও শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর জমির জন্য দরপত্র চাইবে রাজ্য সরকার।
টালিগঞ্জের জমিতে মূলত আবাসন প্রকল্প তৈরি করতে চায় বেলানি গোষ্ঠী। ট্রাম কোম্পানির সদর দফতরে নিলামে উপস্থিত সংস্থার প্রধান নন্দু বেলানি জানান, উচ্চবিত্তের জন্য আবাসনের পাশাপাশি শপিং মলের মতো বাণিজ্যিক পরিকাঠামোও তৈরি হবে। মন্দার বাজারেও এই বিপুল দাম দেওয়ার যুক্তি হিসেবে তিনি জানান, এই এলাকায় যে ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিও’ (এফএআর) পাওয়া যাবে, তা লাভজনক। অর্থাৎ জমির অনুপাতে বেশি বর্গ ফুট জায়গা তৈরি করা যাবে।
নির্মাণ শিল্পমহলের মতে, টালিগঞ্জের জমির ক্ষেত্রে এই ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিও’ ( এফএআর) সংক্রান্ত নিয়ম পরিবর্তনের সুফল হাতে হাতে পেল সরকার। কলকাতা পুরসভার নির্মাণ সংক্রান্ত নয়া নিয়ম-কানুনের জন্য মাঝপথেই থমকে যায় দ্বিতীয় দফার নিলাম। গত বছর অগস্ট মাসে তৈরি হয় নতুন নগরোন্নয়ন নীতি। বদলে যায় ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিও’ (এফএআর)। নতুন নিয়মে কম জমিতে বেশি বর্গ ফুট জায়গা তৈরি করা যাবে। তার বদলে সরকারকে ‘স্যাংশন ফি’ দিলেই চলবে। নয়া নিয়মের সুবিধা নির্মাণ সংস্থাদের হাতে তুলে দিতেই বাতিল করা হয় নিলাম। নতুন করে চাওয়া হয় দরপত্র।