মানানোর লড়াইয়ে ব্যবসায়ীরা

এই সব যুক্তিতে ব্যবসায়ী মহলের বড় অংশও জিএসটি বিরোধিতায় মাঠে নেমেছে। অধিকাংশেরই কর দেওয়া নিয়ে যতটা না-আপত্তি, তার থেকে বেশি অসন্তোষ মেটানোর পদ্ধতি নিয়ে। অনেকের রাতের ঘুম কেড়েছে বছরে ৩৭টি রিটার্ন জমার নিয়ম।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০৩:২৬
Share:

খেতে-মানা: জলখাবারেও জিএসটি-র ছোঁয়া। পোস্তায় প্রতিবাদ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

এক দিকে আশায় বুক বেঁধে নতুন কর ব্যবস্থায় পা মেলানোর উত্তেজনা। অন্য দিকে বাড়তি কড়ি গোনা নিয়ে আশঙ্কা ও পুরো ব্যবস্থাটি বুঝে উঠতে না-পারার ফলে তৈরি অনিশ্চয়তা। জিএসটি জমানায় ঢুকে পড়ার পরেও, এ ভাবেই দ্বিধাবিভক্ত সারা দেশের ব্যবসায়ীমহল।

Advertisement

পণ্য লেনদেনে দেশ জুড়ে চালু এই কর ব্যবস্থা তাঁদের স্বার্থ আগের তুলনায় আরও বেশি সুরক্ষিত করবে বলে মনে করছে বড়-মাঝারি শিল্পপতিদের একাংশ। তাঁদের মতে, অনেক কর এ বার থেকে মেটানোর পরেও ফেরত পাবেন (ইনপুট ক্রেডিট) তাঁরা, যা পুরনো ব্যবস্থায় পেতেন না। বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের পরোক্ষ কর কমিটির চেয়ারম্যান তিমিরবরণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্তরে কিছুটা সমস্যা হলেও, আখেরে ব্যবসায়ী ও দেশ, সবার ভাল হবে।’’

অনেকেরই আবার আশঙ্কা, জিএসটি মেটাতে গিয়ে পড়তে হবে চরম অসুবিধায়। একে তো ব্যবস্থাটি ঘিরে ধোঁয়াশা থাকায় অধিকাংশের কাছে কর দেওয়ার প্রক্রিয়া পরিষ্কার নয়। তার উপরে গুনতে হতে পারে অতিরিক্ত অর্থ। ভারত চেম্বার অব কমার্সের এক সভায় এসে খোদ মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ টিসিএ অনন্ত-ই বলেন, ‘‘জিএসটি চালুর পরে অনেক ক্ষেত্রেই কর মেটনোর খরচ বাড়বে।’’

Advertisement

এই সব যুক্তিতে ব্যবসায়ী মহলের বড় অংশও জিএসটি বিরোধিতায় মাঠে নেমেছে। অধিকাংশেরই কর দেওয়া নিয়ে যতটা না-আপত্তি, তার থেকে বেশি অসন্তোষ মেটানোর পদ্ধতি নিয়ে। অনেকের রাতের ঘুম কেড়েছে বছরে ৩৭টি রিটার্ন জমার নিয়ম। আগে দিতে

হত সাকুল্যে ৫টি।

আরও পড়ুন: আরও কমলো স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ

রাসায়নিক পণ্য বিক্রেতা মহেশ সিংহনিয়া বলেন, ‘‘আগে তিন মাস অন্তর একটি করে এবং বছরে একটি রিটার্ন জমা দিতাম। জিএসটি-তে মাসে তিনটি করে এবং বছরে একটি দিতে হবে। ফলে শুধু রিটার্ন তৈরি করে জমা দিতে আগে যেখানে বছরে খরচ পড়ত ২৫ হাজার টাকার মতো, সেখানে এ বার লাগবে লাখখানেক।’’ কেন্দ্রের অবশ্য দাবি, রিটার্ন জমার বিষয়টি যতটা সম্ভব সরল করা হচ্ছে।

মিষ্টির উপর আগে কর ছিল না। জিএসটি জমানায় গুনতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির কার্যকরী সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ পালের অভিযোগ, ‘‘খাতায় হিসাব রাখি। এ বার কিনতে হবে কম্পিউটার। চালাতে লাগবে প্রশিক্ষিত লোক। এখনও জানি না শুধু কর মেটাতেই কতটা বাড়তি খরচ ঘাড়ে চাপবে।’’ শৈলেন্দ্রবাবু জানান, রাজ্যে মিষ্টির দোকানের সিংহভাগই জিএসটির আওতায় পড়বে। এ সব নিয়ে আপত্তি তুলে শুক্রবারই দেশে এক দিনের ধর্মঘট ডাকে ভারতীয় উদ্যোগ ব্যাপার মণ্ডল। বস্ত্র ব্যবসায়ীরা আগেই নেমেছেন টানা ধর্মঘটের পথে।

অনেকে অবশ্য জিএসটি-কে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, ভ্যাট চালুর সময়েও হৈচৈ হয়েছিল। পরে সব স্বাভাবিক হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন