ধীর গতিতে হলেও বিদেশি লগ্নির খাতায় কিছুটা উন্নতির দেখা মিলল। যে-লগ্নি টানার চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পর থেকেই সক্রিয় নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপুঞ্জের খতিয়ান বলছে, ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪-য় বিদেশি লগ্নি বেড়েছে। চলতি বছরে তা আরও বাড়তে পারে। কিন্তু মোদী সরকারের চেষ্টায়, না কি বিশ্বের অন্যত্র এখনও মন্দা চলছে বলেই ভারতে লগ্নি আসছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। গত কয়েক বছরের হিসেবে ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত অন্য দেশগুলির তুলনাতেও অনেক পিছিয়ে ভারত। প্রসঙ্গত, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে তৈরি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রগুলির জোট ব্রিকস।
গোটা বিশ্বে কোন দেশে কত বিদেশি লগ্নি ঢুকছে, আজ তার খতিয়ান ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০১৫’-এ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনসিটিএডি)। ওই রিপোর্ট বলছে, ২০১৪-য় বিদেশি লগ্নি টানার প্রতিযোগিতায় ভারত ফের প্রথম দশটি দেশের তালিকায় ঢুকে পড়ছে। তার স্থান এখন নবম। তবে সেখানেও প্রথম আটটি দেশের তুলনায় ভারত যথেষ্ট পিছিয়ে। ২০১৪ সালে ভারতে ৩,৪০০ কোটি ডলার (২,১৭,৬০০ কোটি টাকা) বিদেশি লগ্নি এসেছে। ২০১৩ সালে যা ছিল ২,৮০০ কোটি ডলার (১,৭৯,২০০ কোটি টাকা)।
নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে বিদেশি লগ্নি টানতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প ঘোষণা করে ভারতে কারখানা তৈরির জন্য বিদেশি শিল্পপতিদের আহ্বান জানিয়েছেন মোদী। যে-দেশেই যাচ্ছেন, সেখানেই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র প্রচারকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি। বিমা, রেল পরিকাঠামো, প্রতিরক্ষার মতো ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই কারণেই কি বিদেশি লগ্নির পরিমাণ বেড়েছে?
আজ রিপোর্ট প্রকাশের পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের এই সংস্থার অর্থনীতিবিদ প্রেমিলা নাজারেথ বলেন, ‘‘কেন্দ্রের লগ্নি-পরিবেশ ভাল করার চেষ্টা, না কি অন্য দেশগুলি এখনও মন্দার প্রকোপ থেকে বেরোতে পারেনি বলেই ভারতে বিদেশি লগ্নি আসছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নিজেই বারবার বলছেন, ভারত হল গোটা বিশ্বে গুটিকতক উজ্জ্বল জায়গাগুলোর মধ্যে একটা, যেখানে লগ্নিকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহী হচ্ছেন।’’ বিদেশি লগ্নির পরিসংখ্যান দেখিয়ে নাজারেথের যুক্তি, ‘‘ভারতের আগে যে-আটটি দেশ রয়েছে, তার সব ক’টিতেই গত বছরে ওই লগ্নি ৫ হাজার কোটি ডলারের অনেক নীচে। ভারত তাদের থেকেও পিছিয়ে। গত কয়েক বছরের হিসেবে ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত অন্য দেশগুলির থেকেও বেশ পিছিয়ে তারা।’’
মোদী সরকারের জন্য অবশ্য আশার কথাও রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে। সেখানে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে অর্থাৎ ২০১৫ সালে বিদেশি লগ্নির রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনাই বেশি। বিশেষ করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির হাত ধরে কারখানা ক্ষেত্রের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকেরও দাবি, চলতি বছরে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি লগ্নি আসবে। ইতিমধ্যেই তার ইঙ্গিত মিলছে। শেষ পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল মাসে দেশে ৩৬০ কোটি ডলার লগ্নি এসেছে। যা মার্চের তুলনায় ৭১ শতাংশ বেশি। ইউপিএ-জমানার কর সংক্রান্ত নীতি, ব্যবসা ও বিনিয়োগের প্রক্রিয়ায় জটিলতা বিদেশি লগ্নির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে অভিযোগ তাদের।
আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলির পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী সরকার এ দেশে চিনা বিনিয়োগ টানতেও উৎসাহী। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-কে দিল্লি ও আমদাবাদে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন মোদী। নিজেও চিন সফরে গিয়ে বলেছেন, ভারতে রফতানি না-করে চিনা সংস্থাগুলি ভারতেই কারখানা তৈরি করুক। অন্যান্য ক্ষেত্রেও লগ্নি করুক চিন। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় লগ্নি করতেই বেশি আগ্রহী চিন। চিনের লগ্নিতে ভর করেই পাকিস্তানে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ ২০১৩ থেকে ২০১৪-য় ৩১ শতাংশ বেড়েছে। চিন-পাকিস্তান শিল্প করিডর থেকেও পাকিস্তান লাভবান হবে। এপ্রিল মাসে দু’দেশের চুক্তি অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছরে পাকিস্তানে ৪৫৬০ কোটি ডলার লগ্নি করবে চিন। একই ভাবে শ্রীলঙ্কাতেও পরিকাঠামোয় বিপুল লগ্নি করছে তারা।