দু’বছরেও ফিরবে কি লগ্নি, সংশয়ী শিল্পই

নোট নাকচ থেকে শুরু করে তড়িঘড়ি জিএসটি চালু। যে-কোনও কারণে অর্থনীতির চাকা বসে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা উঠলেই মোদী সরকারের চেনা সওয়াল, এই সমস্যা সাময়িক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৪৯
Share:

গালে-হাত: চিন্তা বাড়াচ্ছে বেহাল শিল্প। রাজঘাটে মোদী। ছবি: পিটিআই

নোট নাকচ থেকে শুরু করে তড়িঘড়ি জিএসটি চালু। যে-কোনও কারণে অর্থনীতির চাকা বসে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা উঠলেই মোদী সরকারের চেনা সওয়াল, এই সমস্যা সাময়িক। বরং স্বল্প মেয়াদে এই তেতো ওষুধটুকু গিলে ফেলতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদে শিল্প আর অর্থনীতি ছুটবে টাট্টু ঘোড়ার মতো। কিন্তু এ বার এই দীর্ঘ মেয়াদের স্বপ্ন ফেরি নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করল শিল্পমহল।

Advertisement

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নির্মাণ সংস্থা লার্সেন অ্যান্ড টুব্রোর (এলঅ্যান্ডটি) সিএফও আর শঙ্কর রমণ বলেন, আগামী দু’বছরেও বেসরকারি লগ্নি পুরোদমে ফেরার সম্ভাবনা তিনি অন্তত দেখছেন না। যুক্তি, এই সময়ে তাঁর নিজের সংস্থা কোনও বড় মাপের লগ্নি পরিকল্পনা নিচ্ছে না। এবং এই কথা সম্ভবত সকলের জন্যই সত্যি। কারণ, চাহিদায় ভাটার কারণে প্রায় প্রত্যেক সংস্থা যেখানে নিজেদের পুরো উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগাতেই হিমসিম খাচ্ছে, সেখানে তা বাড়াতে নতুন করে লগ্নি করবে কে? ঠারেঠোরে একই কথা বলছেন শিল্পমহলের আরও অনেক প্রতিনিধি।

অনেকের প্রশ্ন, আরও দু’বছর মানে তো তত দিনে মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে বর্তমান সরকারের। তার মানে কি নরেন্দ্র মোদীর এ বারের মেয়াদে সেই অর্থে অধরাই থেকে যাবে বেসরকারি লগ্নি?

Advertisement

অবশ্য লগ্নিতে টান যে-রয়েছে, তা বিলক্ষণ জানে কেন্দ্র। পুজোর ঠিক আগে শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে বণিকসভাগুলি জানিয়েছিল, চাহিদায় ভাটার কারণে গড়ে উৎপাদন ক্ষমতার ৭৪% ব্যবহার করতে পারছে কারখানাগুলি। বাকি ২৬% কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, তার দিশা খুঁজতে কমিটি তৈরির সিদ্ধান্তও নিয়েছেন প্রভু। এই পরিস্থিতিতে নতুন লগ্নির সিদ্ধান্ত যে সত্যিই ক্ষীণ, তা মোদী সরকারের অজানা নয়।

এর আগে ফিকি এপ্রিল থেকে জুন মাসে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছিল, ৭৪% সংস্থার ছ’মাসে লগ্নির কোনও পরিকল্পনা নেই। এখন সেই সময় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে দু’বছর।

এমনিতেই অর্থনীতির দুরবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে তোপ দেগেছেন বাজপেয়ী সরকারের অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিন্‌হা। বৃদ্ধি তলানিতে ঠেকায় নিয়মিত আক্রমণ শানাচ্ছেন বিরোধীরা। সম্প্রতি নীতি আয়োগও সমীক্ষায় বুঝিয়েছে যে, শিল্পের ‘অচ্ছে দিন’ দূর অস্ত্‌। তার উপর এ বার এই দু’বছরের মন্তব্য চাপ বাড়াবে কেন্দ্রের উপর।

রমণ-সহ শিল্পমহল মনে করে, একে চাহিদায় ভাটা। তার উপর জিএসটি মেটাতে গিয়ে টাকা আটকে থাকায় টান পড়ছে রোজকার ব্যবসা চালাতে প্রয়োজনীয় পুঁজিতে (কার্যকরী মূলধন বা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল)। এই পরিস্থিতিতে শিল্পের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক শিল্পের কথা ভেবে ঋণে সুদ কমাক। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুলতে শুরু করায় আগামী বুধবারের ঋণনীতিতে সেই সম্ভাবনাও কম। সব মিলিয়ে তাই বেসরকারি বিনিয়োগে ভাটার টান বজায় থাকারই সম্ভাবনা দেখছে শিল্প।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন